দা’ হাতে বেপরোয়া গোলাপগঞ্জের জাবেদ

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ গোলাপগঞ্জের উত্তর বাদেপাশায় দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন জাবেদ। তার যন্ত্রণায় পাড়া-প্রতিবেশী অতীষ্ঠ। সম্প্রতি জাবেদের হামলায় তার আপন চাচাতো বোনের হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম। তিনি এখন মারাত্মক আহত অবস্থায় কোনমতে দিনযাপন করছেন। আবারও জাবেদ হামলা করতে পারে, এই ভয়ে আত্মগোপন করেছেন।এ ঘটনায় গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের করতে চাইলেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে জানিয়েছেন তার ভাই ও বাবা। তবে পুলিশ বলছে অন্য কথা। অভিযোগপত্রে ভুল থাকায় তারা মামলা নিতে পারেনি বলে জানিয়েছেন থানার ওসি রফিকুল ইসলাম।জাবেদ আহমদ গোলাপগঞ্জের বাদেপাশা ইউনিয়নের সুপাটেক গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে। তিনি কিছুদিন কাতার প্রবাসী ছিলেন। সেখান থেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরার পর থেকেই গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রায়ই গ্রামবাসীর সাথে উগ্র আচরণ করেন। আর তাকে সহায়তা করেন তারই পিতা মানিক মিয়া ও ভাই নাহিদ মিয়া। এমনটাই জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

তার বেপরোয়া আচরণে অতীষ্ঠ তারই আপন চাচা, ভাই ও বোনেরা। অতীষ্ঠ গ্রামের আরও অনেকে। জানা গেছে, কয়েক বছর আগে তার পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়। সবার সম্পত্তি সঠিকভাবে আইন অনুযায়ী বন্টন করেছেন স্থানীয় সালিশবৃন্দ।কিন্তু জাবেদ প্রবাস থেকে ফেরার পর সেই ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। এ নিয়ে তিনি তার দুই চাচা ও চাচাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হন। বিষয়টি নিয়ে গ্রামে একাধিকবার সালিশ হলেও জাবেদ কাউকেই পাত্তা দেন না বলে জানিয়েছেন কয়েকজন গ্রামবাসী। তিনি এতই বেপরোয়া যে, তার বিরুদ্ধে সালিশানদের অপমান করার বা হুমকি দেয়ার অভিযোগও উঠেছে।গত ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে জাবেদ সামান্য কারণে ঝগড়া বাঁধান তার চাচা চুনু মিয়ার পরিবারের সদস্যদের সাথে। অপর চাচা আলতাফুর রহমানের পক্ষে থাকায় চুনু মিয়ার পরিবারের সদস্যরাও জাবেদের দুই চোখের বিষ। সেদিন ঝগড়ার একপর্যায়ে জাহেদ লম্বা দা’ নিয়ে চাচা-চাচির উপর হামলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে চাচাতো বোন ও চুনু মিয়ার বিবাহিত কন্যা নাহিদা আক্তারের উপর হামলা করেন। নাহিদা তখন পিতার বাড়িতে নাইওর ছিলেন। তার মাথায় দা’র কোপ দিলে তিনি হাত উঁচিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। তখন নাহিদার হাত এতবেশী কেটে যায় যে, আরেকটু হলে ডান হাতের বুড়ো আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। প্রাণ বাঁচাতে নাহিদা ৯৯৯ এ কল দিলে গোলাপগঞ্জ থানার রাউকারবাজার ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।এ অবস্থায় নাহিদাকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলেও অবস্থা খারাপ থাকায় ডাক্তাররা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পরদিন নাহিদা নিজে বাদী হয়ে গোলাপগঞ্জ থানায় জাবেদ, তার পিতা মানিক মিয়া ও ভাই নাহিদ মিয়াকে অভিযুক্ত করে একটা এজাহার দাখিল করলেও ৩/৪ দিনেও মামলাটি রেকর্ড হয়নি।এর কারণ হিসাবে নাহিদার ভাই আলী নূর ও চাচা আলতাফুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, পুলিশ বলেছে এজাহারে লেখা ভুল আছে। কিন্তু কি ভুল তা আর বলেনি। প্রভাবশালী একটি মহলের সাথে বিত্তবান জাবেদের ঘনিষ্ট সর্ম্পক রয়েছে। হয়তো এ কারণে পুলিশ অভিযোগ নিচ্ছে না। তবে আমরা আদালতে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে গোলাপগঞ্জ থানার ওসি বলেন, তাদের অভিযোগপত্রটি সঠিকভাবে লেখা হয়নি। নাহিদা থানায় উপস্থিত না হলেও অভিযোগে লেখা আছে তিনি থানায় হাজির হয়ে অভিযোগ দাখিল করছেন। আমরা এটি সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছি। এরপর আর তারা থানায় আসেন নি। যদি আসেন, তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জাবেদের উশৃঙখলতা প্রসঙ্গে উত্তর বাদেপাশা ইউপি’র সাবেক মেম্বার ফখরুল ইসলাম বলেন, যে জমি নিয়ে বর্তমানে ঝামেলা করছে জাবেদ, অনেক আগেই তা সমাধান করে দিয়েছেন এলাকার সালিশবৃন্দ। কিন্তু তবুও সে উশৃঙখল আচরণ করছে। সে এরকমই।
জাবেদের হামলা প্রসঙ্গে নাহিদা আক্তার বলেন, আমি ৩ সন্তানের জননী। স্বামীও দরিদ্র কৃষক। বাবার বাড়ি নাইওর ছিলাম। কিন্তু চাচাতো ভাই জাহেদ আমাকে খুন করতে দা’র কোপ দিয়েছিল। আমি তার শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ চাই। তিনি জানান, তার হাতের অবস্থা খুব খারাপ। সেলাই দেয়া হয়েছে। কবে সুস্থ হবেন জানেন না। ডাক্তাররা অন্তত ৬ মাস চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে বলে ধারণা দিয়েছেন।এ ব্যাপারে আলাপকালে জাবেদ আহমদ বলেন, সামান্য ঘটনা নিয়ে তারা প্রায়ই আমার মা’র উপর আক্রমণ করে। তাই সেদিন আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। কোপ দিয়ে নাহিদার হাত কাটার ঘটনা অস্বীকার করে তিনি বলেন, তিনি দা হাতে নিয়ে তাদের কেবল ধাওয়া করলেও কাউকে কোপ দেননি।

You might also like