সিলেটে কলেজছাত্রী হত্যায় আটক ১  আগের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত বাইরে ছিলেন সজিব-সনিয়া

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেটে কলেজ ছাত্রী ও টিকটকার তরুণী সোনিয়া আক্তার (২১) হত্যা মামলার প্রধান আসামী মামাতো ভাই মো.সজিব (২৯) কে আটক করেছে র‌্যাব-৯।১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-৯ ও কোতয়ালি থানার পুলিশ যৌথ অভিযানে ঢাকার যাত্রাবাড়ির সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে আটক করে। সজিব হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শরীফনগর গ্রামের মো. নুরুদ্দিনের ছেলে।এদিকে, ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বেলা ২টায় র‌্যাব-৯ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অধিনায়ক উইং কমান্ডার মো. মোমিনুল হক জিডিপি বলেন, ‘ঘটনার আগের দিন (১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার) সোনিয়া চাকরির সন্ধানে সজিবকে নিয়ে বিয়ানীবাজার যান। ওইদিন বিয়ানীবাজার থেকে ফেরার পথে সিলেট নগরির শেখঘাটে সোনিয়ার অসুস্থ খালাকে দেখে তারা রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরেন।’

তিনি জানান, ঘটনার ৭ দিন আগে থেকেই সোনিয়াদের বাসায় অবস্থান করছিলেন সজিব। এ সময় তিনি সোনিয়াকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায়ও যান। ১২ ফেব্রুয়ারি রোববার দুপুরে নগরির শেখঘাট খুলিয়াটুলা আবাসিক এলাকার নীলিমা-১৪ নম্বর বাসা থেকে সোনিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া গ্রামের বিল্লাল আহমদের মেয়ে ও দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের ছাত্রী। তিনি মা ও সৎ বাবার সঙ্গে ওই বাসার ৪র্থ তলায় থাকতেন। সোনিয়া সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার নাটকে অভিনয় এবং মোবাইলভিত্তিক অ্যাপস টিকটক ও লাইকিতে ভিডিও করতেন।পারিবারিক ও পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যাকা-ের আগে সোনিয়াদের বাসায় রাত্রিযাপন করেন তার মামাতো ভাই সজিব। রোববার সকালে পরিবারের অন্য সদস্যরা অসুস্থতার কারণে সোনিয়ার সৎ বাবা সেলিম মিয়াকে দেখতে হাসপাতালে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর সজিবও ওই বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরে দুপুর ১২টার সোনিয়ার শয়নকক্ষে গিয়ে তার গলাকাটা লাশ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।প্রথম থেকেই সোনিয়ার পরিবারের দাবি ছিলো, এই হত্যাকা-ের সঙ্গে সজিব জড়িত। পুলিশের সন্দেহের তীরও ছিলো সজিবের দিকে। ঘটনার পর থেকে সজিব গা ঢাকা দেয়ায় সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়। সোনিয়ার ঘর থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণলঙ্কারও খোয়া গেছে বলে দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের পর আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাবও ছায়া তদন্ত শুরু এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে। তদন্তের একপর্যায়ে র‌্যাব তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সজিবের অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।র‌্যাব-৯’র অধিনায়ক মোমিনুল হক প্রেস ব্রিফিংকালে জানান, প্রায়ই সোনিয়াদের বাসায় আসতেন সজিব। তিনি তার গর্ভবতী স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলে গত ৭ দিন যাবৎ সোনিয়াদের বাসায় অবস্থান করেছিলেন। ঘটনার আগের দিন (১১ ফেব্রুয়ারি) সোনিয়া চাকরির সন্ধানে সজিবকে নিয়ে বিয়ানীবাজার যান। ওইদিন বিয়ানীবাজার থেকে ফেরার পথে সিলেট নগরির শেখঘাটে সোনিয়ার অসুস্থ খালাকে দেখে তারা রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরেন। ঘটনার দিন সকালে সোনিয়ার সৎ বাবা অসুস্থ হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে যান তাকে। পরে হাসপাতাল হতে সোনিয়ার মা দুপুর ১২টার দিকে বাসায় ফিরে সোনিয়াকে দেখতে না পেয়ে তার শয়নকক্ষে ঢুকে বিছানায় রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। সোনিয়ার মরদেহের গলার বামপাশে কাটা এবং ডান হাতের কব্জির রগ কাটা পাওয়া যায়। পুলিশ এ সময় তল্লাশি করে ঘটনাস্থলের খাটের তোষকের নিচ থেকে ধারালো রক্তমাখা একটি কাঁচি উদ্ধার করে।র‌্যাব আরও জানায়, সজিবের নামে ঢাকার ভাষানটেক থানায় মামলা রয়েছে। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে শিশু অপহরণ ও সহায়তার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। এ মামলায় কারাভোগ করেছে সে। এদিকে, ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুর নিহত সোনিয়ার বড় ভাই পারভেজ আহমদ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩৩।

You might also like