কোম্পানীগঞ্জে বেওয়ারিশ কুকুরের চরম উপদ্রব জনমনে আতঙ্ক

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ নগর-বন্দর ছাড়িয়ে এবার বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে পল্লী এলাকায়ও। কুকুরের কামড়ে অহরহ আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ ও গবাদি পশু।ভ্যাকসিন সংকটে চিকিৎসা নিতে পারছে না আক্রান্তরা। সম্প্রতি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কলাবাড়ী গ্রামে দলে দলে ছড়িয়ে পড়েছে বেওয়ারিশ কুকুর ।উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে অসংখ্য বেওয়ারিশ কুকুর। দল বেঁধে রাস্তায় ও বাড়িঘরের আঙ্গিনায় চলাচল করছে এসব কুকুর। এদের আক্রমণে মানুষসহ বিভিন্ন পশু-প্রাণী আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও কিছু কুকুর শরীরে ক্ষত ও পচনসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আক্রান্ত এসব কুকুরের শরীর থেকে ছড়াচ্ছে নানা রকমের রোগ জীবাণু এবং দুর্গন্ধ। পথ চলতে জনমনে সবসময় বিরাজ করছে কুকুর আতঙ্ক।অসুস্থ এসব কুকুরের বিচরণে এলাকায় মানুষের চলাফেরা কঠিন হয়ে পড়েছে। পথচারী ও স্কুল শিক্ষার্থীরা কুকুর আতঙ্কে ভুগছেন। বেওয়ারিশ এসব কুকুর নিয়ন্ত্রণে সরকারি বা এলাকাভিত্তিক কোন উদ্যোগ নেই । ফলে দিনকে দিন বেড়েই চলছে জলাতঙ্কসহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যধি।

কোম্পানীগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, সরেজমিনে উপজেলার দয়ারবাজার, বালুচর, ভাটরাই, কলাবাড়ি, কালিবাড়ি, বুধবারীবাজার, ধলাইব্রিজ মোড়, টুকেরবাজার, ভোলাগঞ্জ, থানাবাজার, থানা রোডসহ বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দিনে-রাতে অসংখ্য বেওয়ারিশ কুকুর সঙ্গবদ্ধ হয়ে দলে দলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনও কখনও রাস্তার মাঝেও বসে বা শুয়ে থাকে। ফলে স্কুল-মক্তবগামী শিক্ষার্থীরা ভয়ে স্কুল ও মসজিদে যেতে চাচ্ছে না। পথচারীরা একা রাতে এসব রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে ভয় পায়।স্কুল শিক্ষার্থী তনিমা বলেন, সকাল বেলা একাই স্কুল ও প্রাইভেট ক্লাসে যেতে খুব ভয় লাগে। এছাড়াও মাঝে মাঝে কুকুরের দল একা পেলে ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে আসে।উপজেলার ইসলামপূর পূর্ব ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আরাফাত আলী বলেন, কুকুরের ভয়ে রাতে একা বাড়িতে আসা যায় না। গত ৩১মে আমার পাশের বাড়ির একটি মেয়ে শিশুকে মক্তবে যাওয়ার পথে ক্ষতবিক্ষত করেছে ১০/১৫টি বেওয়ারিশ কুকুর। কুকুরের উৎপাতে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।ব্যবসায়ি মিজানুর রহমান চমক জানান, রাতে বাসায় ফেরার সময় কুকুরগুলো পথরোধ করে রাখে। একারণে একজন সঙ্গীর অপেক্ষায় থাকতে হয়। ভোর সকালে ছোট ছোট শিশুরা মসজিদের মক্তবে যেতে পারছে না। ভুখা কুকুরগুলো শিশুদের খেয়ে ফেলতে চায়।গত ৩১ মে ভোরে দক্ষিণ কলাবাড়ির গ্রামের ইলিয়াছ মিয়ার ৬ বছরের মেয়ে ফারিয়াকে মক্তবে যাওয়ার পথে শরীর ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলেছে বেওয়ারিশ কুকুর দল। ফলে শিক্ষার্থীরা ভয়ে প্রাতঃকালীন মক্তব, মাদ্রাসা ও স্কুলে যাওয়া আসা বন্ধ করে দিয়েছে। সম্প্রতি এলাকার কয়েকটি গরু ও ছাগল আক্রান্ত হয়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফুর রহমান বলেন, কয়েক বছর আগে পাগলা, অসুস্থ ও বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করা হতো। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনে নিরীহ প্রাণীকে হত্যার বিষয়টি মানবতা পরিপন্থী হওয়ায় বর্তমানে কুকুর নিধন করা হয় না। ফলে নগর-বন্দরসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে বেওয়ারিশ কুকুর। তবে উপজেলা সদরে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এ ব্যাপারে ইউএনও লুসিকান্ত হাজং বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে নিরীহ প্রাণী হত্যার বিষয়টি মানবতা পরিপন্থী হওয়ায় বর্তমানে কুকুর নিধন বন্ধ করে ভ্যাকসিনাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

You might also like