দেশের মোট ৯০৭টি নদ-নদীর বেশিরভাগ-ই সিলেটে

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ দেশে নদ-নদীর সংখ্যা কত? সে তালিকা জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের ওয়েবসাইটে রয়েছে। দেশে নদ-নদীর সংখ্যা কত এ নিয়ে বিতর্কও আছে। জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের হিসেবে অনুযায়ী এ সংখ্যা ৯০৭। এরমধ্যে ১৫৭টি নদ-নদী-ই সিলেট বিভাগে অবস্থিত। দেশের সব নদ-নদীর একটি তালিকা ১০ আগস্ট জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। অবশ্য তারা বলছে, এটি খসড়া তালিকা। দীর্ঘসময় ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকা নিয়ে যদি কারও কোনো মতামত বা আপত্তি থাকে, তাহলে লিখিতভাবে কমিশনকে জানাতে কমিশন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিল। ২৫ আগস্ট শুক্রবার ছিল সর্বসাধারণের মতামত জানানোর শেষদিন।কমিশন বলছে, তালিকায় থাকা সব নদী জীবন্ত, অর্থাৎ এসব নদী মরে যায়নি। বর্ষায় এসব নদীতে পানি থাকে। কিছু নদী শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায়। তবে একেবারে অস্তিত্ব নেই বা হারিয়ে গেছে, এমন কোনো নদী তাদের তালিকায় নেই।জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে কতটি নদ-নদী আছে, তার কোনো প্রামাণ্য দলিল ছিল না। পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪০৫টি নদীর যে তালিকা তৈরি করেছে, তার তথ্য ভিত্তি স্পষ্ট নয়। দেশের মানচিত্রেও যেসব নদীর উল্লেখ করা হয়, সেটিও পূর্ণাঙ্গ নয়।

২০১৯ সাল থেকে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন নদ-নদীর তালিকা তৈরির কাজ হাতে নেয়। সে কাজের সঙ্গে শুরু থেকে যুক্ত ছিলেন জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের সদ্য সাবেক উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কাছে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম নিজ নিজ জেলার নদীর তালিকা তৈরি করতে। কারণ, জমিজমার সমস্ত দলিল সংরক্ষণের দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের দপ্তরের। এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল জরিপ অধিদপ্তরের সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) ও আরএস (রিভিশনাল সার্ভে) দলিলের ওপরে।’
জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কাছে স্পষ্টভাবে ৪টি বিষয় জানতে চেয়েছিল। ১. প্রতিটি নদীর উৎস ও সমাপ্তি (যেখানে অন্য নদী বা সাগরের সঙ্গে মিশেছে) কোথায়; ২. কোন কোন জেলার ওপর দিয়ে নদীটি বয়ে গেছে; ৩. কোন কোন উপজেলার ওপর দিয়ে নদীটি বয়ে গেছে এবং ৪. নদীটির দৈর্ঘ্য কত?
জেলা প্রশাসকেরা নিজ নিজ জেলার বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় তথ্যগুলো সংগ্রহ করে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনে পাঠান। ৬৪ জেলা থেকে আসা নদীর তথ্য এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং নদী নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোর সঙ্গে নদীবিষয়ক তথ্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। এরপর এই খসড়া তালিকা তৈরি হয়।নদীরক্ষা কমিশন বলছে, খসড়া তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশের পর যেসব মতামত, আপত্তি এসেছে, তা গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনার পর চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হবে। শুক্রবার পর্যন্ত ৭ জন নদীরক্ষা কমিশনের কাছে তাদের মতামত জানিয়েছেন। কমিশন প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে। সবার মতামত পেলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে বাংলাদেশের নদ-নদীর তালিকা চূড়ান্ত করবে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন।বেশি নদ-নদী সিলেট বিভাগে‘ধান নদী খাল-এই তিনে বরিশাল’, এমন কথা বাংলাদেশে প্রচলিত। কথাটির একটি অর্থ, বরিশালে নদ-নদী-খালের প্রাচুর্য আছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বরিশালে নদ-নদীর সংখ্যা কম, ৯৯টি। অবশ্য বরিশাল বিভাগ আয়তনেও ছোট।জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের খসড়ায় দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি নদ-নদী সিলেট বিভাগে। এই বিভাগের ৪টি জেলায় নদীর সংখ্যা ১৫৭। অন্যদিকে সবচেয়ে কম নদী চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে নদীর সংখ্যা ৬০।নদ-নদীর সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগ। এই ২ বিভাগে নদীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৩৫ ও ১২৪। এরপর নদীর সংখ্যা বেশি রংপুর বিভাগে, ১২১টি। তারপর ঢাকা বিভাগে ১১৮টি। আর রাজশাহী বিভাগে নদীর সংখ্যা ৭১। একই নদী যেমন একাধিক জেলায় প্রবাহিত হয়েছে, তেমনি কিছু নদী আছে একাধিক বিভাগের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। যেমন ব্রহ্মপুত্র রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। করতোয়া রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মধ্য নিয়ে প্রবাহিত। এ রকম নদী আছে ২২টি।

You might also like