উপচে পড়া ভীড়ে শেষ হলো লন্ডনে দুইদিন ব্যাপী বাংলাদেশ বইমেলা

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডনঃ পাঠক  ক্রেতা, লেখক প্রকাশক  ও দর্শনার্থীদের  উপচে পড়া ভীড়ের মধ্য দিয় সমাপ্ত হলো একাদশতম বাংলাদেশ বইমেলা ও সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব  ২০২৩।  গত১০ সেপ্টেম্বর রবিবার   লন্ডনের  দ্যা আর্ট প্যাভিলিয়ন, মাইল এন্ড- পার্কে শুরু হয়েছে দুইদিন ব্যাপী বাংলাদেশ বই মেলা। দুপুর ২.৩০ মিনিটে মেলার শুভ উদ্বোধন করেন স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত  রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা  ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী  লেখক  ড: নুরুন নবী। উদীচী সত্যেন সেন স্কুলের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী পর্ব। সাংস্কৃতিক সংগঠক মুনিরা পারভিনের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী পর্বে সভাপতি কবি ময়নূর রহমান বাবুল আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানান। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারন সম্পাদক কবি একেএম আব্দুল্লাহ। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, লন্ডনে এমন ব্যাপক পরিসরে  বই মেলার উদ্বোধন করতে পেরে সত্যিই আমি আনিন্দিত। বাংলাদেশের বাইরে এত সুন্দর আয়োজন  আমাকে মুগ্ধ করেছে।  উদ্বোধনী পর্বে মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন অতিথিবৃন্দ। মেলায়  প্রথম দিনেই পাঠক লেখকদের  উপচে পড়া ভীড় ছিল মেলায়।  বাংলাদেশ বইমেলায় প্রতিবছর একজন প্রবাসী কবি সাহিত্যিককে সম্মাননা জানানো হয়।এই বছর সাহিত্য সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে  বিলেত প্রবাসী কবি হামিদ মোহাম্মদ কে।

হামিদ মোহাম্মদ বলেন, আমার দীর্ঘ লেখালেখি  জীবনে, সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমি কাজ করেছি। দীর্ঘ  প্রবাস জীবনে চেষ্টা করেছি সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার। তারই মূল্যায়ন হয়তো   করেছেন উৎসব কমিটি। আমি আনন্দিত ও গর্বিত  দেশের বাইরে প্রবাসে থেকেও এই স্বীকৃতি আমাকে  প্রদানের জন্য। মেলায়  বাংলাদেশের স্বনামধন্য ১৭ টি প্রকাশনা  প্রতিষ্ঠান  বই নিয়ে এসেছেন।  পাশাপাশি শুধু মাত্র চলতি বছরের লন্ডন বইমেলা উপলক্ষ্যে ২১ টি  নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে।  মেলা প্রাঙ্গনে, প্রকাশিত বইগুলোর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মেলায় – বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নিয়ে ও আগতদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ছিল আগত দর্শিনার্থীদের।
মেলা মঞ্চে ছিল শিশুদের নানারকম সাংস্কৃতিক    পরিবেশনা, সাহিত্যালোচনা, সাহিত্য পুরস্কার প্রদান, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি, সাহিত্য বিষয়ক সেমিনার, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, অ্যাপাসেন লার্নার্স কালচারাল গ্রুপের পরিবেশনা, স্বরচিত কবিতা পাঠ, প্রকাশকদের সাথে মতবিনিময় ও ক্রেস্ট প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। পাঠক লেখকদের পাশাপাশি  যুক্তরাজ্যের সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক  রাজনৈতিক নেতাদের উপচে পড়া ভীড়ও ছিল লক্ষনীয়।অভ্র প্রকাশনীর স্টলে কথা হয় বাচিক শিল্পী মুনিরা পারভীনের সাথে। তিনি বলেন, বছরে একবার এই  নতুন বইয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকি। ব্রিটেনে বাংলা বই পাওয়ার এখন একমাত্র  উপায় এখন এই বাংলাদেশ বইমেলা। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী, তাদের জন্য এই বইমেলা যে কতোটা আনন্দের সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য আয়োজিত ১১তম বইমেলার প্রথম দিন। ‘বহির্বিশ্বে বাংলাসাহিত্য চর্চার সাম্প্রতিক প্রবণতা‘ বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন  কবি মিল্টন রহমান।  কবি  ইকবাল হোসেন বুলবুল-এর সভাপতিত্বে এবং কবি ও অনুবাদক ফারাহ্ নাজ-এর সঞ্চালনায় প্রবন্ধ বিষয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক সালেহা চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক সাগুফতা শারমীন তানিয়া এবং সাংবাদিক ও নাট্যকার বুলবুল হাসান।লন্ডনের বাংলা বইমেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মঞ্চে ছিলেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডক্টর নুরুন নবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান  গৌছ সুলতান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান, বীর  মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম খান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ গোলাম আলী। দ্বিতীয় দিনে “মুক্তিযুদ্ধে বিলাতবাসী নারী সমাজের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গবেষক ফারুক আহমদ। আলোচক ছিলেন : আমেরিকাবাসী বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ড. জিনাত নবী, সাংবাদিক নিলুফা ইয়াসমিন হাসান,  ব্রিটিশ বাংলাদেশি লেখক  সেজুতি মনসুর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লেখক-সাংবাদিক সুজাত মনসুর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন  আমিনা আলী।
মেলার স্টলগুলোতে ঘুরে ঘুরে প্রকাশকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রথমদিনের চেয়ে শেষ দিনে মেলায় বই বিক্রির পরিমান ছিল বেশী। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বইগুলোর ও ব্যাপক চাহিদা ছিল। পরিবহণ খরচের কারণে, খুব বেশি  সংখ্যক বই নিয়ে আসা সম্ভব হয়না। তাই পাঠকের চাহিদা পূরণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়না। তবে প্রবাসে  বাংলা বই নিয়ে  পাঠকের এই আগ্রহ  বাংলা বই নিয়ে আমাদের আশাবাদী করে। কথা হয়,মেলায় আসা যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের সহ সভাপতি জাকির আক্তারুজ্জামান খান এর সাথে, যিনি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক অনেকগুলো বই হাতে নিয়ে  মেলায় ঘুরছিলেন।  জাকির বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে বসবাস করছি। চাইলেই  সৃষ্টিশীল বা ঐতিহাসিক বইগুলো লন্ডনে  পাওয়ার সুযোগ নেই। যদিও অনলাইনে এখন অনেক কিছুই পড়তে পাওয়া যায়। কিন্ত বই পড়ার আনন্দটা অন্যরকম।আয়োজক কমিটির সভাপতি, কবি ময়নূর  রহমান বাবুল বলেন, এই বইমেলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি একটি আন্ত:যোগাযোগ  প্রতিষ্টা করতে, যার মধ্য দিয়ে শিল্পী সাহিত্যিক কবি ও সাংস্কৃতিক মূল্য ধারণ করা মানুষজন এক জায়গায় মিলিত হতে পারি। প্রবাসে সেই প্রচেষ্টাই আমরা করে যাচ্ছে।  যার সফলতা আজ হাজারের অধিক মানুষ দুইদিনের মেলায় অংশ নিয়েছেন।
মেলার শেষ দিনে সাংস্কৃতিক উৎসব মেলায় আগত প্রকাশকদের উত্তরীয় ও সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদানের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় দুইদিন ব্যাপী উৎসবের।
You might also like