পর্যটক কন্যা নাজমুনের উপলব্ধি: বিশ্বটা মানবিক, সমস্যার কারন শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতা লিপ্সা
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
সত্যবাণী
লন্ডন: ১৬৭টি দেশ ভ্রমনকারী প্রথম বিশ্বজয়ী বাংলাদেশী নারী পরিব্রাজক নাজমুন নাহার মনে করেন পুরো বিশ্বটাই মানবিক, সমস্যা শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতা লিপ্সু কিছু মানুষের মধ্যে। তাঁর মতে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দারিদ্রের কারনে অমানবিকতার কিছু ঘটনা ঘটে বটে, তবে মূল সমস্যা ক্ষমতা লিপ্সা। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদে আধিপত্য বজায় রাখতে রাজনীতির নামে যে গ্রুপটি সম্প্রদায়গত সংঘাত, বিভাজন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এরাই মূলত মানবতার শত্রু। মানবতার মুখোঁশ পড়ে এরা এই অমানবিক অপকর্মগুলো করে। নাজমুন মনে করেন, তাবৎ দুনিয়ার সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানবতার প্লাবনে যদি এই অপশক্তিকে ভাসিয়ে দিতে পারে, তাহলেই কেবল পুরো বিশ্ব হয়ে উঠতে পারে মানবিক।
শনিবার লন্ডনে সত্যবাণী সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশার সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতে এসে বিশ্বব্যাপী ছুটে চলা এই পরিব্রাজক তাঁর এমন উপলব্ধির কথা জানান সত্যবাণী সম্পাদককে।
নাজমুন বলেন, আফ্রিকার বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে ভ্রমনের প্রাক্কালে অনেকেই আমার নিরাপত্বা নিয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু গভীর রাতে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেটে হেটে দীর্ঘ রাস্তা অতিক্রমের পরও আমার নিরাপত্বা বিগ্নিত হওয়ার মতো কোন ঘটনাতো ঘটেনি। বরঞ্চ, দুইদিনের অনাহারক্লিষ্ট আমাকে গরীব উপজাতি সম্প্রাদায়ের ছনের ঘরে মানবিক মানুষগুলো শুধু আশ্রয় ও খাদ্য দেয়নি, রাতে ঘুমন্ত আমার উপর নিজের গায়ের কম্বলটা পর্যন্ত বিছিয়ে দিয়েছে। নাজমুন বলেন, শীত সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি যখন দেখলাম আমার গায়ে ঐ উপজাতী বৃদ্ধা মহিলার কম্বল, তখনতো এই কম্বল থেকে আমি আমার মায়ের বুকের উমই পেয়েছি। আমি তখন বুঝেছি, পৃথিবীর এমনসব মায়ের কোন সন্তানই অমানবিক হতে পারে না। নাজমুনের প্রশ্ন, এই মানুষগুলোর সান্নিধ্য পেলে অমানবিক শব্দটি কি আর আমাদের মনে থাকে?
নাজমুন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখেছি পর্যটকদের মানুষ এন্জেলের মতো মনে করে। মানুষের এই মানবিক গুনগুলোকে কাজে লাগিয়েই আমাদের অমানবিকতার চীর অবসান ঘটানোর চেষ্টা করতে হবে।
বাংলাদেশের সন্তান হিসেবে নিজে গর্ব অনুভব করেন, এমন মন্তব্য করে নাজমুন বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৩০ লক্ষ মানুষ নিজের রক্ত দেয়, জীবন দেয়, কয়টি দেশের এমন মানবিক গৌরবোজ্জল ইতিহাস আছে। আমি এই জাতীর একজন সদস্য, এটি যখন ভাবি তখন গর্বে আমার বুক ফুলে উঠে। আর তাইতো মানবিক বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা হাতে আমি ছুটে বেড়াই বিশ্ব ভূমন্ডলে। আমি পুরো বিশ্বকে বলতে চাই বাংলাদেশ থেকে মানবিক বিশ্ব গড়ার আহ্বান নিয়ে আমি এসেছি। আসুন সবাই মিলে একটি মানবিক বিশ্ব গড়ে তুলি।
বাংলাদেশের বাইরে জন্ম ও বেড়ে উঠা প্রজন্মকে নিজ শিকড়কে চিনা ও উপলব্ধি করার ম্যাসেজ দিতে চান নাজমুন। তিনি বলেন, এই প্রজন্মের শিকড় এমন এক মাঠিতে, যে মাঠির গৌরবগাঁথা বিশ্বসমাদৃত। দেশের বাইরে জন্ম নেয়া প্রজন্মকে আমি এই শিকড় চিনাতে চাই। যুক্তরাজ্যে জন্ম ও বেড়ে উঠা সত্যবাণী সম্পাদকের নবপরিণিতা পূত্রবধু জয়নাবের হাতে বাংলাদেশের একটি পতাকা ব্যাজ পড়িয়ে দিতে দিতে নাজমুনের স্বগোতউক্তি-এই ব্যাজ হাতে তুলে দিয়ে আমি এই প্রজন্মকে বলতে চাই শিকড়কে ভালোবাসো, মন থেকে উপলব্ধি করো সেই পূর্ব প্রজন্মকে, যারা মানবিকতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিজেদের বুকের রক্ত দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ তৈরী করেছিলো।
১৬৭ দেশ ভ্রমনের পর এখন বাকী দেশগুলোতেও বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়াতে চান নাজমুন। এক্ষেত্রে ইচ্ছে উৎসাহের অভাব না থাকলেও রয়েছে আর্থিক সংকট। জানালেন নিজের জীবনের সব সেভিংস, উপার্জন সবই তিনি শেষ করেছেন বিশ্ব ঘুরতে। এখন বাকী দেশগুলো ঘুরতে তাঁর স্পন্সর প্রয়োজন। তিনি বলেন, শিকড় ভূমির রক্তে রাঙা পতাকা হাতে মানবতার বাণী নিয়ে আমি যেতে চাই পৃথিবীর অবশিষ্ট দেশগুলোতে। আমার এই ইচ্ছেয় স্পন্সর হয়ে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ সহযাত্রী হবেন। যেসব প্রতিষ্ঠান স্পন্সর হয়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেবেন, তাদের সিম্বলও আমি হাতে নিয়ে দৌড়াবো বিশ্বব্যাপী। এক্ষেত্রে তিনি মিডিয়ার সহযোগীতা কামনা করলে, সত্যবাণী সম্পাদক আশা প্রকাশ করে বলেন, সত্যবাণীর পাঠক, শুভানুধ্যায়ি, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিশ্চয়ই কেউ না কেউ বাংলাদেশের পর্যটক কন্যা নাজমুন নাহারের সহযোগী হবেন।