হতাশ জনগণঃ সিলেট-১ ভিআইপি আসন থেকে ২৭ বছর পর নেই কোন মন্ত্রী

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা কথা প্রচলিত আছে-‘সিলেট-১ আসন যার, সরকার তার’। স্বাধীনতার পর এই পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে এই আসন থেকে নির্বাচিত এমপি’র দল-ই সরকার গঠন করেছে। ফলে দিনে দিনে এই ধারণা আরও পাকাপোক্ত হয়েছে। আর এ কারণে সিলেট-১ আসন পরিচিতি পেয়েছে মর্যাদার আসন হিসেবে।
সিলেট-১ আসন থেকে এ পর্যন্ত যারা নির্বাচিত হয়ে সংসদ আলোকিত করেছেন, তারা প্রত্যেকেই হেভিওয়েট রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ফলে এই আসন থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সবসময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নতুন মন্ত্রীসভায় রাখা হয়নি সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচিত আ’লীগের এমপি ড. একে আব্দুল মোমেনকে। একই সরকারের সদ্যবিগত মন্ত্রীসভায় ড. মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
গত ২৭ বছরের ইতিহাসে আ’লীগ কিংবা বিএনপি যেই দল-ই সরকার গঠন করুক সেখানে অবধারিতভাবে এই আসনের বিজয়ী এমপিকে মন্ত্রীসভায় রাখা হয়েছিল। আব্দুল মোমেনের আগে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার সিলেট-১ আসন থেকে বিজয়ী এমপিকে মন্ত্রিসভায় না রাখার নজির রেখেছিল।
১৯৯১ সালে সিলেট থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদে গিয়েছিলেন খন্দকার আব্দুল মালিক। ১৯৯৬ সালে আ’লীগের হয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হন হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী। ১৪ জুলাই ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে বিজয়ী হুমায়ূন রশীদকে আ’লীগ সরকার জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত করে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে সফল স্পিকার ধরা হয় হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীকে।
২০০১ সালে বিএনপি থেকে এই আসনে এমপি হয়ে সংসদে যান এম, সাইফুর রহমান। বিএনপি ও জোট সরকারের মন্ত্রীসভায় অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশের অন্যতম সফল এই অর্থমন্ত্রী। সাইফুর রহমান বিএনপি’র ’৯১ সরকারেও টেকনোক্র্যাট অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
২০০৮ ও ১৪ সালে এই আসন থেকে নির্বাচিত হওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা দুই মেয়াদে আ’লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান। সাইফুর রহমান, আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শাহ এমএএস কিবরিয়ার কারণে দেশের রাজনীতিতে সিলেট মানেই অর্থমন্ত্রী এমন একটা ধারণা জন্মে গিয়েছিল।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আবুল মাল আব্দুল মুহিত স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে তার ভাই আব্দুল মোমেনকে প্রার্থী করেন। প্রথম নির্বাচনে জয়ী মোমেনকে শেখ হাসিনা সরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুদায়িত্ব অর্পণ করে। কিন্তু মোমেন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা বিতর্কের জন্ম দেন। বিভিন্ন সময় ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক’, কিংবা দিল্লিতে গিয়ে বলে এসেছি, ‘হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে’-এ জাতীয় অসংলগ্ন কথা বলে বিরাগভাজন হয়ে এবার নতুন মন্ত্রীসভা থেকেই বাদ পড়লেন।
এছাড়া বিগত ৫ বছরে মন্ত্রী থাকাকালিন জনসম্পৃক্ততায় তাঁর অনীহার কথা সিলেট-১ আসনের সাধারণের মুখে মুখে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ২৭ টি ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে আহূত বৈঠকে ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ তাঁর উপস্থিতিতে এ বিষয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। ড. মোমেন ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দকে সান্তনা দিয়ে বলেছেন, পরবর্তীতে আর এ ভুল হবে না।
এর বাইরেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সিলেট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং পারিবারিকদের সদস্যদের স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা কর্মকান্ড নিয়ে সিলেটবাসীর মধ্যে গুঞ্জন রয়েছেন। মন্ত্রীত্ব না পাওয়ার পিছনে এসব কারণও থাকতে পারে বলে, রাজনীতি বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন।
তাই ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনের নির্বাচিত এমপি মন্ত্রীত্ব না পাওয়ায় সাধারণ ভোটাররা হতাশ। তবে অনেকেই আশা করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটবাসীকে এভাবে হতাশ করবেন না। অন্ততঃ উন্নয়নের স্বার্থে হলেও আগামীতে জনকল্যাণে কোন হিতকর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অপেক্ষায় সিলেটবাসী।

You might also like