মৎস্য আইনের নীতিমালা লঙন করে শান্তিগঞ্জে বেপরোয়া মৎস্য নিধন চলছে

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী চক্র মৎস্য আইনের নীতিমালা না মেনে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও এলাকায় পাখিমারা ও রামগুটা  জলকরপুঞ্জ জলমহাল শুকিয়ে নির্বিচারে মৎস্য নিধন করছেন। জলমহালে ডিজেলচালিত পাম্প দিয়ে পানি শুকিয়ে এই মৎস্য নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছেন ইজারাগ্রহিতারা। এতে করে দিনে-দিনে মিঠা পানির সু-স্বাদু দেশী মাছের প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে। জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরায় একদিকে যেমন মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে, অপরদিকে হাওরের কৃষিজমি পড়ছে হুমকির মুখে। পানি সেচের অভাবে হাওরের শত শত একর বোরো ফসল পানির অভাবে নষ্ট হচ্ছে। এসব কৃষি জমিতে পানি সেচ সঙ্কটের কারণে চলতি বোরো ধানের আবাদকৃত চারা নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে কৃষকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে শান্তিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, পাখিমারা ও রামগুটা জলকরপুঞ্জ জলমহাল শুকিয়ে নির্বিচারে মাছ ধরছেন ইজারাদাররা। জলমহালে পাম্প লাগিয়ে বেশ কয়েকদিন থেকে মৃদুল হাসান গংরা মাছ নিধনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।  জানা যায়, ১০৭ একর আয়তনের এই জলমহালটি ১৪৩০-১৪৩৫ বাংলা পর্যন্ত ৬ বছরের জন্য ইজারা নেয় বীরগাঁও খালপাড় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। নিয়ম অনুযায়ী ৩ বছরে একবার ৫ ফুট পানি রেখে জাল দিয়ে মাছ আহরণের কথা থাকলেও লিজ আনার প্রথম বছরেই মৎস্য আইন অমান্য করে এই অঞ্চলের শত শত কৃষকের রোপণকৃত বোরো জমিতে সেচের ব্যবস্থা নষ্ট করে জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য আহরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ইজারাদাররা। এতে বোরো ফসল নিয়ে হুমকিতে আছেন কৃষকরা।
বীরগাঁও গ্রামের কৃষক এনামুল হক বলেন, ‘আমরা তো কৃষক, আমরার কথা কেউ শুনে না। এই বিলটি শুকানোর কারণে আমরার জমিতে পানি দিতে পারতেছি না। ধানের চারা মইরা যাইতাছে, ধান অইব কি না আল্লাই জানে।’
আরেক কৃষক শফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, এরআগেও অনেকে লিজ নিয়ে বিল ফিশিং করেছে, কিন্তু এ রকম করেনি। এরা শুরুতেই সমস্যা করছে। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।
এদিকে উপজেলার পাখিমারা ও রামগুটা জলকরপুঞ্জ জলমহালের পানি না শুকানো ও লিজডিডের শর্তের বাইরে ইজারাদার যাতে মৎস্য আহরণ না করতে পারে এবং জলমহাল শুকানোর পাম্প জব্দের জন্য ২৯ জানুয়ারি সোমবার জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি অভিযোগ দিয়েছেন বীরগাঁও গ্রামের মৃত শেখ সোলাইমানের পুত্র ওয়াসিম৷
জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য নিধনের ব্যাপারে বীরগাঁও খালপাড় মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আহমদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না৷ আমার অভিভাবক আছেন, তারা কথা বলবেন। এরপর নানা প্রশ্ন করলে কোন উত্তর না দিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য নিধন সরকারি নীতিমালায় নিষিদ্ধ। যদি কেউ নীতিমালা লঙন করে তাহলে তদন্তসাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জের ইউএনও সুকান্ত সাহা বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে যদি সমিতির লোকজন সরকারী নীতিমালা লঙন করে জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

You might also like