নগরির স্টেশন রোড ও বঙ্গবীর রোডের ফুটপাতগুলো কী লিজ দেয়া হয়েছে?

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সিলেট অফিস 
সত্যবাণী
রাজপথের পাশাপাশি ফুটপাত অবৈধ দখলের কারণে দুর্ভোগকবলিত সিলেট নগরবাসীর সমস্যা অনেক পুরোনো। বিগত সময়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নানাভাবে রাজপথ ও ফুটপাত হকার এবং দখলমুক্ত করার অভিপ্রায়ে নানামূখী প্রয়াস চালিয়েছিলেন। কার্যতঃ তিনি কিছুটা সফল হলেও তা ছিল স্বল্পস্থায়ী। ফলে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীন অবস্থায় নগরির রাজপথে চলাচলের বঞ্চনার শেষ হয়নি।
বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নির্বাচনকালীন সময়ে ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচিত হলে তিনি সিলেট নগর এলাকার রাজপথ-ফুটপাত দখল ও হকারমুক্ত করবেন। ফলে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এতে তিনি দেশব্যাপী বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে তাঁর উদ্যোগটি ছিল সত্যিকার অর্থেই প্রশংসনীয়। উচ্ছেদকৃত হকার বা ভাসমান ব্যবসায়ীদের তিনি তাড়িয়ে না দিয়ে করেছেন পুণর্বাসন; দিয়েছেন ব্যবসায়িক সম্মান। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তথা ভাসমান হকাররা মেয়রের উপর খুশী। এর পাশাপাশি তিনি স্থায়ী ব্যবসায়ী বা দোকানদের ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধেও অভিযান চালিয়েছেন। যে কারণে ইদানিং দোকানের সামনের ফুটপাত দখল করে পসরা সাজাতে স্থায়ী দোকানদারদের খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। তবে, এ অবস্থা কতদিন বিদ্যমান থাকবে, তা-ই দেখার বিষয়।
কিন্তু মেয়র যেটা পারেননি, তা হলো অবৈধ স্ট্যান্ড। নগরবাসি আশা করছেন, সরকার প্রধানের খুব কাছের মানুষ, অত্যন্ত প্রভাবশালী বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আবারও বলিষ্ট পদক্ষেপ নিলে তারও একটা সুরাহা হতে পারে। এটা নগরবাসীর অন্তরের প্রত্যাশা।
এদিকে, সুরমা নদীর ‘এপাড়-ওপাড় দু’পাড়’ মিলে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) গঠিত হলেও নদীর উত্তরপাড়কে হকারমুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ পাড়ে সে রকম কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। ফলে নগরির সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত ৯টি ওয়ার্ড তথা দক্ষিণ সুরমা এলাকার ব্যস্ততম সড়কগুলো এখন ভাসমান ব্যবসায়ী বা হকারদের দখলে চলে গেছে। একই সাথে বিভিন্ন মার্কেট ও স্থায়ী দোকানের ব্যবসায়ীরা ফুটপাত দখল করে পসরা সাজিয়ে জনগণের নিরাপদে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে আছেন। সেদিকে সিসিকের বিন্দুমাত্র নজর নেই বলে মনে হচ্ছে। এতে করে নগরির দক্ষিণাংশে বসবাসরত নাগরিকরা কিছুটা ক্ষুব্দ। নাগরিকদের বক্তব্য, উত্তর সুরমায় ফুটপাত দখলমুক্ত করা হলেও দক্ষিণ সুরমার ফুটপাতগুলো কী লিজ দেয়া হয়েছে?

সরেজমিনে নগরির প্রবেশদ্বার বলে পরিচিত ব্যস্ততম স্টেশন রোড ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় আধ কিলোমিটার সড়কটির দু’পাশে সিসিকের উদ্যোগে বক্স-ড্রেন নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। যাতে বর্ষার পানি নিস্কাশনের পাশাপাশি উপর দিয়ে পথচারীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারেন। কিন্তু ড্রেনের উপরের ফুটপাত দখল করে বসে রয়েছেন মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীরা। তারা দোকানের মালামাল ফুটপাতে সাজিয়ে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু কী তাই? অনেকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি (!) মনে করে মার্কেট বা দোকানের সামনের ফুটপাত বা রাজপথ হকারদের কাছে ভাড়া দিয়ে মুফতে কামাই করছেন।

এ সুযোগে সড়কের দু’পাশের অর্ধেকেরও বেশী জায়গা দখল করে বসেছেন হকাররা। রাজপথে বসে নির্বিঘ্নে সবজি, মাছ, শুটকি থেকে শুরু করে ফলমূল সব কিছুই বিক্রি করছেন তারা। এতে করে দিনের বেশীরভাগ সময় যানজট লেগেই থাকে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে। যানজটের কারণে ৫ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে ২৫ মিনিট, ক্ষেত্রবিশেষে ঘন্টাখানেকও লেগে যায়।
গত সোমবার স্টেশন রোডের বাবনা মোড়ে যানজটে আটকেপড়া জনৈক যাত্রী ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘‘সরকার সড়ক বানিয়েছে যানবাহন চলাচলের জন্য, কিন্তু তা হকাররা দখল করে রাখলে তো যানজট হবেই।’ সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া অপর এক পথচারী বলেন, ‘‘কী করবো ভাই, ফুটপাত তো আর আমাদের জন্য না, দেখেন না-দোকানদাররা ফুটপাতে মালামাল রেখে দেদারছে ব্যবসা করছেন? অথচ দেখার যেন কেউ নেই।’
ফুটপাত ও রাজপথ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা হকারদের কাছে ভাড়া দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন খোদ স্টেশন রোড ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফয়ছল আহমদ মাছুম। তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার স্থায়ী ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছি, যাতে মানুষের হাঁটাচলার জায়গাটা ছেড়ে দেন, তারা না শুনলে আমাদের তো কিছু করার নেই ।’

তিনি বলেন, ‘বিগত সময় আমরা তৎকালীন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে অনুরোধ করেছিলাম, নগরির দক্ষিণ সুরমা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সড়কগুলো পরিস্কার করে দিতে। কিন্তু তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি(!)। বর্তমান মেয়র এ রকম কোন উদ্যোগ নিলে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছি।’
এ বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সিসিকের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযানের সময় ভাসমান ব্যবসায়ী ও হকাররা তাৎক্ষণিক সটকে পড়ে, পরে আবার দখল করে নেয়। বর্তমানে সিসিকের ম্যাজিস্ট্রেটরা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে ব্যস্ত। উনারা ফিরে এলে আবারও জোরদার অভিযান চালানো হবে।’

You might also like