বন্যায় দুর্ভোগকবলিত মানুষঃ ওসমানীনগরে ভুরিভোজে ব্যস্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ!
সিলেট অফিস
সত্যবাণী
যখন চারদিকে বন্যার অথৈ জল। চরম দুর্ভোগে দিন-রাত পার করছেন বন্যা কবলিত মানুষ। ঠিক তখন সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা হাসপাতালে কর্মকর্তা বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা এবং ভুরিভোজ নিয়ে ব্যস্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ রকম একটি ছবি প্রকাশের পর থেকে অনেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা জানান, ঈদের আগে থেকেই বন্যা কবলিত হয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন ওসমানীনগরের সোয়া ২ লাখ মানুষ। বাড়িঘরে পানি থাকায় অসংখ্য পরিবার আশ্রয় নিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। ত্রাণ অপ্রতুলতার কারণে খাদ্য সংকটে রয়েছেন বন্যাকবলিতরা। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বন্যা দুর্গতদের পাশে থেকে শুকনা খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করে যাচ্ছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে গত বুধবার নবাগত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বরণ, দু’জন ডাক্তার, একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও একজন স্বাস্থ্য সহকারীর বিদায় উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদায় সংবর্ধনা ও ভুরিভোজের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে হাসপাতাল ও মাঠ পর্যায়ের প্রায় দেড়শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারি অংশ নেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন সিলেট বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. আনিসুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পরিচালক ডা. নুরে আলম শামীম, সিলেট সদরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাহিল, বিশ্বনাথের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন সুমনসহ অনেকে।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে সিলেট থেকে বাবুর্চি এনে চলে খাবারের আয়োজন। প্রায় দেড়শ’ জনের খাবারের জন্য রান্না করা হয় মুরগী ভুনা, রুই মাছ ভাজা, চিংড়ি ভুনা, আলু ও বেগুন ভর্তা, মুড়িঘণ্ট, ডাল। সঙ্গে ছিল দই ও সফট ড্রিঙ্ক। খাবারের জন্য মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের তৃতীয় তলার দু’টি কক্ষে ডেকোরেটার্স থেকে চেয়ার-টেবিল এনে সাজানো হয়। বেলুন দিয়ে সাজানো হয় অনুষ্ঠানকক্ষের মূল ফটক। সব মিলিয়ে বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে আয়োজনটি করা হয়।
বিষয়টি ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পেলে অনেকেই এই আয়োজনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
শিব্বির আহমদ নামের একজন লিখেন, ‘১১ পদের খাবার থেকে যদি ৫ পদের খাবার বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হতো তাহলে ভালো হতো। যারা বন্যা কবলিত আছেন একমাত্র তারাই বলতে পারবেন কতটা কষ্টে আছেন। এই ছবিগুলো দেখে বড় কষ্ট লাগের ভাই’।
জয়ন্ত নামের একজন লিখেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আনন্দ করে। পানির জন্য উপজেলার সাধারণ মানুষ কষ্ট করে’।
সাংবাদিক উজ্জ্বল দাশ লিখেন, ‘উনাদের মানবতা নির্বাসনে, তাইতো এমন আয়োজন’।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাইনুল আহসান বলেন, গত বুধবার আমাদের সমন্বয় সভা ছিল। ওই অনুষ্ঠান শেষে অবসরজনিত কারণে দু’জন এবং বদলিজনিত কারণে দু’জন ডাক্তারকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুষ্ঠানে সবার জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। বন্যার্তদের জন্য প্রতিদিন মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।
ওসমানীনগর উপজেলার ইউএনও অনুপমা দাস বলেন, শুনেছি এটা তাদের অফিশিয়ালি প্রোগ্রাম ছিল।