শুক্রবারের সহিংসতায় ঢাকায় মৃতের সংখ্যা ৩২: সারা দেশে কারফিউ জারি
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকা: শুক্রবার দিনব্যাপি সংঘর্ষে ঢাকার মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩২ এ। ঢাকার যেসব এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো, তার অন্যতম রামপুরা-বনশ্রী। এখানকার ফরাজী হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ১০ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন হাসপাতালটির ম্যানেজার রুবেল হোসেন।
সবাই গুলিতে মারা গেছে বলে জানান তিনি।
তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া, আহত হয়ে আরো অন্তত তিনশ জন চিকিৎসা নিয়েছেন ফরাজী হাসপাতালে। তাদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ ছিলেন বলে জানান মি. হোসেন।
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের সুপারিনটেন্ডেন্ট মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, জোবায়ের ব্যাপারী নামে একজনকে মৃত অবস্থায়ই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল।
মি. মিজান জানান, ৪০ বছর বয়সী জোবায়ের ব্যাপারী পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন বলে জানতে পেরেছেন তারা।
“পথচারী হিসেবে সংঘর্ষের এলাকা অতিক্রম করছিলেন তিনি,” যোগ করেন মি. মিজান।
এছাড়া, অন্তত ৮৯ জন আহতকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। যাদের মধ্যে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ ছিলেন।
কোটা সংস্কার ঘিরে চলমান আন্দোলনে শুক্রবারও রাজধানীতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। বাস, প্রাইভেটকার, পিকআপ, মোটরবাইকসহ বেশকিছু পরিবহন অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হতে দেখা গেছে।
শুক্রবার সারাদেশে ৩৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এরমধ্যে ২৯টি ঘটনা ঢাকা মহানগরে। এই আগুনের ঘটনায় বিআরটিএ ভবন, সেতুভবনসহ পাঁচটি সরকারি ভবন, দুটি বেসরকারি ভবন, একটি থানাও রয়েছে। বিবিসি বাংলাকে এমন তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল। জানা গেছে, এর বেশিরভাগ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং তাদের গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়েছে। গত দুই দিনে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে আরও ১৩টি গাড়ি। এসব ঘটনায় ১৮ জন অগ্নিনির্বাপন কর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
সারা দেশে কারফিউ জারি, সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত
কোটা সংস্কার ইস্যুতে চলমান আন্দোলনে দেশজুড়ে সহিংসতার পর সারাদেশে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
শুক্রবার রাতে গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ১৪ দলের বৈঠক শেষে আইন মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত কার্যকরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, সারা দেশের যে যে জায়গায় সংঘাত সহিংসতার শঙ্কা রয়েছে সে সব জায়গায় বেসরকারি প্রশাসনকে সহায়তা করবে সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কারফিউ প্রসঙ্গে বলেছেন “এটা অবশ্যই কারফিউ। এটা নিয়ম অনুযায়ীই হবে এবং সেটা শুট অ্যাট সাইট হবে”।
অর্থাৎ, দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশের কথা জানিয়েছেন মি. কাদের।
ঢাকায় গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকের পর কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।
তিনি বলেন, “আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিটিভি সম্পূর্ণরুপে পুড়িয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে”।
তিনি জানান, বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা দেশের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জনগনের জান-মাল রক্ষায় সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের কথা বলেন।
এছাড়াও এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল বর্তমান সংকট উত্তরণে দেশবাসির সহযোগিতা চেয়েছেন বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
কারফিউ’র পরিপত্র জারি
দেশব্যাপী কারফিউ এবং সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা ও জন নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী আজ হতে সান্ধ্য আইন কার্যকর করা হলো।
জেলা প্রশাসনের ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে পুলিশ কমিশনার এই প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দেশ বাস্তবায়ন করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েনের জন্যও তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানানো হয়েছে পরিপত্রে।
কারফিউ বা সান্ধ্য আইনের সময়সীমা এবং শর্ত কী হবে তাও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ কমিশনার নির্ধারণ করবেন বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ আহমেদ।
কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা কোটা আন্দোলনকারীদের
জনগণের ওপর আরো দমন পীড়নের জন্য সরকার সেনা মোতায়েন করছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
“সরকারকে সমর্থন না দিয়ে ছাত্রদের পাশে থাকতে” দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
কারফিউ জারি অবস্থায় কীভাবে তারা কর্মসূচি পালন করবে জানতে চাইলে বিবিসি বাংলাকে মি. হোসেন বলেন, কারফিউ জারি করার আগেই তারা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তাই জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে তারা মনে করেন।