নারায়ণগঞ্জ দেড় শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দেড় শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করার পর নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় গত তিন দিনে এসব ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
তবে এসব ঘটনায় বিএনপির নেতারা ক্ষোভ জানিয়েছেন।বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল ইসলাম সজিব।জানা যায়, শেখ হাসিনা ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করে চলে যাওয়ার পর সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। এ সুযোগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। ভাঙচুর করা হয় মোগরাপাড়া চৌরাস্তা আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়। পরে অগ্নিসংযোগও করা হয়।সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ রনির টিপুরদী এলাকার একটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধরা। এতে প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া ইলিয়াসদী এলাকায় আনোয়ার আলী মেম্বার, কাজিমউদ্দিন, মাসুদুর রহমান ও মোশারফের ৫টি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। সোনারগাঁ পৌরসভার হাতকোপা গ্রামের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম মোল্লার বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। মুন্সিরাইল বাজারে জাপা নেতা মুজিবুর রহমানের দোকানপাটে ভাঙচুর করা হয়।
পিরোজপুর ইউনিয়নের প্রতাপের চর এলাকায় মিন্টু মিয়ার বাড়ি ও আষাঢ়িয়ারচর গ্রামে আব্দুল হালিম ও মেহেদী হাসানকে কুপিয়ে আহত করা হয়। বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বাবুল ও তার ভাই আমিনুল ইসলামের বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করে। শান্তির বাজার এলাকায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে। নুনেরটেক এলাকায় ইউপি সদস্য ওসমান গণিসহ নেতাকর্মীর ১৬ বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট করে।সাদিপুর ইউনিয়নের নয়াপুর গ্রামে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সালাউদ্দিন মাসুমের বাড়ি, পঞ্চমীঘাট বাজারে আওয়ামী লীগের সমর্থক আইয়ুব আলী ও তার ভাই মামুন ভূঁইয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে পিক আপ ভ্যানে করে মালপত্র লুট করে। সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য রফিকুল ইসলামের দুটি বাড়ি ও সাদিপুর ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
জামপুর ইউনিয়নের বস্তল এলাকায় পল্লী চিকিৎসক বসুর দোকান ভাঙচুরসহ কলতাপাড়া গ্রামের হাবিবুল্লাহর দুটি গরু লুট করে নিয়ে জবাই করে অনুষ্ঠান করা হয়। ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের বশিরগাঁও বাড়ি, মিরেরটেক বাজারে এশিয়ান টিভির সাংবাদিক পনির হোসেনের অফিস, মহজমপুর এলাকায় দুলাল ভূইয়ার অফিস ও বাড়ি, জামপুর গ্রামে সাবেক ইউপি সদস্য সুজনের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। একই এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা হরমুজ আলীর দুই ছেলে রনি ও মোহাম্মদ আলীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। পাকুন্ডা গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শাদত আলীসহ ১৭টি বাড়িঘর ভাঙচুর করে। তালতলা এলাকায় জামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও ৫নং ওয়ার্ড কার্যালয় ভাংচুর করা হয়। তালতলা বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ হোসেনের দোকান, যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলামের বাড়ি ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের কার্যালয় ভাঙচুর করে।সনমান্দি ইউনিয়নের দড়িকান্দি এলাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমানের চরলালের বাড়ি, অলিপুরা বাজারে তাকবিরের ঔষধের দোকান ভাঙচুর ও লুট করা হয়।নোয়াগাঁও ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থক ইমনের বাড়ি ও চৌরাপাড়া গ্রামে আতাউরের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী এলাকায় কৃষকলীগের আহ্বায়ক করিম আহমেদের খামার বাড়িতে হামলা করে লুটপাট করা হয়েছে। ওই বাড়ি দখল করে নতুন ঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল ইসলাম সজিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আমরা বিভিন্ন হিন্দুদের মন্দির, থানা ও সরকারি স্থাপনা পাহারা দিচ্ছি।স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল বলেন, কারো ওপর জুলুম, হামলা না করতে তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অতি উৎসাহী কিছু লোকজন এসব হামলা করছে, এটা কাম্য নয়।সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, হাসিনা সরকারের আমলে হামলা, মামলায় হয়রানীর শিকার ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা এসব ঘটিয়েছে। এগুলো বন্ধ করা হয়েছে। নতুন করে কেউ হামলা ভাঙচুরে জড়িত হলে দল থেকে বহিস্কার করা হবে।নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার বলেন, সবসময় সহবস্থানের রাজনীতি করেছি। দুই বার সাংসদ ছিলাম। কাউকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করিনি। আশা করি বিএনপিও সহবস্থানের রাজনীতি করবেন। যারা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা।