অকাল বৃষ্টির ফলে বিশাল ক্ষতির মুখে সুনামগঞ্জের সবজি চাষীরা
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সুনামগঞ্জে কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে গ্রীষ্মকালীন সবজিগাছে পচন ধরেছে। এছাড়া শীতকালীন সবজির বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন সবজিচাষিরা। সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারেও সবজির দাম বেড়ে গেছে। সব রকমের সবজির দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান,গত ৩ অক্টোবর থেকে সুনামগঞ্জে লাগাতার বৃষ্টি হয়েছে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই হয়েছে ভারী বর্ষণ। ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অতি বৃষ্টির কারণে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, জগন্নাথপুর, শান্তিগঞ্জ, জামালগঞ্জ, দিরাই-শাল্লাসহ জেলার প্রায় সব উপজেলায় সবজিচাষিদের বিপুল ক্ষতি হয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুরের দক্ষিণ রতারগাঁওয়ের শামছুন্নাহার বলেন, লাগাতার বৃষ্টিতে লাউ, করলা, শিমের ফুল-কড়া সব ঝরে পড়েছে। অনেকে বলছেন, রোদ উঠলে লাউগাছ মরে যাবে। লুইব্বা উড়ি (বরবটি) গাছ মরা শুরু হয়েছে। ১৫ শতাংশ জমি ৯ হাজার টাকা খরচ করে চাষবাস করেছি। এখন আবার খরচ করে জমি করলেও ফলন ভালো হবে না। আমার বাড়ির পাশের এক কৃষক ৪ কেয়ার (১২০ শতক) জমিতে শিম চাষ করেছিলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই শিম বিক্রি শুরু করার কথা। কিন্তু বৃষ্টিতে গাছের সব শিম ঝরে গেছে।
বিশ্বম্ভরপুর বাঘবেড়ের কৃষক জাহানারা বেগম বললেন, বৃষ্টিটা অসময়ে হচ্ছে। আষাঢ়-শ্রাবণের মতো ভারী বর্ষণ। সবজিগাছ বা চারা অসময়ের বৃষ্টি সহ্য করতে পারছে না। এ কারণে লাউ, শিম, মরিচ, টমেটো, পাতাকপি, ফুলকপি, লালশাক, মুলাশাকের গোড়ায় পানি লেগে পচন ধরেছে। ছোট ছোট চারা ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আবার নতুন করে চাষবাস করলে বিলম্বে ফলন হবে। ৪০ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ করেছিলাম, এখন আবার চাষ করতে হলে খরচ হবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের রাধানগর-শনিরখাড়ার কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, অসময়ে এবার দু’বার বৃষ্টি হয়েছে। দু’’বার লালশাক লাগিয়েছি, পচে নষ্ট হয়েছে। এবার পাতিলাউ, আউশালাউ, কুমড়া পচে নষ্ট হয়েছে। করলা ক্ষেতে পানি লাগায় করলার ছোট গোটা পচে যাচ্ছে। গাছ মরে যাচ্ছে। শসাগাছেরও একই অবস্থা। এ বছর ট্রাক্টরের খরচ, সারের দাম বেশি। আবার চাষবাস করলে ৬০ হাজার টাকা খরচ হবে। ফলন ভালো না হলে বিপদে পড়তে হবে।
বিশ্বম্ভরপুরের ঝিনারপুরের কৃষক শিমুল মিয়া বলেন, ফুলকপি, লাউ, শিম, বেগুন, বিন্দু মরিচ, মুলাশাক ও লালশাকের বীজতলা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু টানা বৃষ্টি সবকিছু ধুয়ে নিয়ে গেছে। লাউ-শিম রক্ষা করা গেলেও ফুলকপি-বেগুন বাঁচানো যাবে না।
এদিকে লাগাতার বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে সুনামগঞ্জ শহরের সবজি বাজারেও। লাউ, করলা, বেগুনসহ সব ধরণের সবজি প্রতি কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
শহরের কাঁচাবাজারে সোমবার বেলা ১১টায় সবজি কিনছিলেন শহীদ আবুল হোসেন রোডের অসীম দাস। আলাপে জানালেন, ৫ দিন আগেও করলা কিনেছেন ৫০ টাকা কেজিতে, সোমবার কিনতে হয়েছে ৭০ টাকা কেজি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, গ্রীষ্মকালীন সবজি জেলায় ৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছিল। এই সবজি এখন শেষপর্যায়ে। শীতকালীন সবজির চারা সবাই উঁচু স্থানে তৈরি করেছেন। তাই বৃষ্টিতে তেমন ক্ষতি হবে বলে মনে করছি না।