অত্যাধুনিক বাস টার্মিনাল চালু হলেও সিলেটের জনদুর্ভোগ কমেনি
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ নগরির সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা কদমতলি। নগরের প্রবেশমুখ হিসেবে এর পরিচিতি সর্বজনবিদিত। কিন্তু যাত্রী সাধারণ আর পথচারীদের সাথে স্থানীয় এলাকাবাসীর দুর্ভোগের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যানজট। কদমতলিরে এই যানজট নিরসনে ৮ একর ভূমির উপর নির্মিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বাস টার্মিনাল।
কিন্তু, বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অব্যবস্থাপনা আগের মতোই। দুর্ভোগকবলিতরা বলছেন, ভেতরে ফিটফাট, বাইরে জগাখিচুড়ি। টার্মিনালের ভেতরে থাকে না যানবাহন। আগের মতোই এলোমেলো করে রাখা হয় গাড়িগুলো। এ যেন আহমক্কের রাজ্যে বাস। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে আরও কয়েকগুণ।
তবে পরিবহন মালিকরা বলছেন ভিন্নকথা। টার্মিনালে বড় বড় ভবন তৈরি হওয়ায় যানবাহন সংকুলান হচ্ছে না বলে তারা জানিয়েছেন। এ কারণে অনেক গাড়ি বাইরে থাকে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে এই অবাঞ্ছিত যানজট। এটা তাদের দাবি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, টার্মিনাল ও সংলগ্ন এলাকায় পা ফেলার জায়গাটুকু নেই। এ অবস্থা কিনব্রিজ থেকে হুমায়ুন রশীদ চত্বর পর্যন্ত। প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আর যানবাহন। বিশেষ করে মাঝখানে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। ওই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন শ’ শ’ গাড়ি যাতায়াত করে। কিনব্রিজের সংস্কারকাজ চলার কারণে যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ২২ অক্টোবর রোববার হুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী যানবাহন এলাকাজুড়ে। এছাড়া কুমিল্লা ও হবিগঞ্জগামী বাসগুলো সড়কে দাঁড়িয়ে। সড়কের দু’পাশে যানবাহন এলোমেলো করে রাখায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন সড়ক ব্যবহারকারীরা।
এদিকে, কদমতলি টার্মিনালের সামনে গেলে আর কোনো রক্ষা নেই। যানজটের পাহাড় ঠেলতেই হবে। সকালে স্কুল, কলেজ ও অফিসগামী মানুষের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দক্ষিণ সুরমা নসিবা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের বাসা মোমিনখলা এলাকায়। প্রতিদিন যানজটের কারণে তাদের স্কুলে যেতে বিলম্ব হয়। তারা জানায়, অত্যাধুনিক টার্মিনাল থাকার পরও তাদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কেন এ টার্মিনাল করা হলো এমন প্রশ্ন তাদের?
কদমতলিতে একটি বেসরকারি ব্যাংকের জনৈক কর্মকর্তা জানান, তাঁর অফিস কদমতলি পয়েন্টেই। অনেক সময় গাড়ি রেখে অফিসে হেঁটে যেতে হয়। এছাড়া সড়কের যে হাল তাতে অনেক কাঠখড় ডিঙ্গিয়ে যেতে হয় কার্যক্ষেত্রে। তিনি বলেন, টার্মিনালের ভেতর কেন গাড়ি রাখা হয় না? যদি তারা সঠিকভাবে টার্মিনালের ভেতর গাড়ি রাখে তাহলে এ যানজট অনেকটা কমে আসবে।
টার্মিনালের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল টার্মিনাল অনেকটাই খালি পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন লেনে কিছু গাড়ি থাকলেও অধিকাংশই টার্মিনালের সামনে জড়ো করে রাখা হয়েছে। সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট-এমজিএসপি প্রকল্পে সিলেট শহরে দেশের সর্বাধুনিক সুবিধাসংবলিত ও নান্দনিক নির্মাণশৈলীতে কদমতলি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু হয়। এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে ইজারাও দেয়া হয়েছে টার্মিনালটি। এ ব্যাপারে স্থানীয় সিটি কাউন্সিলর তৌফিক বক্স লিপন বলেন, ‘শ্রমিক সংগঠন, মালিক সংগঠন, সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ, সবার সম্মিলিত অবদানে আমরা একটি দৃষ্টিনন্দন বাস টার্মিনালটি পেয়েছি। এটি পুরোপুরি চালু হলে যানজট অনেকটা কমে যাবে। তখন দুর্ভোগও অনেকটা কমে আসবে।’
সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজী মইনুল ইসলাম জানান, এ বাস টার্মিনালে আমাদের আশার প্রতিফলন হয়নি। টার্মিনালে বাস রাখার জায়গার তুলনায় বিল্ডিং বেশি হয়ে গেছে। আমাদের হাজারের মতো বাস আছে। টার্মিনালে দেড় শ’ থেকে দু’শর মতো বাস রাখা যাবে। বাকি বাস আগের মতোই রাস্তায় রাখতে হচ্ছে। শুরু থেকে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বলে আসছি, তারা শোনেন নি। এখন আমাদের বলেছেন, পার্শ্ববর্তী ফল মার্কেটের দিকে টার্মিনাল সম্প্রসারণ করে বাস রাখার জায়গা করে দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে টার্মিনালের সব কাজ সম্পন্ন, এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের বিষয়টি রাজনৈতিক ও সামাজিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। যানজট নিরসনের জন্যই এটি করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’