আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার নেপথ্যে
বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনীতির অন্যতম অভিভাবক পুরুষ, প্রয়াত জননেতা পীর হবিবুর রহমান আগরতলা ‘ষড়য্ন্ত্র’ র অন্যতম মূল কারিগর ও এর নেপথ্যের ঘটনাগুলো নিয়ে তাঁর জীবিতাবস্থায়ই ‘এক অজানা সৈনিক’ নামে স্মৃতিচারণ করেছিলেন তাঁর একটি লেখায়। লেখাটি সিলেটের ‘দৈনিক সিলেটের ডাক’ এবং পরবর্তীতে তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত ‘স্মারকগ্রন্থ পীর হবিবুর রহমান’-এ প্রকাশিত হয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে পাঠকদের জন্য ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার নেপথ্যে’- নামে লেখাটি হুবহু প্রকাশ করা হলো।— সম্পাদক
আজিমপুর সদস্য ভবন। সবেমাত্র পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার বাজেট অধিবেশন সমাপ্ত হয়েছে। কাজেই সদস্য ভবন এমপিদের অবস্থানে তখনও টইটুম্বুর। সদস্য ভবনে প্রথম আসতো Morning News পত্রিকা। হকার ছিলো ভীষণ স্মার্ট। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই এসে হাজির। কাগজ বিলি করতে সে কোনদিন সাইকেল থেকে নামতো না। পেডেলে এক পা রেখে আরেক পা সিঁড়িতে দিয়ে যাকেই সামনে পেতো, তাকেই কাগজখানা গছিয়ে উল্টো দিকে দে-ছুট।
১৯৫৮ খ্রীষ্টাব্দ। তারিখটা ছিলো ৭ অক্টোবর। ঘটনাক্রমে সেদিন আমিই ছিলাম সামনে। কাজেই আমাকেই কাগজখানা গছালো। কাগজের কভার পেজে চোখ বুলিয়ে আমারতো চক্ষু ছানাবড়া। কাঠের খোদাই ইয়া বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘Martial Law Promulgated throughout Pakistan. Constitution abrogated’. এবার আর কি পড়ার আছে? কাগজখানা সদস্য ভবনের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত ঘুরেই চললো। আর সঙ্গে সঙ্গে Follow-up এমপি সাহেবদের বাধাই-ছাদাই এর ধুম পড়ে গেলো। সকাল ৯টার ভেতরে সদস্য ভবন একদম খালি। এরমধ্যে আমি কি যেন কিনতে নিউ মার্কেট গিয়েছিলাম। পথে দেখা রিকসায় সওয়ার আমার রুমমেট বাগের হাটের শেখ আব্দুল আজিজের সঙ্গে। আমাকে দেখেই ডেকে বললো, ‘দোস্ত টেলিগ্রাম এসেছে গিন্নী সিরিয়াস। তাই চললাম।’ আমি মনে মনে ভাবলাম, ভাগালু সেপাইরা এমনি করেই বাহানা আবিস্কার করে। মার্শাল্ল জারিতে দেশবাসী কী হারালো, সে হিসেবতো পরের কথা। আমরা এমপিরা হলাম লেজকাটা।
আমি ছিলাম সদস্য ভবনের উত্তর প্রান্তে। দুদিন পরে একদঙ্গল ইপিআর এসে উত্তর প্রান্ত দখলে নিলো। কেয়ারটেকারের কথায় আমি দক্ষিন প্রান্তে স্থানান্তরিত হলাম। এখন এই সদস্য ভবনের মরু বিতানে আমি একাই পড়ে রইলাম। আমারত আর ধারে কাছে যাওয়ারও কোন ঠাঁই ছিলোনা।
৪/৫ দিন পর করাচী থেকে শরফুদ্দিন সাহেব এলেন ঢাকায়। তাঁর আস্তানা ছিলো ‘হোটেল গ্রীন’। তিনি আমাকে সেখানে চলে যেতে তাড়া লাগালেন। আমি তাঁর খরচ বাড়াতে রাজি হইনি। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। আমাকে একা থাকতে দেবেননা। আমি বললাম, ‘তাহলে আপনিই চলে আসেন সদস্য ভবনে।’ অগত্যা তিনি চলে আসেন।
শরফুদ্দিন সাহেব আসার পর প্রতিদিন সকালে মোয়াজ্জেম সাহেবও সদস্য ভবনে আসতে লাগলেন। তাঁর ছিলো গাড়ী। সেই গাড়ীতে করে আমরা শহরে বন্ধু-বান্ধবদের বাড়ীতে যাওয়া আসা করতাম। যেমন প্রফেসর মোজাফফর আহমদ, আতাউর রহমান, শেখ মুজিবুর রহমান, ডা: টি আলী, আব্দুল খালেক (যশোর) প্রমূখের বাড়ীতে। একদিন মোয়াজ্জেম আহমদ সাহেব U.S.A News and World Report নামক একটা ম্যাগাজিন নিয়ে এলেন। তাতে প্রথম প্রবন্ধখানার শিরোনাম ছিল Whither Pakistan. লেখকের নাম ছিল সি সি মার্শাল। সি সি মার্শাল-এর পরিচিতি দেয়াটা প্রয়োজন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে দিনের বেলা প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন বরখাস্ত হলেন এবং ওয়াশিংটনস্থ পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত বগুড়ার মোহাম্মদ আলী উড়ে এসে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করলেন। বগুড়ার মোহাম্মদ আলীর সফর সঙ্গী ছিলেন উক্ত মি. সি মার্শাল। সি সি মার্শাল পদ পেলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং তিনি তখন থেকে ফিরোজ খান নুনের প্রধানমন্ত্রীর আমল পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। মার্শালল’র পরে তার এই পদ বিলোপ পায় এবং তিনি দেশে ফেরত যান। মোয়াজ্জেম সাহেব আমাকে ওই প্রবন্ধ পাঠ করতে দিলেন।অতি সহজ ইংরেজিতে লেখা প্রবন্ধ খানা সাধারণ ইংরেজি জানা যে কোন লাকেই বুঝতে পারবে।আমি প্রবন্ধ খানা পড়লাম। তাতে মূল প্রতি পাদ্য বিষয় ছিল পাকিস্তান শুধু হাজার বারশ মাইলের ভৌগোলিক ভাবে বিচ্ছিন্ন দুটি অঞ্চল নিয়েই গঠিত নয়, এর দুটি অঞ্চলের জনগণের খাওয়া-পরা থেকে শুরু করে জীবন যাপনের কোন ক্ষেত্রেই কোন মিল নেই। এই যে, সর্বক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন দুটি অঞ্চলকে নিয়ে একটি রাষ্ট্র টিকে ছিল, তা ছিল একমাত্র পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের বন্ধনের মহার্ঘ। তিনি উপসংহারে যে কথা বলেন, এখানে তার ভাষাতেই তা উল্লেখ করছি, ‘Bridge between East & West Pakistan was parliamentary democracy. When parliamentary democracy goes, bridge between East & West Pakistan goes.’ মোয়াজ্জেম সাহেব আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার পড়া হয়েছে? আমি বললাম, হ্যা।’আপনার মত কী বলুন।’ আমি বুঝে নিলাম, মোয়াজ্জেম সাহেব সি সি মার্শালের ভাষ্য মতে ‘স্বাধীন বাংলা গঠনের বিষয়ে আমার মত জানতে চান। আমি প্রথমে বললাম, ‘আপনি বাংলাদেশ স্বাধীন করতে চান? এটাতো একটা বিশাল ব্যাপার। প্রচুর সেপাই-সান্ত্রী, রসদ-পত্র, অনেক কিছুই লাগবে।’ পরক্ষণেই আমার মাথায় আরেকটা চিন্তা উঁকি দিল। ‘হ্যা, যদি ভারত আমাদের সাহায্য করে তা হলে অনেক সহজেই বাংলাদেশ স্বাধীন করা যায়। কিন্তু চালাতে পারবেন না।’ একথা শুনে মোয়াজ্জেম সাহেব ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। অনেকক্ষণ তিনি তার বিক্ষোভের উদগার করে তারপর থামলেন। সেদিন থেকেই মোয়াজ্জেম সাহেব আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন এবং গাড়ি নিয়েও আর সদস্য ভবনের ভিতরে আসেন না। তখন তিনি গাড়ি নিয়ে ইডেন কলেজের পাশের রাস্তায় থেমে ভেঁপু বাজাতেন। আমরা তা শুনে গিয়ে গাড়িতে উঠতাম। পরে শুনলাম, মোয়াজ্জেম সাহেব তার কিছু বন্ধু-বান্ধব জুটিয়েছেন যারা তার মতোই স্বাধীন বাংলা গঠনে ঐকমত্য পোষণ করেন। মি. মার্শালের এই প্রবন্ধটি, সচিব শফিউল আজমের মেশিনে দশ হাজার কপি ছাপিয়ে দেশের সর্বত্র বিলি করছেন। পরবর্তী সময়ে মোয়াজ্জেম সাহেবরা ‘বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট’ নামে একটি সংগঠন গোপনে গঠন করেন। আমাকে একবার এসে অনুরোধ করলেন ছাত্র ইউনিয়নের ভিতরে একটি গ্রুপ গঠন করে দেওয়ার জন্য, যারা স্বাধীন বাংলা ফ্রন্টের পোস্টারিং, লিফলেটিং ইত্যাদি কাজকর্ম করবে। আমি এই ব্যাপারে ছাত্র ইউনিয়নের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। উনারা বললেন, আমরা এই স্বাধীন বাংলা ফ্রন্টের প্রজেক্ট সমর্থন করি না। অতএব, আমাদের তরফ থেকে সাহায্য-সহযোগিতার কোন প্রশ্নই উঠে না। দেশভাগের পূর্বে মোয়াজ্জেম সাহেব ছিলেন কলকাতার একজন তুখোড় ছাত্রনেতা। তিনি ‘৪৩ থেকে দেশভাগ পর্যন্ত কলকাতা সিটি মুসলিম ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিলেন। তাঁর বাড়ি ছিল নবীগঞ্জ থানার পানিউন্দা গ্রামে। পিতা দেওয়ান আব্দুর রহিম চৌধুরী দীর্ঘকাল সিলেটের পি পি ছিলেন। মা জোবায়দা খাতুন চৌধুরী আসাম প্রদেশের মুসলিম মেয়েদের মধ্যে প্রথম, যিনি আইন অমান্য আন্দোলন করে কারাবরণ করেন। কলকাতার ছাত্রনেতা হিসেবে মোয়াজ্জেম সাহেবের অসংখ্য বন্ধু-বান্ধব ছিল, যাদের অনেকেই পাকিস্থানে সামরিক-বেসামরিক চাকুরিতে উচ্চপদে আসীন ছিলেন। তিনি এদের মধ্যে স্বাধীন বাংলা আন্দোলনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে উদ্যোগী হলেন। পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর হেডকোয়াটার পিন্ডি। সেখানে বাঙালি সেনা অফিসারদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য মোয়াজ্জেম সাহেব তার মা জোবায়েদা খাতুনকে পিন্ডিতে বোনের বাসায় পাঠিয়ে দেন। তাঁর বোনের স্বামী ছিলেন মেডিকেল কোরের কর্নেল এম. হক। সর্বজন শ্রদ্ধেয় কর্নেল ওসমানী সাহেবও এই উদ্যোগের সহযোগী ছিলেন। মোয়াজ্জেম সাহেবরা গাড়িতে বিশ্ব ভ্রমণের নাম করে একবার বিদেশ যাত্রা করেন। সম্ভবত সেটা ছিল ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ। এই গ্রুপে কারা ছিলেন সঠিক নামধাম আমার জানা নেই। সম্ভবত এই গ্রুপে মোয়াজ্জেম সাহেব, শরফুদ্দিন সাহেব, শেখ নাসের (নারায়নগঞ্জ), জাহাঙ্গীর কবির (ফরিদপুর) ও অন্যরা ছিলেন। এ যাত্রা তারা আমেরিকা, রাশিয়া, গ্রেট ব্রিটেন, চীন ও ভারতসহ কয়েকটি দেশ সফর করেন। উদ্দেশ্য ছিল সাহায্য প্রার্থনা। একমাত্র চীন ছাড়া অপরাপর দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সাহায্য সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দান করে। চীন সরাসরি বলে দিয়েছিল, আমরা পাকিস্তানের ঐক্য সংহতির পক্ষে। তারা যেসব দেশ সফর করেন, তাদের কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন এ আন্দোলনে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সংযুক্ত করা হয়। আমি শুনেছি, একবার কৌশল করে অন্তরীণাবদ্ধ মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে মোয়াজ্জেম আহমদ ও শরফুদ্দিন সাহেব দেখা করেছিলেন। মাওলানা তাদের বলেন যে, মাহমুদাবাদের রাজা সাহেবের মারফত আইয়ুব খানের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব সাধিত হয়েছে। তিনি আর কোন হট্টগোলে জড়িত হতে রাজি নন। একথায় মোয়াজ্জেম সাহেব নাকি চটে গিয়ে ভাসানীকে বলেছিলেন, ‘আপনিত ‘৫৭ খ্রিস্টাব্দে কাগমারি সম্মেলনে পশ্চিম-পাকিস্তানকে আসসালামু আলাইকুম বলেছিলেন। জাতির প্রতি কি আপনি সেদিনকার ওয়াদা আজ ভঙ্গ করবেন? মোটকথা মাওলানার সাথে আলাপ করে কোন ফলাফল হয়নি। মাওলানাকে দলভুক্ত করতে না পেরে মোয়াজ্জেম সাহেবরা নুরুল আমিন, আবু হোসেন সরকার, হাজী মো: দানেশ এবং মাহমুদ আলীর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। কেউই তাদের ডাকে সাড়া দেন নি। অগত্যা তারা শেখ মুজিবের শরণাপন্ন হন। শেখ সাহেব তাদের সাথে ঐকমত পোষন করেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে আমি শরফুদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করতে যাই। শরফুদ্দিন সাহেব আমাকে কার কার সাথে দেখা করতে চাই জিজ্ঞেস করলেন। আমরা দু’জন প্রথমে শেখ সাহেবের সেগুন বাগিচার বাসায় যাই। মুজিব ভাই আমাদের দুজনকে দেখে খুব খুশি হলেন। তবে বললেন, “তোমাদের সাথে তো খোলাখুলি আলাপ করা যাবে না, আমার চারদিকে গোয়েন্দারা ঘুরছে। তবে একটা কাজ করা যায়। চারতলা ছাদের উপর আমরা চলে যেতে পারি। সেখানে কেউ কান লাগাতে পারবে না। ঘরের কর্মচারী ছেলেটাকে ফরমাইশ করলেন, ছাদের উপরে চারখানা চেয়ার আর একটা টেবিল নিয়ে যেতে। সেখানে চা-নাস্তা দিতে এবং বেগম সাহেবাকেও সেখানে যাওয়ার জন্য বলতে কর্মচারীটিকে অনুরোধ করলেন। মুজিবভাই সেদিন আমাদের দু’জনের কাছে অনেক দুঃখের কথা বলেছিলেন। এখানে সেসব কথার অবতারণা করে আমি কাউকে বিপর্যস্ত করতে চাইনা। তবে একটি কথা শরফুদ্দিন সাহেবকে সম্বোধন করে বারে বারে বলেছিলেন, ‘চৌধুরী সাহেব, আমি হবিবদের মতো আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে পারবো না। আমাকে লোকে এত বেশি চিনে, আমার জন্য লুকিয়ে থাকা মুশকিল। সেকথায় আমি সেদিন কান দেই নাই এবং উহার মর্মও বুঝি নাই। ঢাকা থেকে সিলেট ফিরে যাওয়ার পথে আমি গ্রেপ্তার হয়ে যাই। এবং আমাকে ঢাকা জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখানে আসার পর ইন্টারগেশনের জন্য লালবাগে ডিআইবি সেন্টারে নেওয়া হয়। আমার সঙ্গে প্রথম দেখা করেন এসএসপি মুজিব। ‘আপনাকে অ্যারেস্ট করায় আপনাদের সিলেটের ডিএসবি (ডিআইবি) খুব গোস্বা করেছেন। তিনি আমার ছাত্র জীবনের বন্ধু। কয়েকদিন আগে ঢাকায় এসেছিলেন এবং আমাকে বকাবকি করে গেছেন। তবে আপনার সম্পর্কে আমাদের কিছুটা ডাউট সৃষ্টি হয়েছে। আপনার সঙ্গে আলাপে যদি সেটা দূর হয় তবে আপনিও বাঁচেন আমরাও বাঁচি’।জিজ্ঞাসাবাদকালে বোঝা গেল, আমি কলকাতা গেছি, সেখান থেকে স্বাধীন বাংলার লিফলেট ছাপিয়ে এনে দেশে বিলি করেছি এই ছিল আমার প্রতি মূল অভিযোগ। আমি এর কিছুই জানতাম না। জেল থেকে বের হওয়ার পর শুনলাম মোয়াজ্জেম সাহেব প্রচুর পোস্টার এবং লিফলেট নিয়ে আমার ঘনিষ্ঠতম বন্ধু হামিদ সাহেবের হাতে সোপর্দ করেছিলেন বিলির ব্যবস্থা করার জন্য। আমি জেলে থাকার সময় জনাব শহীদ সোহরাওয়ারর্দী করাচিতে গ্রেপ্তার হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে। তখন ছিল ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ। আইয়ুব মার্শাল ল’ জারির পর এটাই ছিল ঢাকায় প্রথম মার্শাল ল’ ভাঙার ঘটনা। ‘৬২ খ্রিস্টাব্দেই একদিন জেলখানায় খবর রটে গেল যে শেখ সাহেব গ্রেপ্তার হয়ে জেলে এসেছেন। আমাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগল : অন্য কোন রাজনৈতিক নেতা জেলে আসেন নাই, অথচ শেখ সাহেব একাই জেলে এলেন, ব্যাপারখানা কী?
আমার মনে প্রশ্ন জাগলো, ছাত্ররা যে মার্শাল ল’ ভেঙে মিছিল করেছিল শেখ সাহেব তার সাথে জড়িত ছিলেন কি না? ওই সময় প্রচুর ছাত্র ওই মিছিলে যোগদানের কারণে গ্রেপ্তার হয়েছিল। আমি জেল গেটে রনো, মেনন প্রমুখের সাথে কথা বললাম। তাদের জবাব ছিল, শেখ সাহেব এতে মোটেই জড়িত ছিলেন না। ফলে, আমাদের মনের প্রশ্ন মনেই থেকে গেল। আমি ৬২ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে জেল থেকে খালাস পেলাম এবং বের হবার পর আমার মনের প্রশ্নের জবাব পেলাম। মোয়াজ্জেম সাহেবরা পরিকল্পনা নিলেন, লন্ডনে একটি স্বাধীন বাংলা রেডিও স্টেশন স্থাপন করবেন। এই স্টেশন পরিচালনার জন্য শেখ সাহেবকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেবেন। শেখ সাহেবকে লন্ডনে পাঠানোর রুট হলো ঢাকা-সিলেট-আগরতলা-দিল্লি-লন্ডন। সেই শেখ মোতাবেক শেখ সাহেবকে ছদ্ম পোষাক পড়িয়ে মোয়াজ্জেম সাহেব ও শরফুদ্দিন সাহেব ঢাকার তেজগাঁ এয়ারপোর্ট থেকে সিলেট সালুটিকর এয়ারপোর্টে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে কুমারপাড়াস্থ শরফুদ্দিন সাহেবের বাসায় এবং সেখান থেকে রাত ৯টার ট্রেনে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে নামিয়ে দেন। সঙ্গে থাকেন শরফুদ্দিন সাহেব। শরফুদ্দিন সাহেব রাজঘাট বাগানের জেনারেল ম্যানেজার ক্যাপটেন (অব.) মোতাহের উদ্দিনের বাসায় শেখ সাহেবকে নিয়ে যান। আর মোয়াজ্জেম সাহেব ওই ট্রেনেই ঢাকা ফিরে যান তাদের কন্ট্রাক্টম্যানকে এই বার্তাটি দেওয়ার জন্য। শেখ সাহেব রাতে মোতাহের উদ্দিনের বাসায় থেকে পরদিন অতি ভোরে তার জীপ চড়ে শরফুদ্দিন সাহেব ও অপর একজন লোকসহ সীমান্ত ক্রস করে ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর শহরে এক ভদ্রলোকের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ব্যবস্থা ছিল, সেখান থেকে এক লোক এসে শেখ সাহেবকে আগরতলা নিয়ে যাবে। সেখান থেকে তিনি দিল্লি যাবেন এবং দিল্লি থেকে এয়ার ইন্ডিয়ায় লন্ডন যাবার ব্যবস্থা হবে। শরফুদ্দিন সাহেব কমলপুর থেকে ফিরে আসেন। মোয়াজ্জেম সাহেবের ঢাকায় যোগাযোগকারী যে লোককে খবর দেওয়ার কথা ছিল তাকে অনবরত তিনদিন খোঁজ করে তিনি ধরতে পারেন নি। আসলে ওই বেচারার ফ্লু হয়েছিল। চতুর্থদিন তাকে পেলেন এবং বার্তাটি পৌঁছালেন। এদিকে আগরতলাতে শেখ সাহেবের কমলপুর অবস্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ে। ডিসি, এসপিরা গিয়ে তাকে আগরতলা নিয়ে আসেন এবং তৃতীয়দিন পর্যন্ত তার বিষয়ে কোন প্রকার সংযোগ না পেয়ে তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে লঞ্চের সাহায্যে আখাউড়া রেলস্টেশনে পৌঁছে দেন। এদিকে শেখ সাহেবকে হারিয়ে তার ওয়াচম্যান বেচারার চাকরি যায় যায় অবস্থা। শেখ সাহেব যখন বাসায় পৌঁছলেন, তখন বেচারা মরা ধানে পানি পেল। দ্বিরুক্তি না করেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খবর দিল। ওপরওয়ালারাও আর হেলায় সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে শেখ সাহেবকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেন। এর কিছুদিন পরেই শরফুদ্দিন সাহেব ইন্তেকাল করেন। মোয়াজ্জেম সাহেব ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে কনভেনশন মুসলিম লীগের নমিনেশন গ্রহণ করে বাড়িতে গিয়ে তার আম্মাকে খবর দিলেন। তার আম্মা এ খবর শুনেতো ফায়ার। তিনি ছিলেন প্রগতিশীল চিন্তাবিদ একজন রাজনীতিবিদ। তিনি সেদিন মোয়াজ্জেম সাহেবকে বলেছিলেন, আমি যদি তুমার ভূমিষ্ঠকালে জানতাম আমার গর্ভ থেকে একটি কুলাঙ্গার জন্ম নিচ্ছে, তখনই আমি তুমাকে গলাটিপে হত্যা করতাম। মোয়াজ্জেম সাহেব হেসে বলেছিলেন, “আম্মা, তুমাকে আমি বুঝাতে পারব না। তুমি হবিব মিয়াকে খবর দিয়ে এনো, তিনি সব বুঝিয়ে বলবেন। আম্মার সাথে আমার পরে দেখা হয়েছিল। তখন আমি তাকে মোয়াজ্জেম সাহেবের নমিনেশন গ্রহণের তাৎপর্য বুঝিয়ে বলেছিলাম। মোয়াজ্জেম সাহেবদের চতুরালি ছিল, কনভেশন লীগে এম এন এ-এর তকমা নিয়ে স্বাধীন বাংলার প্রস্তুতি কর্মকান্ডের পক্ষে নিরাপদভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া। সেজন্যই এই সুযোগ নেওয়া হয়েছিল। আমি মোয়াজ্জেম সাহেবদের বাড়িতে কলেজ জীবনে জায়গীর ছিলাম। আম্মা আমাকে পুত্রবৎ স্নেহ করতেন। আমার বক্তব্য শুনে তিনি আশ্বস্ত হয়েছিলেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে কামালউদ্দিন ও অপর একজন নৌ-বাহিনীর কর্মচারী গ্রেপ্তার হলেন। গুপিবাগের শিল্পপতি কে.জি. আহমদের ছেলে মতি আমাদের ন্যাপ পাটি করতো। সে এসে প্রথমে আমাকে এই খবরটি দেয়। ওই দিনই আমি ন্যাপের পেশোয়ার সম্মেলনের জন্য চাঁদা তুলতে মোয়াজ্জেম সাহেবের বাসায় যাই। তিনি মাঝে মধ্যে আমাদের চাঁদা দিতেন। সেদিন চাঁদা না দিয়ে তার ছোটভাই শফিকে এপ্রোচ করতে বলেন। আর আমাকে বলেন, আমাদের উপর একটা মারাত্মক মামলা দায়ের হতে যাচ্ছে। আমার নিজের অনেক টাকার, এমনকি কোটি টাকারও বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে। তার উল্লেখিত সেই মামলাটিই পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে দায়ের হয়। আমি তাঁর কথাবার্তায় কিছু অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করি। তার সাথে গাড়িতে করে একটি বাড়িতে যাই। ওই বাড়িতে ঢোকার সময় তাঁর গাড়ি একটি পিলারে ঠেস খেল। এটাও আমার কাছে সংগতিবিহীন মনে হল। সেখান থেকে বেরিয়ে দেখলাম রাস্তা একদম ফাঁকা। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব তখন এই পথ দিয়ে যাবেন। মোয়াজ্জেম সাহেব যখন গাড়ি চালিয়ে তোপখানায় আমাকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য থামলেন, তখন একদঙ্গল আমলা ও পুলিশ গাড়িটি ঘিরে ফেলে। এর মধ্যে ঢাকার ডিসি, এসপিরাও ছিলেন। আমি তখন তাদের বললাম, উনি মোয়াজ্জেম আহমদ চৌধুরী, কনভেনশন লীগের এম এন এ, তখন সবাই সরে গেল এবং উনি গাড়ি চালিয়ে চলে গেলেন। কামাল উদ্দিনের গ্রেপ্তারের পরে আরও গ্রেপ্তার চলতে থাকে। গ্রেপ্তারকৃতদের উপর অমানবিক, বর্বরোচিত অত্যাচার চলে। এমনকি পায়ুপথ দিয়ে বরফের টুকরো ঢুকানো হয়। এই জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য ন্যাপ অফিসে একটি বৈঠক হয় এবং বিবৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। এই বিবৃতি প্রদানের ব্যাপারে হাউস দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদলের মত হলো যার নামে বিবৃতি যাবে, তাকেই গ্রেপ্তার করে ক্যানটনমেন্টে নিয়ে যাবে। ন্যাপ সেক্রেটারি সৈয়দ আলতাফ হোসেন তখন জেলে। আমি ছিলাম ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। শেষ পর্যন্ত বিবৃতি দেওয়া না দেওয়ার ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত হয়। আমি বিবৃতি দিয়েছিলাম এবং সেটিই ছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার উপর একমাত্র বিবৃতি। আর ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রলীগ জগন্নাথ কলেজ থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সেটিই ছিল একমাত্র প্রতিবাদ মিছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পরিচালনার দায়িত্ব তৎকালীন জাদরেল ফৌজদারি আইনজীবি আব্দুস সালাম খানের উপর ন্যস্ত হয়। মামলা পরিচালনার ব্যাপারে সালাম খানের বাসার প্রতিদিন সন্ধ্যায় বৈঠক বসত। একদিন সালাম খান মামলার আরজি পাঠ করে বললেন, আরজিতে একখানা জিপ ষড়যন্ত্রকারীদের বাহন হিসাবে কাজ করত বলে ধরা পড়েছে এবং উল্লেখ আছে যে জিপখানা জনৈক এম এন এ-র। সালাম খান বললেন যে, আমি জেরা করে ওই জিপের মালিক ছদ্মবেশী এম এন এ-র নাম বের করে আনব।’ আমি একথা শুনে আতঙ্কিত হলাম। বৈঠক শেষে সালাম খান সাহেবকে আলাদা নিয়ে তাকে বুঝিয়ে বললাম যে, এই জিপটির মালিক হচ্ছেন মোয়াজ্জেম আহমদ চৌধুরী এম এন এ। তিনি হচ্ছেন স্বাধীন বাংলা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা। তিনি যেহেতু কনভেনশন লীগের এম এন এ, পার্টির গায়ে দুর্নাম লাগার ভয়ে উনাকে তারা কাঠগড়ায় দাঁড় করায়নি। সালাম সাহেব বুঝতে পারলেন। একই ভাবে তারা কর্নেল ওসমানিকে সংশ্লিষ্ট জেনেও তার উপর মামলা রাজু করে নাই। কারণ ওসমানির উপর মামলা করলে বাঙালি সৈনিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সিংহভাগ খরচ বহন করতে গিয়ে মোয়াজ্জেম সাহেব তাঁর জীবনের সঞ্চয়ের প্রায় সবকিছুই খরচ করে ফেলেন। আমার সাথে মোয়াজ্জেম সাহেবের যখন ছাত্র ইউনিয়নের একটি গ্রুপ তৈরির আলোচনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, তার কিছুকাল পরে মাওলা নামে একজন ছাত্রলীগ কর্মীর মারফত ছাত্রলীগে ওই উদ্দেশ্যে একটি গ্রুপ গঠিত হয় বলে আমার ধারণা জন্মেছিল। এই গ্রুপটি পরে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল যারা প্রত্যক্ষভাবে বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্টের সহযোগী সংগঠন হিসাবে কর্মকান্ড পরিচালনা করে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের পহেলা মার্চ আমি সিলেটে ছিলাম। তিনটার রেডিও-র খবরে জানা গেল গণপরিষদের ধার্যকৃত তিন তারিখের অধিবেশন স্থগিত হয়ে গেছে। আমার তখন টনক নড়ে গেল। আমার উপলব্ধি হলো যে, আবার স্বাধীন বাংলা গ্রুপ তথা মোয়াজ্জেম সাহেবদের হাতে বাংলার নেতৃত্ব চলে যাবে এবং দেশ এক ভয়াবহ লঙ্কাকান্ডের সম্মুখীন হবে। আমি রওনক চৌধুরীকে বিকেলের ফ্লাইটের টিকিট সংগ্রহের জন্য বললাম। রওনক চৌধুরী দু’খানা টিকিট নিয়ে আমার কুমারপাড়ার অস্তানায় হাজির হলেন। আমাদের প্লেন ঢাকায় এসে শহরের ওপর একটি চক্কর দিল। উপর থেকে দেখে মনে হল ঢাকার প্রত্যেকটি রাস্তায় মিছিল আর মিছিল চলছে। সেই রাত্রে আমি আমাদের মেসে না গিয়ে রওনকের ১৮ নম্বর ধানমন্ডির বাসায় থেকে গেলাম। একসময় রওনক এসে আমাকে বলল, আসম রব তার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে রওনকের কাছে এসেছে। উদ্দেশ্য দুটি। ১. রওনকের বন্ধু রতীশ চৌধুরীকে কলকাতায় পাঠানো। রতীশ চৌধুরী সেখানে গিয়ে অস্ত্র সংগ্রহের ব্যবস্থা করবে। ২. রওনককে তার বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে দেওয়া। রবের কথায় আমি একটু উল্লসিত হলাম। আমি স্থির নিশ্চিত ছিলাম রবরা তথা সিরাজুল আলম খান গ্রুপ মোয়াজ্জেম সাহেবদের ডাইরেক্ট গাইডেন্সে রয়েছে । অতএব গণপরিষদ স্থগিতের পরবর্তী পরিস্থিতিতে মোয়াজ্জেম সাহেবদের লাইন কি, রবদের কাছ থেকে বুঝা যাবে বলে আমার ধারণা ছিল। আমাকেতো রব তার মনের কথা বলবে না। রওনক তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসমেট। তার কাছে বলতেও পারে। রবদের অবস্থান বোঝার জন্য আমি রওনককে শিখিয়ে দিলাম, রবকে জিজ্ঞেস কর, এখন শেখ সাহেব যদি ভুট্টোদের সঙ্গে ৬ দফার ব্যাপারে কোন সমঝোতায় অবতীর্ণ হন তখন তারা কী করবে?’ রওনক রবকে সেকথা জিজ্ঞেস করেছিল। উত্তরে রব বলেছিল, ছয় দফায় দাড়ি-কমা নিয়েও কোন আপস হবে না। শেখ সাহেব যদি কোন আপস করেন বা করতে চান, তাহলে আমরা তাকে ন্যাংটো করে ছেড়ে দেব। আমি আমার উত্তর পেলাম। মোয়াজ্জেম সাহেবের সাথে আমার পরবর্তীকালে কলকাতায় দেখা হয়। তিনি পঁচিশে মাচের কয়েকদিন আগে কলকাতা চলে যান। যাওয়ার আগে রাশিয়ান এম্বেসির সঙ্গে সেখানে যোগাযোগের পন্থা সম্পর্কে আলোচনা হয়। এম্বেসিওয়ালারা তাকে তারিখ দিয়েছিল। ওই তারিখে মোয়াজ্জেম সাহেব লুঙ্গি পরে মাথার উপর ছাতা নিয়ে একটা সময়ে গড়ের মাঠের পাশের রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করবেন। ওইখান থেকে রাশিয়ানরা তাকে কালেক্ট করবে। ওই কথামতো তিনি প্রথমদিন অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেন। কিন্তু কারও কোন সাড়া পাওয়া গেল না। ওই সময়ে পরদিন তিনি আবার হাঁটাহাঁটি করেন। ওই দিনও ব্যর্থ। তৃতীয় দিন আবার তিনি একই রকম করলে তাকে কালেক্ট করা হয়। তার ধারণা ভারত, রাশিয়া, আমেরিকাসহ যেসব দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, একমাত্র আমেরিকাই বিট্রে করেছে। অন্যরা সর্ব প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করেছে।
মুজিব নগর সরকার গঠনের আগে তাজ উদ্দিন সাহেবকেও তিনি ভারতীয় ও রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে সংযোগের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
২রা আগষ্ট’ ২০০২ তারিখ রাত সাড়ে ৮টায় মোয়াজ্জেম আহমেদ চৌধুরী বোন হাসান বেগমের বাসায় প্রায় ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।