‘আপিল শুনানির আগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের অভিযোগ সঠিক নয়’

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ বাংলাদেশে একটি হত্যা মামলায় আপিল নিস্পত্তির হওয়ার আগেই দু’জন আসামীর ফাঁসি কার্যকরের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির কারা কর্তৃপক্ষ।২০১৭ সালে যশোর কারাগারে ওই দুই ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিলো।কিন্তু আজ বুধবার ওই দুই ব্যক্তির একজনের আইনজীবী অভিযোগ করেন যে তার করা আপিল আবেদনের নিষ্পত্তির আগেই ফাঁসি কার্যকর করেছে কর্তৃপক্ষ।এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড়েরর মধ্যে রাতে কারা কর্তৃপক্ষ জানায় ফাঁসি কার্যকরের আগে নিয়ম অনুযায়ী সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।চুয়াডাঙ্গার একটি হত্যা মামলায় জেলার আলমডাঙা উপজেলার দুল্লুকপুর গ্রামের মোকিম ও ঝড়ুকে ২০০৮ সালে স্থানীয় আদালত ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলো, যা বাকী আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১৭ সালে কার্যকর করা হয় বলে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে।মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোকিমের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনা করছেন আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।তিনি বলেছেন, দীর্ঘ সময় পর আগামী সপ্তাহে শুনানির জন্য আপিল আবেদন কার্যতালিকায় এসেছে গত সোমবার।এরপর তিনি শুনানির প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বেশ কয়েক বছর পর তার মক্কেলের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন।

আইনজীবী মি: কবির উল্লেখ করেছেন, যোগাযোগ করার পর তিনি জানতে পারেন যে, চার বছর আগে ২০১৭ সালে যশোর কারাগারে মোকিম এবং ঝড়ু-দু’জনেরই ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
“আপিল আবেদন বুধবার শুনানির কার্যতালিকায় ১১ নম্বরে ছিল। কিন্তু বুধবার শুনানি হয়নি। আগামী সপ্তাহে শুনানি হতে পারে। কিন্তু আপিল নিস্পত্তি হওয়ার আগে কখনও ফাঁসি কার্যকর করা হয় না,” বলেন মি: কবির।কিন্তু তার এই অভিযোগ সঠিক নয় বলে কারা কর্তৃপক্ষ যে বক্তব্য দিয়েছে, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির দাবি করেছেন, তিনি যে আপিল আবেদন করেছেন, সেটির এখনও নিস্পত্তি হয়নি।যশোর কারাগারে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিলো এবং এ কারাগারটি কারা কর্তৃপক্ষের খুলনা অঞ্চলের আওতায় পড়েছে।সেই খুলনার ডিআইজি প্রিজন্স মোঃ সগির মিয়া বিবিসিকে বলেছেন চূয়াডাঙ্গায় একটি হত্যা মামলায় সেখানকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসির রায় দিয়েছিলো ২০০৮ সালে।এরপর ডেথ রেফারেন্স গিয়েছিলো হাইকোর্টে। সেখানে ২০১৩ সালে মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি বহাল রাখা হয়েছে।

এই কারা কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করার পর মোকিম ও ঝড়ু জেল থেকে আপিল আবেদন করেছিলো। সেটি নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ ২০১৬ সালে দু’জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিলো। এরপর তাদের ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন রাষ্ট্রপতি নামঞ্জুর করেছিলেন।মোঃ সগির মিয়া বলছেন এসব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেই নিয়মানুযায়ী তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিলো।আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন এ ঘটনায় আইনের কোন ব্যত্যয় হয়নি।মোকিমের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেছেন, “জেল আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু আমি যে আপিল করেছি তার নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে বলে আমি মনে করি।যাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে, তাদের মধ্যে মোকিমের স্ত্রী ফারজানা খাতুন এক ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে এখন মেহেরপুর জেলায় তার বাবার বাড়িতে থাকেন। তিনি বলেছেন, তারা দিনমজুর পরিবার, লেখাপড়া জানেন না, ফলে আইনগত বিষয়গুলো তারা বোঝেন নি। ফাঁসি হওয়ার পর তিনি ঘটনা জেনেছিলেন।বিচারের সব কাজ শেষ হওয়ার আগে ফাঁসি হয়া গেছে, এখন তারা (আইনজীবী) বললো। আমি তো এগুলা বুঝি না এবং বলতে পারব না। আমি মুর্খ মানুষ,” বলেন মোকিমের স্ত্রী ফারজানা খাতুন।

You might also like