আফিফের লড়াকু হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ১৯৪ রান
স্পোর্টস ডেস্ক
সত্যবাণী
জোহানেসবার্গ: দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে সফরকারী বাংলাদেশ। সেখান থেকে আফিফ হোসেনের লড়াকু ইনিংসের সুবাদে শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৯৪ রানের সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। ১০৭ বল খেলে ৯টি চারে ৭২ রান করেন আফিফ।জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সতীর্থ লিটন দাসকে নিয়ে আগের ম্যাচে ৯৫ রানের জুটি গড়লেও আজ ব্যর্থ হয়েছেন। ওয়ান্ডারার্সের উইকেটের সুবিধা নিয়ে এ ম্যাচে বাংলাদেশের টপ-অর্ডারকে শুরুতেই মহাচাপে ফেলে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা।
১২ দশমিক ৪ ওভারে ৩৪ রানের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম ৫ উইকেট তুলে নেন দক্ষিণ আফ্রিকার তিন পেসার কাগিসো রাবাদা-লুঙ্গি এনডিদি ও ওয়েন পার্নেল। প্রোটিয়া পেসারদের বাউন্সার সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন তামিম-সাকিবরা।
এনগিদির করা ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হতে গিয়েও বেঁচে যান তামিম। লেগ সাইডে বল ফ্লিক করেছিলেন তামিম। বাতাসে ভেসে যাওয়া বলটি, স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো ফিল্ডার ভেরেনির সামনে ড্রপ হয়। এ যাত্রায় বেঁচে গেলেও, তৃতীয় ওভারে রক্ষা হয়নি তামিমের।
এনগিদির লাফিয়ে উঠা দ্বিতীয় ডেলিভারি সামলাতে পারেননি তামিম। বল তার ব্যাটে লেগে আকাশে উঠে যায়। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সেই ক্যাচ করেন কেশব মহারাজ তালু বন্দি করলে ৪ বল খেলে ১ রান করে আউট হন টাইগার নেতা। তামিমের আউটে ক্রিজে আসেন আগের ম্যাচের হিরো সাকিব আল হাসান। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের বুঝতে সময় নিচ্ছিলেন সাকিব। তবে চতুর্থ ওভারে রাবাদার লেগ সাইডে করা ডেলিভারিটি হালকা বাউন্স করেছিলো, সেটি ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাট-বলের সন্ধি ঘটাতে না পেরে কভারে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব। কভারে ভেরেনি সেই ক্যাচ তালুবন্দি করতে ভুল করেননি। ফলে ৬ বল খেলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১২তম বার খালি হাতে ফিরতে হয় সাকিবকে।
দলীয় ৮ রানে সাকিবের আউটের পর লিটনের ব্যাট থেকে দু’টি বাউন্ডারি আসায় তার কাছ থেকে বড় ইনিংসের প্রত্যাশায় ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু রাবাদার বাউন্সারে কুপকাত হন লিটনও। বাউন্সারের ডেলিভারিটি আপার কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন লিটন। ৩টি চারে ২১ বলে ১৫ রান করে বিদায় নেন তিনি।
লিটনকে হারানোর পর সাবধানী ব্যাটিং শুরু করেন মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলি। পরের ২৮ বলে কোন বাউন্ডারি পায়নি বাংলাদেশ। এরমধ্যে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁেচও যান ইয়াসির।
কিন্তু ১২তম ওভারের শেষ বলের বাউন্সার খেলতে না পেরে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন আগের ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরি করা ইয়াসির। ১৪ বলে মাত্র ২ রান করেন তিনি।
পরের ওভারে মুশফিককে বোকা বানিয়ে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন পার্নেল। ৩১ বল খেলে কোন বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি ছাড়া ১১ রান করেছেন মুশফিক। এতে ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে মহা বিপদেই পড়ে বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় কাউন্টার অ্যাটাক করেন আফিফ হোসেন। ১৪তম ওভারে ২টি চার মারেন তিনি। ১৭ ও ২০তম ওভারেও ১টি করে বাউন্ডারি আদায় করে নেন আফিফ। ক্রিজে আফিফের সঙ্গী মাহমুদুল্লাহ ছিলেন সতর্ক। অবশেষে ২৩তম ওভারে দু’টি চার আসে মাহমুদুল্লাহর কাছ থেকে।
আফিফ-মাহমুদুল্লাহ জুটি যখন ক্রিজে জমে যাচ্ছিলো, তখনই ব্রেক-থ্রু এনে দেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার তাবরিজ শামসি। ২৮তম ওভারে প্রথম বলে লেগ স্লিপে মালানের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মাহমুদুল্লাহ। ৪৪ বলে ৩টি চারে ২৫ রান করেন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ৮৭ বলে ৬০ রানের জুটি গড়েন দলকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন আফিফ-মাহমুদুল্লাহ।
দলীয় ৯৪ রানে মাহমুদুল্লাহর বিদায়, বাংলাদেশকে আবারও চাপে ফেলে দেয়। তবে ক্রিজে আফিফকে দেখে সুখস্মৃতি মনে পড়ে যায় মেহেদি হাসান মিরাজের। খাদের কিনারা থেকে দলকে তুলে সম্প্রতি দারুন এক জয় রচিত করেছিলেন আফিফ-মিরাজ।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের জন্য ২১৬ রানের টার্গেট পেয়েছিলো বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছিলো টাইগাররা। সেখান থেকে ২২৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৭৪ রান তুলে বাংলাদেশকে অবিস্মরনীয় জয় এনে দেন আফিফ-মিরাজ। তাই আরও একবার আফিফ-মিরাজ শো’র অপেক্ষায় ছিলো বাংলাদেশ।
উইকেটের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের সামলে উঠেন আফিফ-মিরাজ। দেখেশুনে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন, খারাপ বল পেলে তবেই মেরেছেন। ৩৭তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলেছেন আফিফ। এজন্য ৭৯ বল খেলেছেন তিনি। উইকেট ধরে খেলাটাই মূল লক্ষ্য ছিলো তার এবং তাতে সফল হয়ে লড়াকু হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন আফিফ।
দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক তেম্বা বাভুমার করা ৪১তম ওভারেই ক্যাচ দিয়ে জীবন পান আফিফ-মিরাজ। আর ঐ ওভারেই দলীয় দেড়শ রান স্পর্শ করে বাংলাদেশ।
আফিফ-মিরাজের জুটিতে লড়াইয়ে ফিরে বাংলাদেশ। এই জুটি ভাঙ্গতে বোলিংয়ে বার বার রপরিবর্তন করেছেন বাভুমা। অবশেষে ৪৬তম ওভারে জুটি ভাঙ্গেন রাবাদাই। ঐ ওভারের তৃতীয় বলে শর্ট মিড উইকেটে বাভুমাকে ক্যাচ দিয়ে থামেন ৭২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলঅ আফিফ। ১০৭ বলের ইনিংসে ৯টি চার মারেন তিনি। আফিফ-মিরাজ সপ্তম উইকেটে ১১২ বলে মহামূল্যবান ৮৬ রান যোগ করেন। সপ্তম উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। আফিফের ফেরার ১ বল পর, মিরাজের বিদায়ও নিশ্চিত করেন রাবাদা। এটি ছিলো তার পঞ্চম উইকেট। ৮৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নেনরাবাদা। প্রথমবার ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ৪৯ বল খেলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৮ রান করেন মিরাজ। ১৮১ রানের মধ্যে আফিফ-মিরাজ আউটের পর শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৯৪ রান করতে পারে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ ৯ ও মুস্তাফিজুর রহমান ২ রানে অপরাজিত ছিলেন। ১০ ওভার বল করে ৩৯ রানে ৫ উইকেট নেন রাবাদা।