আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদনের প্রত্যাশা হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে সিলেটের আমন ধানের মাঠ
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ সিলেটের আমন ধানের মাঠগুলো প্রতিদিন রং বদলাচ্ছে। কোথাও গাঢ় সবুজ থেকে হালকা সবুজ, তার পরে হালকা হলুদাবরণ, শেষে পাকা ধানে মাঠ হলুদবরণ রং ধারণ করছে। আগাম জাতের ধানগুলো ইতোমধ্যেই কাটা শুরু হয়েছে। তবে অনেক স্থানে মাঠ সবুজ থাকলেও ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে হলুদ হয়ে উঠবে। আগামী ২০ থেকে ২২ দিনের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি আমন আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল, পরিমিত বৃষ্টিপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় আমন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে জানান তারা। এদিকে, ধান পাকতে শুরু করায় কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তারা প্রতিদিন গিয়ে ধান দেখছেন, ধান তোলার জন্য অনেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় মোট ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩ হাজার ২৮০ হেক্টর থেকে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর বেশি। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৩ হেক্টর, মৌলভীবাজার জেলায় ১ লাখ ১ হাজার ৬০০ হেক্টর, হবিগঞ্জে ৮৮ হাজার ২৫৮ হেক্টর এবং সুনামগঞ্জে ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এ বছর আমন আবাদ থেকে ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার মধ্যে সিলেটে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন, মৌলভীবাজারে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৬৩ মেট্রিক টন, হবিগঞ্জে ২ লাখ ২০ হাজার ৩৭১ মেট্রিক টন এবং সুনামগঞ্জে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৩৬ মেট্রিক টন চাল।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বিগত বন্যায় আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে আমন ধান পুরোপুরি ঘরে তুলতে কৃষি বিভাগ ব্যাপকভাবে কৃষকদের নিয়ে আমন উৎপাদনে সহযোগিতা করে। কৃষি বিভাগের সার্বক্ষণিক তদারকি ও সহযোগিতায় আমন আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, অনুকূল আবহাওয়া, নিয়মিত এবং পরিমিত বৃষ্টিপাত, পোকার উপদ্রব ও কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দেয়ায় উৎপাদনও বেড়েছে বলে জানান তারা।
তারা আরও জানান, আগাম জাতের ৭৫, ৪৯, ৮৭, বিনা-১৭ ধান পেঁকে গেছে। এসব ধান এখন কৃষকরা কাটতে শুরু করেছেন। তবে ২০ থেকে ২২ দিন পরে ব্যাপকভাবে ধান কাটা শুরু হবে বলে জানান তারা। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার নশিওরপুর গ্রামের কৃষক আবু বক্কর জানান, তিনি এ বছর ২০ কেয়ার (প্রতি কেয়ার=৩০ শতক) জমিতে আমন আবাদ করেছেন। ফসল ভালো হয়েছে। তবে, বন্যার কারণে তারা ধান রোপণে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তাদের ধান এখনো সবুজ রয়েছে। আগামী ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে হাওরের ধান হলুদ হয়ে উঠবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এ বছর সময় মতো বৃষ্টি হওয়ায় ধান ভালো হয়েছে এবং পোকার আক্রমণ ছিলো না। আগামী দিনে কোন দুর্যোগ দেখা না দিলে আশানুরূপ ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের বাগেশ্বর গ্রামের কৃষক আব্দুল মুইজ জানান, এ বছর ৮ কেয়ার জমিতে আমন আবাদ করেছেন। ফসল ভালো হয়েছে। ধান তোলা পর্যন্ত কোন দুর্যোগ না এলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। তবে বাতাসে কিছু ধান পড়ে যাওয়ায় চিটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।এদিকে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সদরপুর গ্রামের কৃষক আনসার মিয়া। তিনি জানান, নিয়মিত পরিমিত বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ বছর আমনের বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে। তার রোপণ করা বিনা-১৪ জাতের ধান থেকে বেশি ফলন পাওয়ার আশা করছেন। যদিও ২৯ জাতের ধানের পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।এদিকে, ধানের ভালো উৎপাদন ও ধান ঘরে তুলতে সহায়তা করতে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক কৃষকদের সাথে মাঠে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, বন্যার কারণে গত আউশ মৌসুমে কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে পারেননি। কৃষি বিভাগ তাদের আমন ধান চাষে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় কৃষকদের অনেকে আউশ ধানের জমিতেও আমন চাষ করেছেন। এতে সিলেট অঞ্চলে আমন আবাদের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ হাজার হেক্টর বেশি হয়েছে। তিনি জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আবাদ ভালো হয়েছে। আর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফসল কৃষকরা ঘরে তুলতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। কৃষকদের সহায়তায় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় মাঠ পরিদর্শন করছেন বলে জানান তিনি।