আলটিমেটামের পরে আন্দোলনের মাঠে চা শ্রমিকরা
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। স্বল্প আয়ে সংসার চালানো এখন বড্ড কঠিন। এরই পরিপেপ্রক্ষিতে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আলটিমেটাম দিয়েছিল চা শ্রমিকরা। ৭ দিনের মধ্যে দাবি মানা না হলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল তারা। তাতে কাজ না হওয়ায় গতকাল ৯ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে আন্দোলনের মাঠে নেমেছে শ্রমিকরা।চা শ্রমিকরা জানান, চা শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। শ্রম আইন অনুসারে চা শ্রমিকদের পক্ষে দর কষাকষি করে এই সংগঠন। সম্প্রতি চা-বাগান মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের সাথে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় শ্রমিক ইউনিয়ন চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, বোনাস প্রদান, ছুটিসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। পরবর্তীতে মালিকপক্ষ মজুরি ১৪ টাকা বাড়নোর প্রস্তাব দেয়। কিন্তু চা শ্রমিকরা এই মজুরি বৃদ্ধিকে ‘পরিহাস’ বলে মনে করছেন।চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা জানান, গত ১ আগস্ট চা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটি ও ভ্যালি কমিটিসমূহের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে চা সংসদে স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। গত ৩ আগস্ট সেই স্মারকলিপি প্রদান করে চা শ্রমিক ইউনিয়ন। সেখানে ৭ দিনের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে ‘গ্রহণযোগ্য সুরাহার’ দাবি জানানো হয়। অন্যথায় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
আলটিমেটামের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছেন চা শ্রমিকরা। কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেছেন তারা। একইসাথে লাক্কাতুরা, মালনিছড়া, খাদিম, কেওয়াছড়া, দলদলি, জাফলং, লালাখালসহ সিলেটের ২৩টি চা-বাগান এলাকায় মানববন্ধন করা হয়েছে। এসব মানববন্ধন কর্মসূচিতে চা শ্রমিক নেতা রাজু গোয়ালা, রতন গোয়ালা, মিন্টু দাস, সবুজ তাতী, সুশান্ত চাষা, রঘু মিয়া, মনোরঞ্জন নায়েক, রতিলাল, নিরঞ্জন গোয়ালা, মহরম আলী, নগেন্দ্র গোয়ালা, মৃত্যুঞ্জয়, ঋতেষ নায়েক, দিলীপ নায়েক, খলিল মিয়া প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চা শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিম্ন মজুরি দিয়ে তাদের সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নে আমরা আহ্বান জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু আমাদের ন্যায্য দাবির প্রতি মালিকপক্ষ কর্ণপাত করেনি। আমরা ৭ দিন সময় দিয়েছিলাম। তাতে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে ন্যায্য সুরাহা না হওয়ায় বাধ্য হয়ে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছি।তিনি বলেন, ‘আগামী ৪/৫ দিন টানা কর্মসূচি চলবে। এরপরও কোনো সুরাহা না হলে শুরু হবে অনির্দিষ্টকালের আন্দোলন।প্রসঙ্গত, চা শ্রমিকরা বর্তমানে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি পান। এর বাইরে তাদেরকে স্বল্পমূল্যে খাবার, চিকিৎসাসেবা ও বাসস্থানের ঘর দেয়া হয়।