আড়াই বছর পর জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালু
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সিলেট করেসপন্ডেন্ট, সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ সিলেটের সবচেয়ে পুরনো জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনের ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে যাত্রী পারাপার পুনরায় শুরু হয়েছে। প্রায় আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর শনিবার থেকে পুনরায় যাতায়াত শুরু হয়। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজে ভারত যাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ইনচার্জ শাহরিয়ার মোর্শেদ চৌধুরী জানান, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পুনরায় যাত্রী পারাপার শুরু হয়েছে। তবে খোলার পরদিন অর্থাৎ রোববার ৩ জন ও সোমবার ৬ যাত্রী পারাপার হয়েছেন। এখন থেকে যাত্রী পারাপার চলমান থাকবে।
মহামারি করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০ সালের ২৩ মার্চ সারাদেশের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলো সরকার বন্ধ করে দেয়। সরকারি নির্দেশনা পেয়ে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পুরোপুরি যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই থেকে এই চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার বন্ধ ছিল। ভারত অংশের ইমিগ্রেশন খোলা থাকায় অনেকেই বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা করতেন। তবে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন খোলা না থাকায় বিকল্প ইমিগ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশীদের দেশে ফিরতে হতো।
এদিকে আমদানিকারকরা জানান, জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনের কয়েক গজের মধ্যেই রয়েছে-জকিগঞ্জ থানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক। অপরদিকে, সীমান্তরেখা কুশিয়ারা নদীর ওপারেই রয়েছে ভারতের জেলা শহর করিমগঞ্জ। সেখানেও নিরাপত্তাজনিত ও যোগাযোগের সকল সুযোগ-সুবিধা হাতের নাগালেই রয়েছে। এজন্যই ব্রিটিশ আমল থেকে জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে। এজন্য কাঁচামাল আমদানিতে এই স্টেশনটি ব্যবহার করেন সিলেট অঞ্চলের আমদানিকারকরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, চিকিৎসা, পড়াশোনা, ভ্রমণ ও ব্যবসার জন্য পাসপোর্টধারী যাত্রীরা ভারত-বাংলাদেশে যাওয়া-আসা করেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ফলে বর্তমানে দেশের সব সীমান্ত পথ খুলে দেয়া হয়েছে। শুধু জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন বন্ধ ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা, সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরাম আলী বলেন, ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর এ স্টেশনের কার্যক্রম চালু হয়। তখন থেকে শুল্ক স্টেশনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে। কিন্তু, ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন বন্ধ থাকায় সিলেট ও ভারতের আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, ত্রিপুরা, অরুণাচল, নাগাল্যান্ডসহ পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে যাতায়াতকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। ভারতে চিকিৎসা নেয়া অসুস্থ লোকজনও এ স্টেশন দিয়ে ভারতে যেতে না পেরে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছিলেন। আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরাও ভারত থেকে মালামাল ক্রয় করে লোকসান গুণছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা আকরাম আলী আরো বলেন, বিষয়টি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েলকে সাথে নিয়ে সিলেটে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনারের সাথে দেখা করে অবহিত করেছিলাম। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। অবশেষে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট খুলে দেয়া হয়েছে।
জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আমিনুল হকও ইমিগ্রেশন চালু হয়েছে বলে জানান। তিনি আমদানি কার্যক্রমে গতি বাড়বে বলে উল্লেখ করেন।