‘ইউকেবিআরইউ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন ব্রিটিশ-বাংলা মিডিয়ার চার সাংবাদিক
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
সত্যবাণী
লন্ডন: সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা পেয়েছেন চার ব্রিটিশ-বাংলাদেশী সাংবাদিক। গতকাল ৭ সেপ্টেম্বর বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউজ কমন্সের কনফারেন্স রুম সি–তে এক অনাড়ম্ভর অনুষ্ঠানে ‘ইউকেবিআরইউ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ হাতে তুলে দিয়ে তাদের এই সম্মাননা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানের হোষ্টেল বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রথম ব্রিটিশ এমপি রোশনারা আলীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে চার সাংবাদিক দৈনিক উত্তর পূর্ব ও ঢাকা টাইমসের লন্ডন প্রতিনিধি মতিয়ার চৌধুরী, সাপ্তাহিক পত্রিকার কন্টিভিউটর হামিদ মোহাম্মদ, সত্যবাণী ডটকমের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সৈয়দা ফেরদৌসি পাশা কলি ও বাংলা মিরর পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মুহাম্মদ শাহেদ রহমানের হাতে ‘ইউকে বিআরইউ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২০ ও ২০২১’ তুলে দেন রোশনারা আলী এমপি।
অনুষ্টানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিষ্টার প্রেস আশিকুন নবী চৌধুরী।
ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রেসিডেন্ট ও ডেইলী স্টারের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি আনসার আহমদ উল্লাহর সভাপতিত্বে সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সেক্রেটারি ও বাংলা সংলাপ পত্রিকার রিপোর্টার মুহাম্মদ সাজিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সাংবাদিকদের জীবনকর্ম পাঠ করেন – রিপোর্টার্স ইউনিটির মিডিয়া এন্ড আইটি সেক্রেটারী স্বদেশ বিদেশ পত্রিকার প্রতিনিধি শাহ রুমি হক। ব্রিটেনে বসবাসরত বৃটিশ–বাঙালি বাংলা ভাষাভাষী সাংবাদিক দীর্ঘদিন ধরে যারা পাঠকদের কাছে সংবাদ সরবরাহ করে কমিউনিটি ও রাষ্ট্রের সেবা করেছেন, সাংবাদিকতার মাধ্যমে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টিতে অবদান রাখছেন সেইসব গুণী, মেধাবী ও সৎ সাংবাদিকদের এই প্রথম ‘ইউকে বিআরইউমিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২০/২০২১’ প্রদান করে ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটি।
প্রধান অতিথি ও এওয়ার্ড অনুষ্টানের হোষ্ট রোশনারা আলী এমপি ৪ গুণী সাংবাদিককে ইউকে বিআরইউ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘বিলেতে বাংলা সংবাদপত্র শতবছর পারি দিয়েছে, এটি আমাদের অহংকারের জায়গা’। তিনি তাঁর বাবা যে, লন্ডনে একসময় বাংলা পত্রিকা সংগ্রহ করে ঘরে নিয়ে এসে পড়তেন, সেই স্মৃতি তুলে ধরেন তাঁর বক্তৃতায়। বাঙালীর সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ব্রিটিশ সোসাইটিতে সঠিক ভাবে তুলে ধরতে সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান।
‘ইউকেবিআরইউ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্তদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিষ্টার প্রেস আশিকুন নবী চৌধুরী বলেন, ‘অবজেকটিভ জার্নালিজম প্রমোট করার জন্য আরো অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত’। তাছাড়া অ্যাওয়ার্ড প্রদানের পাশাপাশি কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য ওয়ার্কশপ , ট্রেনিং ও সেমিনারের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতি তাগিদ দেন তিনি। তাঁর মতে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা অর্জনে ওয়ার্কশপ বা ট্রেনিং এর কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি মেইনস্ট্রিম জার্নালিজমের সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ স্থাপন করারও আহবান জানান মিনিষ্টার প্রেস।
‘ইউকে বিআর ইউ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ প্রাপ্ত বাংলা মিরর পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মুহাম্মদ শাহেদ রাহমান সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অভিমত প্রকাশ করে বলেন– ‘বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানে এই অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি আমার জন্য আন্দদায়ক। অ্যাওয়ার্ড প্রদানকারীদের হৃদয়ের গহীন থেকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের হোস্ট রোশনারা আলী এমপি কে। এই আনন্দময় সময়ে আমার এ্যাওয়ার্ডটি উৎসর্গ করতে চাই আমার কন্যা ও আমার স্ত্রী কে।’
ইউকে বিআর ইউ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২০ প্রাপ্ত প্রবীন সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী বলেন, ‘আমি জীবনে অনেক এওয়ার্ড পেয়েছি। আজকের এওয়ার্ডটি আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান, কারণ হাউজ অব কমন্স থেকে প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশী এমপি রুশনারা আলীর কাছ থেকে এওয়ার্ডটি আমি গ্রণন করেছি, আমি গর্বিত। এ পেশায় আজ দীর্ঘদিন পারি দিয়ে এখন জীবনের শেষ অধ্যায়ে। আমি আমার জীবনে অনেক সম্মাননা পেয়েছি। এই অ্যাওয়ার্ড আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
ইউকে বিআর ইউ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২০ প্রাপ্ত প্রবীন সাংবাদিক হামিদ মোহাম্মদ রিপোর্টার্স ইউনিটির অ্যাওয়ার্ড জুড়িবোর্ড কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন – ‘এই অ্যাওয়ার্ড শেষ বয়সে এসে আমি কাজের স্বীকৃতি সম্মাননা পেলাম এটি আমার জন্য আনন্দের। এরকম এ্যাওয়ার্ড প্রবীণদের না দিয়ে তরুণ সাংবাদিকদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রদান করলে তরুণরা দ্বিগুণ প্রেরণা পাবে।‘
ইউকে বিআর ইউ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১ প্রাপ্ত নারী সাংবাদিক সৈয়দা ফেরদৌসি পাশা কলি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখতাম স্কুল শিক্ষিকা মায়ের টেবিলে সংবাদপত্রের স্তুপ। সেই থেকেইসংবাদপত্র ও সাংবদিকতার প্রতি আলাদা একটি দুর্বলতা। বাবার সাথে একসাথে বসবাসকরবো বলে নিজের শিকড়ভূমি পেছনে ফেলে মা যখন আমাদের নিয়ে চলে আসেন এদেশে, তখন দেখতাম মা দেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি খুব মিস করতেন। নিজেকে নিঃসঙ্গ ভাবার এই সময়ে তাঁর সঙ্গী হয়ে দাড়ায় লন্ডন থেকে প্রকাশিত প্রাচীনতম বাংলা পত্রিকা জনমত। মায়ের সাথে কিশোর বয়সী আমারও যেন সঙ্গী হয়ে উঠে পত্রিকাটি।’
তিনি বলেন, ‘সমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যারা খুঁজে বের করে এনে ছাপার অক্ষরে পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন, তাদের প্রতি আলাদা একটি শ্রদ্ধাবোধ কাজ করতে থাকে নিজের মধ্যে, আকর্ষন অনুভব করি সাংবাদিকতা পেশাটির প্রতি। শুধু তাই নয়, ব্রিটেনে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সংগঠক বাবা যখন তাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়কার সেই উত্তাল আন্দোলনে পত্রিকা গুলোর অবদান শ্রদ্ধার নিয়ে আমাদের সাথে গল্প করতেন, তখন মনে হতো এগুলোতো শুধু ছাপার অক্ষরের পত্রিকা নয়, আমার বাবা প্রজন্মের দুঃসময়ের সাথি, সাহসদাতা। একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্নে বিভোর আমাদের বাবাদের সংগ্রামের কথা ছাপার অক্ষরে পত্রিকায় এনে বিশ্ববাসীকে জানান দিতে যে মানুষগুলো দিনরাত পরিশ্রম করেছে, তাদের অনুসরণ করাতো আমার নৈতিক দায়িত্ব’।
সৈয়দা কলি বলেন, ‘শিকড়ের প্রতি টানের কারনে প্রতি বছর মা দেশে চলে যেতেন আমাদের নিয়ে। ফলে দেশ ও এখানকার স্কুল কলেজগুলোতে সমানতালে শিক্ষা নিতে হয়েছে আমার। ফলে দেশে থেকে যেমন সুযোগ হয়েছে দেশকে জানার, ঠিক তেমনি সুযোগ হয়েছে বাইরে থেকে শিকড়ভূমিকে অনুভব করার। আর এসব কারনেই বারবার আশ্রয় নিতে হয়েছে শিকড় সংস্কৃতির কাছে। নর্থ লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন করার পর চাকুরী জীবনে বিভিন্ন পেশায় দায়িত্ব পালনকালীন সময়ও সম্পর্ক ছিন্ন করিনি বাংলা সংবাদ ও সাংবদিকতার সাথে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত সিলেটের ডাক এ একটি লম্বা সময় কাজ করলেও তৃপ্তি পেয়েছি ২০১৭সালে ব্রিটেনে বাংলা সাংবাদিকতার ঐতিহ্যের প্রতিক, ১৯১৬ সালে প্রকাশিত প্রথম বাংলাপত্রিকা ‘সত্যবাণী’র অনলাইন সংস্করণ শুরু করার পর। দীর্ঘদিনের একটি মনোস্কামনা পূর্ণহওয়ার মতো তৃপ্তি ছিলো এটি।’
তিনি বলেন, ‘নেশার টানে উপরোক্ত কর্মকান্ড একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য কতটুকু যথেষ্ট তা নিয়ে আমি নিজেই সন্দিহান, এরপরও ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটি আজ সেটি দিচ্ছে আমাকে। আমি কৃতজ্ঞ, আপ্লুত। তবে নিঃসংকোচে এটি বলতে চাই, কোন স্বীকৃতির লোভে নয়, নিজের মনের টান থেকেই সংবাদ পত্রের সাথে আমার সম্পৃক্ততা। হয়তো আড়ালে, কিন্তু আছি আমি, এটি আপনাদের বলতে পারি। কৃতজ্ঞতা আপনাদের সকলের প্রতি।’
অ্যাওয়ার্ড প্রদান পর্ব শুরুর আগে অনুষ্ঠানের হোস্ট ও প্রধান অতিথি রোশনারা আলী এমপি কে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, রিপোর্টার্স ইউনিটির ট্রেজারার , বাংলানিউজ ইউএস ডটকমের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি মুহাম্মদ সালেহ আহমদ, এসিসটেন্ট সেক্রেটারী, এটিএন বাংলার ম্যানচেস্টার প্রতিনিধি আমিনুল হক ওয়েছ ও বিশ্ববাংলা নিউজের চেয়ার– সাহিদা আর রহমান।
বিশেষ অতিথি লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার (প্রেস) আশিকুন নবী চৌধুরীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, জে টাইমস টিভির বিশেষ প্রতিনিধি ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন ও বাংলা সংলাপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আনসার মিয়া। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রোশনারা আলী এমপিকে রিপোর্টার্স ইউনিটির লগো সম্বলিত স্মারক (মগ) উপহার প্রদান করেন শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল ও জামাল খান এবং রোশনারা আলী এমপিকে অনারারী মেম্বারশিপ কার্ড প্রদান করেন, রিপোর্টার্স ইউনিটির সহসভাপতি এটিএম মনিরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি আশিকুন নবী চৌধুরীকে রিপোর্টার্স ইউনিটির লগো সম্বলিত স্মারক (মগ) উপহার প্রদান করেন সেলিনা আক্তার জোছনা ও আলমগীর হোসেন।