উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ‘গোলাপগঞ্জ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ‘গোলাপগঞ্জ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’ দীর্ঘদিনেও পায়নি উন্নয়নের ছোঁয়া। উন্নয়নের আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতি ছাড়া এখনো কোন বরাদ্দ পায়নি মাঠটি। মাঠ উন্নয়নের জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানোই হলো একমাত্র কাজ। এদিকে, সারা বছর টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য নির্দিষ্ট মাঠ না থাকায় গোলাপগঞ্জ উপজেলা খেলাধুলায় পিছিয়ে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭-৮৮ সালে এরশাদের শাসনামলে উপজেলার গোলাপগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ সড়কের ধারাবহর এলাকায় ‘উপজেলা স্টেডিয়াম’-এর যাত্রা শুরু হয়। ৩ একরেরও বেশী জায়গার উপরে প্রতিষ্ঠিত এ স্টেডিয়ামে তৎকালে দু’টি গোলপোস্টও বসানো হয়। এরপর আর কোন উন্নয়ন হয়নি এবং মাঠটি দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিটি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম করার পরিকল্পনা নিলে ওই স্টেডিয়াম ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’ নামকরণ করা হয়। পূর্ব থেকে মাঠ থাকায় জমি ক্রয়ের প্রয়োজন না হওয়ায় মাঠটি দ্রুত উন্নয়ন হবে বলে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। মাঠটির উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করলেও উন্নয়নের কোন উদ্যোগ দৃষ্টিগোচর নয় বলে জানান স্থানীয়রা।
তারা জানান, চারদিকে টিলাবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত মাঠটি বর্তমানে দেখে মাঠ বলে চিহ্নিত করা যায় না। এবড়ো থেবড়ো মাঠে কোন খেলাধুলা হয় না। আশেপাশের মানুষের কাপড় শুকানো অথবা গরু চরানোর কাজে মাঠটি ব্যবহত হচ্ছে। প্রথমদিকে মাঠে বসানো দ’ুটি গোলপোস্টের একটি ইতিমধ্যে গায়েব হয়ে গেছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মাঠটিই অস্তিত্ব হারাবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। বছর চারেক পূর্বে মাঠের উন্নয়ন হবে জানিয়ে স্থানীয়দের মাঠটি কিছুটা সংস্কার করে সমতল আকার দেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হলে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যয় করে মাঠটি সংস্কার করেন। কিন্তু এরপরেও মাঠের উন্নয়নে কোন কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।স্থানীয় সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী নাজিমুল হক লস্কর জানান, মাঠটি উন্নয়নের জন্য তারা দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে অনেক সময় মাঠটি পরিদর্শন করা হলেও কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিদর্শনে এসে মাঠের প্রশংসা করে টিলাবেষ্টিত মাঠটির উন্নয়নে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ সময় তৎকালীন ইউএনও একটি প্রস্তাব প্রেরণ করেছেন। কিন্তু এরপর আর কোন অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি।
মাঠটির উন্নয়নের কথা অনেক দিন থেকে শুনে আসছি। মাঠ উন্নয়নের জন্য স্থানীয়রা মানববন্ধন পর্যন্ত করেছেন। প্রথম প্রথম শুনে খুশি হয়েছিলাম। তবে এখন হতাশ।’ বলেন ঢাকাদক্ষিণ ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজাদ। তিনি জানান, উপজেলার খেলাধুলার জন্য সবগুলো মাঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। সেসব স্থানে খেলাধুলা বা টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে প্রতিষ্ঠানের ক্লাস ও পরীক্ষার বিষয়গুলো বিবেচনা রাখতে হয়। নির্দিষ্ট মাঠ থাকলে সারা বছর যেকোন সময় খেলা ও অনুশীলনের সুযোগ থাকে এবং নতুন প্রজন্মের জন্য সুস্থ বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। যা নতুন খেলোয়াড় তৈরি করবে এবং তরুণরা খেলাধুলায় আগ্রহী হবে।গোলাপগঞ্জ খেলাধুলায় অনেক পিছিয়ে গেছে উল্লেখ করে গোলাপগঞ্জ ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর জহির উদ্দিন বলেন, স্কুল-কলেজের মাঠে খেলা আয়োজন করতে গেলে প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিতে হয়। এমসি একাডেমির মাঠে এখন টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হলে অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসক পর্যন্ত দৌঁড়াতে হয়।একটি স্টেডিয়াম হলে এসব ভোগান্তি থাকবে না এবং সারাবছর যেকোন সময় খেলা ও টুর্নামেন্ট আয়োজনের সুযোগ থাকবে। নামে থাকলেও বাস্তবে স্টেডিয়াম না থাকায় গোলাপগঞ্জে ক্রিকেট বলেন আর ফুটবল বলেন সব খেলায়ই পিছিয়ে পড়েছে।শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের’ উন্নয়নের জন্য একটি প্রস্তাব প্রেরণের বিষয়টি উল্লেখ করে গোলাপগঞ্জের ইউএনও মৌসুমি মান্নান বলেন, কিছুদিন পূর্বে মাঠটির উন্নয়নের বিষয়ে আমি কথা বলেছি। শিগগিরই পূর্বে প্রেরিত প্রস্তাবটির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাবো।