এক কিংবদন্তি শিল্পীর জীবনের গল্প
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
বিনোদনঃ লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে চলেই গেলেন বাংলাসিনেমার প্লেব্যাক সম্রাট কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। টানা ৯ মাস সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থেকে গত ১১ জুন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। এরপর থেকে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এই শিল্পী। শিল্পীর দুলাভাই ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি।কিংবদন্তি এই শিল্পী জানতেন তার জীবনের গল্প ফুরিয়ে এসেছে।সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার আগেই সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, বড়জোর বছরখানেক বাঁচবেন এন্ড্রু কিশোর। এটা জানা ছিল বলেই দেশে ফিরে এন্ড্রু কিশোর নিজ সিদ্ধান্তে নীরবে চলে যান জন্মশহর রাজশাহীতে। শিল্পীর জীবনের আলো নিভে গেল খুব দ্রুতই।
১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহী মিনু বাড়ৈয়ের কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে শিশু। মা তার প্রিয় শিল্পী কিশোর কুমারের নামে সদ্যোজাত সন্তানের নাম রাখেন ‘কিশোর’। ধীরে ধীরে ছেলেটি বড় হয়ে সংগীতাঙ্গনে পা রাখল। তারপর কোনো একদিন স্বমহিমায় সেই ছেলে কিশোর কুমারের গানে ভাগ বসাল। সেই ছেলেটিই বাংলাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ। মা রাজশাহীর বুলনপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা থাকায় সেখানেই পড়াশোনায় হাতেখড়ি।
এন্ড্রু কিশোরের সংগীত পাঠ শুরু হয় রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। আশির দশকে প্লেব্যাকের জগতে পা রাখার পর থেকে বাংলা, হিন্দিসহ বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তাঁর বহুসংখ্যক গান স্থান করে নিয়েছে মানুষের হৃদয়ে, স্মৃতির মণিকোঠায়।এন্ড্রু কিশোরের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে রাজশাহীতে।। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
প্লে-ব্যাকে এন্ড্রু কিশোরের অভিষেক সুরকার আলম খানের মাধ্যমে ১৯৭৭ সালে।‘মেইল ট্রেন’ নামের একটি সিনেমায় ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয়।
সেই শুরুর পর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এন্ড্রু কিশোরের খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল’প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোর ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।এছাড়া সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের আরও অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন উপমহাদেশের খ্যাতনামা এই শিল্পী।এন্ড্রু কিশোর সংসার জীবনে স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু এবং সজ্ঞা (২৬) নামে এক মেয়ে ও সপ্তক (২৪) নামে এক পুত্র সন্তান রেখে গেছেন। তার দুজনই বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা করছেন। সজ্ঞার পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে।