একাত্তরের পাকিস্তানী হানাদারদের হত্যাকান্ডকে ‘জেনোসাইড’ ঘোষণা করলো আইএজিএস
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডন: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ’ ঘোষণা করে প্রস্তাব পাস করেছে গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলার্স (আইএজিএস)।
প্রস্তাব নিয়ে সদস্যদের মধ্যে ভোটাভুটির ফলাফল সোমবার সংস্থাটি জানায় বলে জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও প্রস্তাবের প্রস্তাবক তৌহীদ রেজা নূর।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমানে আইএজিএসের ৬২৬ জন সদস্য রয়েছেন। ভোটদাতা ২১৮ জন সদস্যের মধ্যে ২০৮ জন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, যার মাধ্যমে এই প্রস্তাব নিরঙ্কুশ সমর্থনে পাস হয়েছে।
তৌহীদ রেজা নূর জানান, প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট পড়েছে মাত্র চারটি। আর আটজন সদস্য ভোটদান থেকে বিরত ছিলেন।
জেনোসাইড বিশেষজ্ঞদের ভোটে এই প্রস্তাব পাস হওয়ার মাধ্যমে শহীদদের আত্মদানের স্বীকৃতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে তৌহীদ রেজা নূর।
প্রস্তাবটি পাস করার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালের জুলাই মাসে আইএজিএসের একাত্তরে সংঘটিত জেনোসাইডকে স্বীকৃতির প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন তিনি। এরপর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।
তৌহীদ রেজা নূরের প্রস্তাবের সমর্থনকারী ছিলেন জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক গ্রেগরি এইচ স্ট্যান্টনসহ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ।
আইএজিএসের গঠনতান্ত্রিক একটি নিয়মের কারণে প্রথম দফায় প্রস্তাবটি পাস না হলেও সেটাতে সংশোধনী আনার প্রেক্ষাপটে ভোটাভুটি সফল হয়েছে।
সংস্থার নিয়মে ছিল, কোনো প্রস্তাবে বিষয়ে মোট সদস্যের ৫০ শতাংশ ভোট দিতে হবে। তারপর ওই প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু এত সদস্যের ভোট গ্রহণের বিষয়টি বেশ কঠিন।
তৌহীদ রেজা নূরদের প্রস্তাবের পর গঠনতন্ত্রদের ওই ধারায় সংশোধনী আনে আইএজিএস। ওই সংশোধনীতে বলা হয়, ২০ শতাংশের একজন বেশি ভোট দিলেও কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
তিনি জানান, দ্বিতীয় দফায় টানা এক মাস ভোটাভুটি শেষ করে ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ’ ঘোষণা করে প্রস্তাবটি পাস হয়।
গবেষক তৌহীদ রেজা নূর বলেন, আইএজিএসে কোনো প্রস্তাব উত্থাপন করতে হলে প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরার পাশাপাশি ওই অপরাধকে জেনোসাইড হিসাবে ঘোষণার যুক্তি হিসাবে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি ও বিবিলিওগ্রাফি তুলে ধরতে হয়।
সংস্থার সদস্য জেনোসাইড বিশেষজ্ঞরা সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভোট দিয়ে থাকেন জানিয়ে তিনি বলেন, সারা পৃথিবীর জেনোসাইড স্কলারদের পাশাপাশি অনেক আইনজীবী এই সংস্থায় রয়েছেন।
“এমন একটি পর্যায় থেকে জেনোসাইড হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার। যারা একাত্তরে জেনোসাইড নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব প্রকাশ করে বা অস্বীকার করতে চায়, তাদের সামনে এখন এটা তুলে ধরা যাবে যে, খোদ জেনোসাইড স্কলাররাই এটার স্বীকৃতি দিয়েছেন।”
জেনোসাইড স্বীকৃতির এই প্রস্তাব পাসের বিষয়টি আইএজিএসের ওয়েবসাইটে প্রকাশের পর এই সংক্রান্ত তথ্যগুলো স্থায়ীভাবে সেখানে বলেও জানান তিনি।
পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাত্তরে জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টায় এই প্রস্তাবকে কাজে লাগানো সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তৌহীদ রেজা নূর।
বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে চিরতরে রুদ্ধ করতে একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে নেমেছিল, নয় মাসে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ৩০ লাখ মানুষ।
পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা শুরুর পর প্রতিরোধ যুদ্ধে নেমেছিল বাঙালিরা, তার ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ।