“একাত্তরের বেতিয়ারার ৯ শহীদ স্মরণে হবিগঞ্জে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত”
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
হবিগঞ্জ: মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনীর সদস্য কুমিল্লার বেতিয়ারায় পাক হানাদারদের অ্যামবুশের শিকার রণাঙ্গনের ৯ বীর শহীদের স্মরণে হবিগঞ্জ জেলা সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সবুজবাগস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনীর তৎকালীন সিলেট জেলার অন্যতম ডেপুটি কমান্ডার এবং বর্তমান জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কমরেড হীরেন্দ্র দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা সমন্বয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট স্বদেশ রঞ্জন বিশ্বাস। ১১ নভেম্বর কুমিল্লার বেতিয়ারার ৯ জন বীর শহীদের স্মৃতির প্রতি ১ (এক) মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন ও শ্রদ্ধা জানিয়ে মূল আলোচনা পর্ব শুরু করা হয়। এসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে বেতিয়ারার শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বিশেষ গেরিলা বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ও হবিগঞ্জ জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা, মহকুমা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য, প্রাক্তন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট চৌধুরী আব্দুল হাই, ৬০’র দশকের তুখোড় ছাত্র নেতা, মুক্তিযুদ্ধকালীন বিশেষ গেরিলা বাহিনীর হবিগঞ্জ মহকুমা ডেপুটি কমান্ডার এবং হবিগঞ্জ জেলা সমন্বয় কমিটির সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল মোত্তালিব চৌধুরী, ৬০’র দশকের হবিগঞ্জ মহকুমার তুখোড় ছাত্র নেতা এবং বিশেষ গেরিলা বাহিনীর সদস্য কাসেম আলী।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী হবিগঞ্জ জেলা সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সিনিয়র অ্যাডভোকেট সদাকত আলী খান, যুগ্ম আহ্বায়ক যথাক্রমে ডাঃ এম এ ওয়াদুদ, অধ্যক্ষ (অবঃ) গোকুল চন্দ্র দাশ, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রফিক আলী, সদস্য অধ্যক্ষ (অবঃ) সফিউল আলম, অ্যাডভোকেট রণজিৎ কুমার দত্ত, অ্যাডভোকেট মনোজিত লাল দাশ, শেখ মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ, অনুকূল চন্দ্র দাস, এটিএম নুরুল হক, আব্দুল আলী মাস্টার, হাজী আব্দুল ওয়াদুদ, ডাঃ অনুকূল দাশ, নুরুল ইসলাম তালুকদার, পবিত্র রঞ্জন দাশ চৌধুরী দাশ, প্রয়াত সৈয়দ আবিদুর রহমানের স্ত্রী সৈয়দা জেবুন্নেছা, প্রয়াত ইব্রাহীম মিয়ার জেষ্ঠ্য পুত্র মোঃ বাচ্চু মিয়া, প্রয়াত নগেন্দ্র দত্তের পুত্র পরিতোষ দত্ত। উক্ত সভাটি পরিচালনা করেন জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব এস এম ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী।
উল্লেখ যে, যুদ্ধের ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য গেরিলা যোদ্ধারা ভারতের বাইকোয়া বেইজ ক্যাম্প থেকে ১০ নভেম্বর রাত ৮টায় চৌদ্দগ্রাম সীমান্তবর্তী ভৈরবনগর সাব-ক্যাম্পে (চৌত্তাখোলা ক্যাম্পের শাখা) ওই দলটিকে দু’টি গ্রুপে বিভক্ত করে ওই দিন রাতে আগে-পরে ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড’ পারাপারের সিদ্ধান্ত নেয়। জগন্নাথ দিঘি ইউনিয়নের ‘বেতিয়ারা’ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম। শহীদ নিজাম উদ্দিন আজাদের নেতৃত্বাধীন ৩৮জন মুক্তিযোদ্ধার প্রথম দলটি বাক্সবন্দি ভারী আগ্নেয়াস্ত্রসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড অতিক্রমের জন্য এগিয়ে আসেন। এ সময় সড়কের উত্তর পার্শ্বের গাছের আড়ালে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী ওৎ পেতে থাকা পাক হানাদার বাহিনীর অ্যামবুশের মুখোমুখি হয়ে পড়েন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাক হায়নাদের ব্রাশ ফায়ার চলতে থাকে। পাক হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি নিজামউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন দল। ৭৮ জনের মধ্যে শহীদ হন ৯ জন, বাকি ৬৯ জন সাহসী যোদ্ধা লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন।ঐতিহাসিক বেতিয়ারার যুদ্ধের পরপর ভারতীয় এক সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা বলেছিলেন- “শত্রু বাহিনীর এ ধরনের পরিকল্পিত এম্বুশের পড়ে সাধারণত সকলের (এ ক্ষেত্রে ৭৮ জন ) প্রাণহানি হয়ে থাকে কিন্তু এই গেরিলা বাহিনীর শৃঙ্খলা ও সাহসের জন্য মাত্র ৯ জনের প্রাণহানি হয় ৬৯ জন জীবিত ফিরে আসে ও একজনও যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে চলে যায় নি যা সামরিক ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা।“ ইতিহাসের এই স্রষ্টা বেতিয়ারার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লাল সালাম।