ওসমানী বিমানবন্দরে ই-গেইটের উদ্বোধন করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ প্রবাসী অধ্যূষিত সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের সুবিধার্থে চালু হলো ইলেকট্রনিক গেট ‘ই-গেট’।৮ জানুয়ারি রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট ১ আসনের এমপি ড. একে. আব্দুল মোমেন ৬টি ই-গেটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।এ সময় মন্ত্রী বলেন, ই- গেইট চালু হওয়াতে সুবিধাভোগীদের অনেক উপকারে আসবে। বিশেষ করে প্রবাসীরা দেশে আসলে নানা ধরনের দুর্ভোগের মুখে পড়েন। এটি চালু হওয়ায় অনেকটা দুর্ভোগ লাগব হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় বাংলাদেশ পুরো বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে।তিনি বলেন, সিলেটের বিপুলসংখ্যক মানুষের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে। আমাদের যারা ডুয়েল সিটিজেন আছেন তাদেরকে নো ভিসা সার্ভিস আরো বেগবান করতে হবে, যাতে করে প্রবাসীরা আরো দ্রুত এই সার্ভিস পায়। পাসপোর্টের জন্য সাধারণ মানুষের হাহাকারের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সময় মত পাসপোর্ট না পেলে জনগণ নানা অভিযোগ করেন। তাদের অনেক অভিযোগ সত্য এবং অনেক অভিযোগের সত্যতা থাকে না। তিনি সিলেটে আরেকটি পাসপোর্ট অফিস স্থাপনের তাগিদ দেন।
ই-পাসপোর্টধারীদের জন্য স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন সেবা দিতে এই বিমানবন্দরে বসানো হয়েছে ৬টি ই-গেট। এরই মধ্যে ৬টি ই- গেট মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। যার ফলে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে মাত্র ১৮ সেকেন্ড সময় ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা।দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে ই-গেট কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালের ৩০ জুন। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসানো ই-গেটের উদ্বোধন হয়েছিল সেদিনই।সিলেটে ই-গেইট চালু হওয়ায় বিমানবন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। ই-পাসপোর্টে থাকা মাইক্রোপ্রসেসর চিপ এবং অ্যান্টেনা স্ক্যান করে ই-গেট পাসপোর্টধারী ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করবে। যাত্রীরা ই-গেটে পাসপোর্ট দেয়ার পরই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে খুলে যাবে ফটক। কিছু সময়ের মধ্যে শেষ হবে বিদেশগামীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। যাত্রী নিজে নিজে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। এ জন্য কোনো কর্মকর্তার প্রশ্নের মুখেও পড়তে হবে না।বিমানবন্দর সূত্র জানা যায়, ই-গেইট দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফ্লোরা লিমিটেড এরই মধ্যে ই-গেট মেশিন স্থাপনসহ সব কাজ সম্পন্ন করেছে। যাত্রীদের বহির্গমনের জন্য ৩ টি এবং প্রবেশের জন্য ৩ টি গেট চালু থাকবে।
সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, মোট ৬টি ই-গেইট উদ্বোধন করা হবে। তারমধ্য ৩ টি হচ্ছে যাত্রীদের বহির্গমনের জন্য ৩ টি এবং প্রবেশের জন্য ৩ টি গেট। তিনি আরও বলেন, এই সেবা সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে যাদের ই-পাসপোর্ট আছে তারাই পাবেন।এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপ-পরিচালক মহের উদ্দিন শেখ গণমাধ্যমকে বলেন, ই-গেট চালু হলে প্রবাসীদের ভোগান্তি লাগব হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হবে। প্রবাসীদের কথা চিন্তা করেই সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ইমিগ্রেশন সিস্টেমকে আরও নিরাপদ ও দ্রুততর করা হয়েছে। ইমিগ্রশন প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন ও অথেনটিকেশন খুব কম সময়ে হবে।বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, ঢাকার হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক, চট্টগ্রাম শাহ আমানত ও সিলেট বিমানবন্দরে ইতিমধ্যে ই-পাসপোর্ট গেট বসানো হয়েছে।এছাড়াও যশোরের বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আরও ই-গেট স্থাপন করা হবে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এসব ই-গেট স্থাপন করলেও এগুলো পরিচালনা করবে ইমিগ্রেশন বিভাগ।ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে একজন বিদেশগামী কারও সাহায্য ছাড়া নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি এক মিনিটেরও কম সময়ে সম্পন্ন হবে। পৃথিবীতে এরচেয়ে নিরাপদ ও সর্বাধুনিক পাসপোর্ট এখন পর্যন্ত উদ্ভাবন হয়নি। বিশ্বের ১১৮টি দেশে ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ হলো ১১৯তম দেশ। ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বে পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যে ঢাকার পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে শুরু করে সকল বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু হয়েছে।
ই-গেট সুবিধা হলো, আন্তর্জাতিক ভ্রমণে একজন যাত্রীর পরিচয়পত্র তার পাসপোর্ট। পুরোনো পাসপোর্টের চাইতে বেশি সুরক্ষিত ই-পাসপোর্ট। এটি এমন এক ধরনের ইলেক্ট্রিক সিস্টেম যার কভারে একটি চিপ থাকে। যার মধ্যে থাকে পাসপোর্ট বহনকারীর তথ্য, সেই সাথে তথ্য জালিয়াতি থেকে সুরক্ষা ব্যবস্থা। পুরোনো এমআরপি পাসপোর্টের ১০ আঙুলের ছাপ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলেও ই-পাসপোর্টে তা রয়েছে। এর মাইক্রোপ্রসেসরে একজন ব্যক্তির বায়োমেট্রিক ও বায়োগ্রাফিক ৪১টি তথ্য থাকে। এরমধ্যে ২৬টি তথ্য খালি চোখে দেখা যায়। ২টি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে যা বিশেষ যন্ত্র ছাড়া পাঠ করা যায় না। স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় একজন ব্যক্তির ই-পাসপোর্টের তথ্য পড়ার জন্য ই-গেট ব্যবহার করা হয়। এখানে মাইক্রোপ্রসেসরে থাকা বায়োমেট্রিক ও বায়োগ্রাফিক তথ্য যাচাই করে পাসপোর্টধারীকে শনাক্ত করা হয়। যেহেতু ই-গেটে পাসপোর্টের সাথে সাথে ব্যক্তির ভিসাও যাচাই করা হয়। তাই ই-গেট সুবিধায় একজন পাসপোর্ট বহনকারী নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারেন। এতে সাধারণ ইমিগ্রেশনে যতো সময় লাগে তার থেকে অনেক কম সময়ে ইমিগ্রেশন শেষ করা যায়।তবে এ সুবিধার জন্য আগে ইমিগ্রেশন পদ্ধতিকে অটোমেশনে আনতে হবে। আবার ই-গেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ভিসা ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত নেটওয়ার্কের সংযোগও থাকতে হবে।উদ্বোধনকালে বক্তব্য রাখেন সুরক্ষা বিভাগের সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নুরুল আনোয়ার, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: মজিবর রহমান, সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপ-পরিচালক মহের উদ্দিন শেখ, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান।