করোনায় জীবনরক্ষাকারী প্রথম ওষুধ পাওয়া গেছে
আন্তজার্তিক ডেস্ক
সত্যবাণী
নিউ ইয়র্ক: বিজ্ঞানীরা বলছেন ডেক্সামথাসোন নামে সস্তা ও সহজলভ্য একটি ওষুধ করোনাভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জীবন রক্ষা করতে সাহায্য করবে।জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই স্বল্প মাত্রার স্টেরয়েড চিকিৎসা একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার।এই ওষুধ ব্যবহার করলে ভেন্টিলেটারে থাকা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি এক তৃতীয়াংশ কমানো যাবে।আর যাদের অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার এক পঞ্চমাংশ কমানো যাবে।বিশ্বে এই ওষুধ নিয়ে সর্ববৃহৎ যে ট্রায়াল বা পরীক্ষা চালানো হচ্ছিল তার অংশ হিসাবে দেখা হচ্ছিল এই ওষুধ করোনাভাইরাসের চিকিৎসায়ও কাজ করবে কিনা।গবেষকরা অনুমান করছেন ব্রিটেনে যখন করোনা মহামারি শুরু হয়েছে তার প্রথম থেকেই যদি এই ওষুধ ব্যবহার করা সম্ভব হতো তাহলে পাঁচ হাজার পর্যন্ত জীবন বাঁচানো যেত। কারণ এই ওষুধ সস্তা।
তারা বলছেন বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে কোভিড ১৯ রোগীদের চিকিৎসায় এই ওষুধ বিশালভাবে কাজে লাগতে পারে। এবং যেসব দেশ রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে এটা তাদের জন্য বিশাল সুখবর।করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এই ওষুধটি সেবন করেছেন এমন প্রত্যেক ২০ জনের মধ্যে ১৯ জনই হাসপাতালে না গিয়েই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন-তাদের বেশি ভাগই সুস্থ হয়েছেন। তবে কারও কারও জন্য অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেশনের দরকার হয়েছিল।
শরীরের প্রদাহ কমিয়ে আনতে এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়। ব্রিটিশ গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন হাঁপিয়ে ওঠে তখন এর কিছু ক্ষতি ঠেকাতে সহায়তা করে ডেক্সামেথাসোন।শরীরের এই অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াকে সাইটোকাইন স্টর্ম বলে; যা অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরীক্ষার অংশ হিসেবে- হাসপাতালের প্রায় ২ হাজার করোনা রোগীকে এই ওষুধটি প্রয়োগ করেন এবং ৪ হাজারের বেশি রোগী যাদের এই ওষুধটি দেয়া হয়নি; তাদের সঙ্গে তুলনা করে দেখেন।
অক্সফোর্ডের এই বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৪০ থেকে ২৮ শতাংশ কমিয়ে আনে ডেক্সামেথাসোন। এছাড়া যেসব রোগীর অক্সিজেন দরকার হয়, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি কমায় ২৫ থেকে ২০ শতাংশ।গবেষক দলের প্রধান তদন্তকারী অধ্যাপক পিটার হরবি বলেছেন, এটাই এখন পর্যন্ত একমাত্র ওষুধ যা মৃত্যু হার কমিয়ে এনেছে এবং এটা তাৎপর্যপূর্ণভাবে মৃত্যু হার হ্রাস করেছে। এটা বড় ধরনের অগ্রগতি।
অক্সফোর্ডের এই পরীক্ষা কার্যক্রমের প্রধান গবেষক অধ্যাপক মার্টিন ল্যান্ড্রে বলেছেন, তাদের গবেষণায় দেখা গেছে- ওষুধটি দিয়ে ভেন্টিলেটর প্রয়োজন এমন আটজন রোগীর মধ্যে মাত্র একজনের জীবন বাঁচানো যায়। অক্সিজেন সাপোর্টে থাকা রোগীদের মধ্যে প্রত্যেক ২০ থেকে ২৫ জনের মধ্যে একজনের প্রাণ রক্ষা করা যায়।এই ওষুধে স্পষ্ট উপকার আছে। ডেক্সামেথাসোনের এই চিকিৎসা ১০দিন পর্যন্ত চালাতে হয়। এতে প্রত্যেক রোগীর জন্য খরচ হয় মাত্র ৫ ডলার। মূলত একটি প্রাণ বাঁচাতে খরচ হয় ৩৫ ডলার। এটাই একমাত্র ওষুধ; যা বিশ্বজুড়েই সহজলভ্য।’
অধ্যাপক মার্টিন ল্যান্ড্রে বলেছেন, হাসপাতালে উপযুক্ত সময়ে কোনও ধরনের বিলম্ব ছাড়াই রোগীদের এই ওষুধটি দেয়া উচিত। তবে বাড়িতে নেয়ার জন্য লোকজনের এই ওষুধটি কেনা উচিত হবে না।করোনাভাইরাসের মৃদু উপসর্গ রয়েছে, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসোন কোনও ধরনের সহায়তা করে না। যাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা নেই তাদের জন্য ওষুধটি ফলপ্রসূ নয়।গত মার্চ থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নানা ধরনের ওষুধের পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে ম্যালেরিয়ানিরোধী ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের পরীক্ষাও চালানো হয়েছে। তবে এই ওষুধটি করোনা রোগীদের মৃত্যু হার এবং হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
এছাড়া অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রেমডেসিভির নিয়েও করোনার চিকিৎসায় পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এই ওষুধটি করোনা রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার সময় কমিয়ে আনছে বলে প্রমাণ হওয়ায় ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস ওষুধটি প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে।কোভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনছে এমন ওষুধের খোঁজ পাওয়ার খবর নতুন নয়। তবে সেগুলো অনেক ব্যয়বহুল। কিন্তু অক্সফোর্ড বিজ্ঞানীদের নতুন এই গবেষণার ফল সেক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম। কারণ স্বস্তা এবং সহজলভ্য এই ওষুধটির মাধ্যমে পুরো বিশ্বের কোভিড-১৯ রোগীরা উপকৃত হবেন।১৯৬০ সালের গোড়ার দিক থেকেই বাত, হাপানি ও প্রদাহের চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসোন ওষুধটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভেন্টিলেটরে যাওয়া করোনা রোগীদের প্রায় অর্ধেকই যখন বাঁচেন না,তখন এক তৃতীয়াংশ মৃত্যু কমাতে সক্ষম এই ওষুধটি বড় আশার খবর। সূত্র: বিবিসি।