কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপ্রকল্প ১২ বছরে কাজ মাত্র ২৫ ভাগ

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ বারবার তাগিদ দিয়েও ভারতীয় ঠিকাদারকে দিয়ে ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করাতে পারেনি রেলওয়ে। ভারতীয় ঋণের (এলওসি) এ প্রকল্পের কাজ ১২ বছরে এগিয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ।ভারতের সম্মতি না মেলায় ঠিকাদারকে বাদ দিতে পারেনি রেলওয়ে।মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় প্রকল্পটির মেয়াদ আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ নিয়ে ৪র্থ বারের মতো সময় বাড়ানো হলো।নথি অনুযায়ী, একনেক সভায় রেলসচিব সরকারপ্রধানকে জানান, ‘ঠিকাদারের সক্ষমতা না থাকায় ৪র্থ বার মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতি পাওয়া যায়নি।১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে বন্ধ হয় রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন। রেলপথটির পুনর্বাসন প্রকল্প ২০১১ সালে সরকারের অনুমোদন পায়। ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১৭ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি ব্যয়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল।

পরে এ প্রকল্পে যুক্ত হয় ভারত। প্রকল্প অনুমোদনের ৬ বছর পর ২০১৭ সালের নভেম্বরে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’-এর সঙ্গে সিঙ্গেল লাইনের ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণে চুক্তি করে বাংলাদেশ। সে সময় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয় ৬৭৮ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ভারত এলওসির আওতায় ঋণ দেবে ৫৫৬ কোটি টাকা। বাকি ১২২ কোটি টাকা জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।এলওসি ঋণের শর্তানুযায়ী, ভারতীয় অর্থায়নে প্রকল্পের দেশটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই সুবাদে কাজ পায় ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’। প্রতিষ্ঠানটিকে অধিগ্রহণ করেছে আরেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টেক্সমাকো রেল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। নাম ও মালিক বদল হলেও ভারতীয় ঠিকাদারের কাজের গতি বাড়েনি। ভারতের নির্মাণাধীন আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণের কাজ পেয়েছিল কালিন্দ। এই প্রকল্পের কাজও নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে পারেনি। তাই গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রেলপথটি উদ্বোধন করতে পারেন নি।

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষের দিকে থাকলেও বারবার তাগিদ দিয়েও ঠিকাদারকে দিয়ে শাহবাজপুর-কুলাউড়া সেকশনে কাজ করাতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়ায় কাজ আনুষ্ঠানিকভাবেই বন্ধ রয়েছে। যদিও গত জুলাই থেকেই কাজ হচ্ছে না। কখনও করোনা, কখনও জমি, বিদ্যুতের খুঁটি বা গাছের অজুহাত দেয়া হয়েছে।ভারতীয় ঠিকাদারকে বাদ দিতে চুক্তি বাতিল করতে চেয়েছিল রেলওয়ে। প্রকল্পটি পর্যবেক্ষণ করে আইএমইডি জানায়, নতুন করে প্রাক্কলন ও ঠিকাদার নিয়োগে ২ বছর সময় লাগবে। রেলসচিব ড. হুমায়ুন কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনও ঠিকাদারকে বাদ দেয়ার পক্ষে ছিল। ঋণের শর্তের কারণে অন্য কোনো ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে হতো। অর্থায়নকারী হিসেবে চুক্তি বাতিলে ভারতের সম্মতি প্রয়োজন।রেলের নথি অনুযায়ী, গত বছরের জুন পর্যন্ত কুলাউড়া-শাহবাজপুর প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ছিল ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত অগ্রগতি হয় ২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। চলতি বছরের মে পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে ২৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। চুক্তি অনুযায়ী, ১৮ মাসে কাজ সম্পন্নের শর্ত থাকলেও ২ বছরে কাগজকলমে কাজ এগিয়েছে ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে ভারতীয় ঋণের ১ টাকাও খরচ হয়নি প্রকল্পটিতে। তবে রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেছেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ৬ মাস কাজ করার সুযোগও ছিল না। মেয়াদ বৃদ্ধি অনুমোদন পাওয়ায় এখন কাজে আর বাধা নেই। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।

You might also like