গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সিলেটের মাছুম আহমেদ আর নেই
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ ১৪ দলীয় জোটের অন্তর্গত গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সহ-সভাপতি, মহানগর শাখার আহবায়ক, ভার্থখলা পঞ্চায়েত কমিটির সহ-সভাপতি, ভার্থখলা জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সিনিয়র সদস্য মাছুম আহমেদ আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে আকস্মিক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্খী এবং অসংখ্য রাজনৈতিক সহকর্মী রেখে গেছেন। অমায়িক, সদালাপী, মিশুক প্রকৃতির মাছুম আহমেদ সহজ-সরল জীবন যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন। সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি ‘মাছুম ভাই’ নামে সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন।
১ মার্চ বুধবার বাদ জোহর ভার্থখলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় পঞ্চায়েতি কবরস্তানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন ভার্থখলা জামেয়ার প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা মজদউদ্দিন আহমদ। জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনসহ সমাজের নানা স্তরের বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন।মাছুম আহমেদের পরিবার থেকে জানানো হয়, মঙ্গলবার রাত ৯ টার দিকে নিজ বাড়িতে রাতের আহারের শেষপর্যায়ে হঠাৎ বিষম খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। সাথে সাথে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে ভার্থখলা মহল্লাবাসী, পরিচিত রাজনৈতিক অঙ্গন ও শুভাকাঙ্খী মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকে গভীর রাতেই তাঁর বাড়িতে চলে আসেন এবং এক বেদনা-বিদূর পরিবেশ তৈরী হয়।
উল্লেখ্য, মাছুম আহমেদের পিতা মরহুম ফরমুজ আলী সারাজীবন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালী ন্যাপ)-এর রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পরে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্বে ওয়ালী ন্যাপ পুনর্গঠিত হলে তিনি ন্যাপ (মো)-এর সাথে সম্পৃক্ত হন। শেষ বয়সে ন্যাপ বিভক্ত হয়ে গণতন্ত্রী পার্টি গঠিত হলে তিনি এই দলের জেলা শাখার সহ-সভাপতি ছিলেন। মাছুম আহমেদের ছোট ভাই মরহুম মাহমুদ আলী সাধু ছিলেন বিএনপি সিলেট মহানগর শাখার সিনিয়র নেতা। পিতার অনুসরণে উত্তরাধিকার সুত্রে মাছুম আহমেদ ছাত্রজীবনে ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ছাত্রত্ব শেষে তিনি ন্যাপ (মো)-তে যোগ দেন। তখন তিনি ছিলেন জেলা ন্যাপের সর্বকণিষ্ট সদস্য। পর্যায়ক্রমে জেলা ন্যাপের দফতর সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে ন্যাপ বিভক্ত হয়ে গণতন্ত্রী পার্টি গঠিত হলে পিতার অনুসরণে তিনিও গণতন্ত্রী পার্টির সাথে সম্পৃক্ত হন। বিভিন্ন দায়িত্ব পালন শেষে সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সিলেট জেলা ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন।মরহুম মাছুম আহমেদ আজীবন একজন সংগ্রামী রাজনীতিবিদ ছিলেন। নির্লোভ ও ত্যাগী হিসেবে পরিচিত সিলেটের কিংবদন্তী রাজনীতিবিদ জননেতা পীর হবিবুর রহমান ও জননেতা আব্দুল হামিদের দীর্ঘ সান্নিধ্য লাভ করায় তিনিও তাঁদের মতো মন-মানসিকতার অধিকারী হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নিতান্ত কিশোর বয়সেও তিনি স্বাধীনতাকামীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ দেশের স্বার্থবিরোধী আন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ করে স্বৈরাচার বিরোধী প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি ছিলেন সামনের সারির লড়াকু যোদ্ধা। সহকর্মীদের সাথে তাঁর ছিল নিরেট ভালবাসা ও আন্তরিকার সম্পর্ক। অনুজপ্রতিম প্রত্যেক রাজনৈতিক সহকর্মী মাছুম আহমেদের সাথে অত্যন্ত শ্রদ্ধায় চলাফেরা করতো।
এদিকে, গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতা মাছুম আহমেদের আকস্মিক মৃত্যুতে বিভিন্ন মহল থেকে শোক জ্ঞাপন করা হয়েছে। গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আরশ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদত হোসেন, সিলেট জেলা সভাপতি মোঃ আরিফ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক জুনেদুর রহমান চৌধুরী, মহানগর শাখার যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক প্রাণকান্ত দাশ ও সদস্য সচিব শ্যামল কপালী পৃথক পৃথক শোক বার্তায় মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। তাঁরা মরহুমের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তারা বলেন, মাছুম আহমেদের মতো একজন নিরলস রাজনীতিবিদের শূণ্যতা সহজে পূরণ হবার নয়। এদেশের গরীব মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি তথা সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে তাঁর মতো নেতার বিকল্প নেই। সিলেটের প্রগতিশীল রাজনৈতিক অঙ্গন আগামীর প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর অনুপস্থিতি মর্মে মর্মে উপলব্দি করবে। নেতৃবৃন্দ মরহুমের শোকার্ত পরিবারবর্গের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানান।অপরদিকে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, নিরলস সমাজকর্মী, প্রগতিশীল ও মুক্তচিন্তার মানুষ মাছুম আহমেদের আকস্মিক মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন, সদর দক্ষিণ নাগরিক কমিটি, সিলেট’র সভাপতি আলহাজ্ব শেখ মোঃ মকন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক সিটি কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম খান, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রেসক্লাব, সিলেট’র সভাপতি চঞ্চল মাহমুদ ফুলর ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, লাউয়াই স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ আব্দুস ছত্তার, শাহ স্পোর্টিং ক্লাব, লাউয়াই-এর সাধারণ সম্পাদক আক্কাছ উদ্দিন আক্কাই, বন্ধন সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, সিলেট-এর সভাপতি আবদুল মালেক তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক জমির আলী বেপারী। পৃথক পৃথক বিবৃতিতে তারা মাছুম আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানান।