গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান সাংবাদিক কামাল আহমেদের সঙ্গে লন্ডনে গণমাধ্যমকর্মীদের মতবিনিময় সভা
সারওয়ার ই আলম
অতিথি করেসপন্ডেন্ট, সত্যবাণী
লন্ডন: অন্তর্বর্তী সরকারের গণমাধ্যম সংস্কার কমিটির প্রধান, বিবিসিখ্যাত সাংবাদিক কামাল আহমেদের সঙ্গে লন্ডনে কর্মরত বাংলাদেশী-ব্রিটিশ গণমাধ্যমকর্মীদের এক মতবিনিময় সভা গত ২৩শে অক্টোবর মঙ্গলবার সাপ্তাহিক পত্রিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ করাসহ গণমাধ্যমকর্মীদের স্বার্থরক্ষা করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পেশাগত মানোন্নয়নে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং লন্ডন থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্রগুলোকে সরকারি বিজ্ঞাপন সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে কী কী সুপারিশ পেশ করতে পারে— এসব বিষয়ে নিজ নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে বক্তাগণ তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা সভাটির আয়োজন করে।
সাংবাদিক সারওয়ার-ই আলমের সঞ্চালনায় এ মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুহিব চৌধুরী, সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ, বিবিসিখ্যাত সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন, সাপ্তাহিক সুরমার সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, এটিএন বাংলার উপস্থাপক ঊর্মি মাযহার, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, সাংবাদিক কামাল মেহেদী, চ্যানেল এসের উপস্থাপক ফারহান খান, রানার টিভির সম্পাদক আবু সালেহ মাসুম, চ্যানেল এসের সংবাদ পাঠক তৌহিদ শাকিল, সাংবাদিক হাসান হাফিজুর রহমান পলক, সাংবাদিক আবদুল হাই সঞ্জু, এফএম টিভির সম্পাদক ফয়সল মাহমুদ, বিজয় বায়ান্ন টিভির সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম অভি, নতুন দিনের পলি রহমান, নারী ম্যাগাজিনের সম্পাদক শাহনাজ সুলতানা, সাংবাদিক হাসনাত চৌধুরী, বাংলা সংলাপের সাংবাদিক সাজু আহমেদ প্রমুখ।
সভার শুরুতে সাংবাদিক কামাল আহমেদকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সাংবাদিক বেলাল আহমেদ ও মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে যে কাজটি সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে অধিকাংশ বক্তা মনে করেন তাহলো গণমাধ্যমের ওপর সরকারের খবরদারি বন্ধ করতে যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সুবিধা দিয়ে বিটিআরসিকে আরো কার্যকর ও শক্তিশালী করা।
একইসঙ্গে কোনো কোনো বক্তা গণমাধ্যমের ওপর সরকারের খবরদারি বন্ধ করতে গণমাধ্যমের ‘লাইসেন্সিং’ এর দায়িত্ব তথ্য মন্ত্রনালয়ের পরিবর্তে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
অনেক বক্তা গণমাধ্যমকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য এবং রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করতে ব্রিটেনের অফকমের ন্যায় বাংলাদেশে একটি ‘রেগুলেটরি’ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্যও অন্তর্বর্তী সরকারের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতি প্রস্তাব করেন।
সভায় লন্ডনসহ বাংলাদেশী অধ্যুষিত প্রবাসী কমিউনিটির টেলিভিশন ও সংবাদপত্রগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞাপন সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনেক বক্তা জোর দাবী জানান। তাঁরা বলেন দেশে বাংলা ভাষার চর্চা, পরিচর্যা ও বিকাশের দায়িত্ব পালন করার সুবাদে যদি টেলিভিশন ও সংবাদপত্রগুলো সরকারের বিজ্ঞাপন সুবিধা পেতে পারে, তাহলে ঠিক একই ভূমিকা পালনকারী প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির টেলিভিশন ও সংবাদপত্রগুলোও সরকারের বিজ্ঞাপন সুবিধা পাওয়া উচিত। কিন্তু অতীতে এই উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশে এই প্রস্তাবটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে বক্তাগণ আশা প্রকাশ করেন।
সাংবাদিকতার যথাযথ মানোয়ন্নের লক্ষ্যে জাতীয় ও মফস্বলের সংবাদকর্মীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার নীতিমালা সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত বলে অনেক সাংবাদিক অভিমত ব্যক্ত করেন। এক্ষেত্রে পিআইবিকে আরো শক্তিশালী করাসহ টেলিভিশন ও সংবাদপত্রগুলো নিজেরা যাতে উদ্যোগ গ্রহন করে সে বিষয়টিও সরকারের নীতিমালায় থাকা উচিত বলে অনেক বক্তা মনে করেন।
সভায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রসঙ্গে কোনো কোনো বক্তা বলেন আমাদের খুবই দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা হলো এই আইনটি সাংবাদিকতায় শৃঙ্খলা রক্ষার পরিবর্তে সাংবাদিকদের নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই অসুস্থ চর্চা থেকে কীভাবে বের হয়ে আসা যায় সে বিষয়ে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সরকারকে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করবে বলে বক্তাদের অনেকে আশা প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে হয়রানি ও গুজব ছড়ানো বন্ধের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তা যেন সাংবাদিকতার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে, সেই ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় সাংবাদিক কামাল আহমেদ গভীর মনযোগ দিয়ে সকলের বক্তব্য শোনেন এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর সংস্কার কমিশনের কাছে লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশী-ব্রিটিশ গণমাধ্যমকর্মীদের মূল্যবান সুপারিশসমূহ পৌঁছে দেবেন বলে সকলকে আশ্বস্ত করেন।