গোলাপগঞ্জ কৈলাশটিলা এলপিজি প্ল্যান্ট চালুর সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

ব্যুরো প্রধান,সিলেট অফিসঃ গোলাপগঞ্জের ‘কৈলাশটিলা এলপিজি প্ল্যান্ট’ ফের চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এখানকার এলপি গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারী আরপিজিসিএল-এর এলপিজি প্ল্যান্টে উৎপাদন বন্ধের প্রায় পৌণে ২বছর পর প্ল্যান্টটি চালুর সিদ্ধান্ত এলো।অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২২ মার্চ জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ‘সিলেট গ্যাস ফিল্ড হতে প্রাপ্ত এনজিএল আরপিজিসিএল এর কৈলাশটিলা প্ল্যান্টে সরবরাহ করতে হবে।কৈলাশটিলা প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য প্রস্তাব মোতাবেক এ্যাকোয়া রিফাইনারিকে সরবরাহ করতে হবে।’ জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে গত বুধবার এ প্রতিবেদক আরপিজিসিএল-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, ‘চালুর বিষয়টি তারা এনালাইসিস করছেন।গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদরের টিকরবাড়ি এলাকায় স্থাপিত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিঃ সংক্ষেপে আরপিজিসিএল-এর কৈলাশটিলা এলপিজি প্ল্যান্টের উৎপাদিত পেট্রোল মানসম্পন্ন না হওয়ায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিপিসি পেট্রোল নেয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। আরপিজিসিএল প্ল্যান্ট বন্ধ থাকায় উপজেলার দাড়িপাতনস্থ সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ‘কৈলাশটিলা এমএসটিই গ্যাস ফিল্ড’ খনি থেকে উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ এনজিএল(এলপি গ্যাস ও পেট্রোল তৈরির কাঁচামাল) প্রতিদিন পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। অপরদিকে আরপিজিসিএল প্ল্যান্টের উৎপাদিত এলপি গ্যাস না পেয়ে পাশেই স্থাপিত এলপি গ্যাস বটলিং (সিলিন্ডার গ্যাস) কারখানাটি প্রায় পৌনে ২ বছর থেকে বন্ধ রয়েছে। নতুন করে গ্যাস পাওয়া কৈলাশটিলার ৭নং কূপ থেকেও গত ৭মে উত্তোলন শুরু হয়েছে এবং সেখানেও প্রতিদিন এনজিএল আসছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, এলপি গ্যাস বটলিং কারখানা প্রতিমাসে প্রায় ১হাজার নিম্নআয়ের পরিবারকে কমমূল্যে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করতো। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় এবং গ্যাস ফিল্ডের এনজিএল পুড়ানোয় পরিবেশের ক্ষতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।বন্ধ প্রতিষ্ঠান দু’টি চালু এবং এমএসটিই গ্যাস ফিল্ডের এনজিএল পুড়িয়ে ধ্বংস বন্ধ ও পরিবেশ দূষণ রোধে ‘গোলাপগঞ্জ খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা কমিটি’র আহবায়ক সদ্যপ্রয়াত গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ এনডিসি নিজে এলপি গ্যাস বটলিং কারখানা পরিদর্শনসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বিপিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একাধিকবার বৈঠকও হয়। গত ২২ মার্চ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নেতৃত্বে বৈঠকে প্ল্যান্টটি চালুর সিদ্ধান্ত হয়।সিদ্ধান্তের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে আরপিজিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাবেদ চৌধুরীকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে আরপিজিসিএল এর মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী খালেদা বেগমের নিকট প্ল্যান্ট বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কনডেনসেট ছাড়া শুধু এনজিএল দিয়ে উৎপাদনে গেলে প্ল্যান্ট ভায়বল (কার্যকর) নাও হতে পারে। এসব বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে প্ল্যান্টের এ সংক্রান্ত আর্থিক বিষয় উল্লেখ আছে এবং যেসব প্রতিষ্ঠানের মানসম্পন্ন পেট্রোল উৎপাদনের জন্য সিআরইউ (ক্যাটালিটিক্যাল রিফর্মিং ইউনিট) প্ল্যান্ট নেই-তাদের কনডেনসেট দেয়া হবে না উল্লেখ রয়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তারা এনালাইসিস করছেন।’ এনালাইসিসের বিষয় কী জানতে চাইলে বলেন, ‘বিষয়টি মিডিয়াকে জানানো যাবে না।এদিকে, দাড়িপাতনস্থ কৈলাশটিলা এমএসটিই গ্যাস ফিল্ডের উত্তোলিত ‘এনজিএল’ এর ব্যাপারে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেও মন্ত্রণালয়ের সভায় উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে বলেন, ‘এনজিএল সম্পূর্ণটা নয়, ৩০ ভাগ পুড়িয়ে ফেলতে হয়। তবে আমরা চাই আরপিজিসিএল দ্রুত প্ল্যান্ট চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।তিনি বলেন, ‘নতুন পাওয়া কৈলাশটিলা ৭নং কূপ থেকে গত ৭মে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। সেই কূপ থেকেও এনজিএল পাওয়া যাচ্ছে। কৈলাশটিলা ৮ নং কূপ খনন শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। সেখান থেকে গ্যাসের সাথে এনজিএল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া, পাশেই বিপিসি’র এলপি গ্যাস বটলিং প্ল্যান্ট একই কারণে বন্ধ হয়ে আছে। তাই আরপিজিসিএল-এর প্ল্যান্ট যত দ্রুত সম্ভব চালানো দরকার।’

গোলাপগঞ্জ খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা কমিটির সদস্য ও গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সামাদ জিলু দ্রুত প্ল্যান্ট চালুর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘দু’টি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান বন্ধ, মূল্যবান খনিজ সম্পদ পুড়ানো, পরিবেশের ক্ষতি, নিম্নআয়ের মানুষ স্বল্প মূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়া; অনেকগুলো বিষয় একটি প্রতিষ্ঠান চালুর সাথে জড়িত। প্ল্যান্ট চালুর ব্যাপারে অকারণে কালক্ষেপণ গ্রহণযোগ্য নয়।জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান আহমদ বলেন, ‘জনগণের সম্পদ রক্ষার ব্যাপারে কোন আপস নেই। সরকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সুবিধার জন্য কখনো ক্ষতি শিকার করে উৎপাদন করে। এটা সরকারের নীতি-নির্ধারণী বিষয়। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হলে আরপিজিসিএল এর প্ল্যান্ট চালানোর ব্যাপারে গড়িমসি কাম্য নয়। সংশ্লিষ্টদের এর দায়ভার নিতে হবে।উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময় স্থাপিত হয় আরপিজিসিএল এর কৈলাশটিলা এলপিজি প্ল্যান্ট।

You might also like