‘চা শ্রমিকদের আন্দোলনে বাইরে থেকে উস্কানি দেয়া হচ্ছে’

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ চা শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে বাইরে থেকে উস্কানি দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা। ২১ আগস্ট রোববার দুপুরে সিলেট নগরির লাক্কাতুরা চা বাগানের সামনে শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে আমি একমত। তবে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে জড়িত থাকার কারণে শ্রম অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তকেও সম্মান জানাতে হয়। এখন যারা আন্দোলনে আছেন তাদেরকে আমি অনুরোধ করবো, রাস্তা অবরোধ বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যাতে তৈরি না করেন। যেহেতু চা শ্রমিকরা মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, সেহেতু আপনারা বাগানে অথবা কর্তৃপক্ষের অফিসের সামনে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করুন।কিন্তু রাস্তা অবরোধ করে রাষ্ট্রের অথবা সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি করবেন না।

রাজু গোয়ালা বলেন, ৩শ’ টাকা মজুরির পক্ষে আমি একমত। তবে শোকের মাসকে সম্মান জানিয়ে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলাম। এছাড়া আমাদের আন্দোলনের বাইরে থেকে বিভিন্ন সংগঠন ঢুকে পড়েছে। যদি কোনো ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হয়, অরাজকতা, ভাঙচুর বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়, তবে চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা হিসেবে আমি এসবের দায়ভার নেবো না। শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায় করতে হবে। আমাদের চা শ্রমিকদের বাইর থেকে উস্কানি দেয়া হচ্ছে। ফলে রাস্তাঘাটে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করছেন শ্রমিকরা। আমি এর পক্ষে নই।১২০ থেকে ৩শ’ টাকায় দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সিলেটসহ সারা দেশের চা শ্রমিকরা গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নেমেছেন। ৯ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত তারা ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের পর ১৩ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন।

আন্দোলন থামাতে শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হলেও সমাধান আসেনি। সর্বশেষ ২০ আগস্ট শনিবার শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মজুরি ২৫ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তাতে শ্রমিক নেতারা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু বেঁকে বসেন সাধারণ চা শ্রমিকরা। অচলাবস্থা কাটাতে শনিবার রাতে সিলেট ভ্যালির শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক। বৈঠকে স্থানীয় আ’লীগ নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান জানানো হলে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সে আহ্বান মেনে নেন। বৈঠক শেষে রাজু গোয়ালা বলেন, আমাদের মজুরি মাত্র ২৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে আমরা কেউই সন্তুষ্ট না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আশ্বাস দিয়েছেন, ভারত থেকে ফিরে আগামী মাসে আমাদের সাথে বসবেন। আমাদের দাবি-দাওয়া শুনবেন, তাই আমরা তার প্রতি সম্মান জানিয়ে ধর্মঘট আপাতত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি, প্রধানমন্ত্র্রী আমাদের দাবি শুনে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।
রাজু বলেন, সারাদেশের কথা জানি না। তবে আমাদের সিলেট ভ্যালির ২৩ বাগানের শ্রমিকরা আন্দোলন স্থগিত করতে সম্মত হয়েছি। রোববার থেকে শ্রমিকরা যথারীতি কাজে যোগ দেবেন বলে জানান রাজু।সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমানও জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে রোববার থেকে চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন।কিন্তু রোববার সকাল থেকে সিলেটের বাগানগুলোতে দেখা যায় আগের মতোই সুনসান নিরবতা। শ্রমিক নেতৃবৃন্দের আহ্বানকে উপেক্ষা করে ৩শ’ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সকাল থেকে তারা সিলেট মহানগরিতে রাস্তা অবরোধ করেন। পরে জেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর আশ্বাসে শ্রমিকরা রাজপথ থেকে সরে যান। তবে কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন।

You might also like