চৌধুরী হারুনর রশিদ ছিলেন শ্রমিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব

নিউজ ডেক্স
সত্যবাণীঃ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র বন্ধুপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা, ভাষা সংগ্রামী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আজীবন ত্যাগী রাজনীতিবিদ, সাবেক এমপি চৌধুরী হারুনর রশিদের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, শ্রমিকসমাজ ও শ্রমিক আন্দোলনের বর্তমান যে ক্রান্তিকাল চলছে, তা উত্তরণে চৌধুরী হারুনের মতো সত্যনিষ্ঠ ও ত্যাগী শ্রমিক নেতার খুবই প্রয়োজন ছিল। তার নিঃস্বার্থ লড়াই ও আত্মত্যাগ শ্রমিক শ্রেণী তথা শ্রমিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রেরণার উৎস হয়ে বেঁচে থাকবেন।
বক্তারা বলেন, চৌধুরী হারুনর রশিদের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে শ্রমিক-কৃষক তথা সর্বস্তরের মেহনতি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলনকে আরো বেগবান করার আহবান জানান।
১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ টিইউসি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন টিইউসির সহ-সভাপতি মাহবুব আলম। সাধারন সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক সাহিদা পারভীন শিখা, প্রচার সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি মোবারক হোসেন, ব্যাংক কর্মচারি নেতা সিরাজুল ইসলাম, ট্যানারি শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা আক্তার হোসেন, নারী শ্রমিক নেতা সায়েরা খাতুন, নির্মাণ শ্রমিক নেতা আজিজুর রাহমান আজিজ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের শ্রমিক-কর্মচারিরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচার মতো মজুরি পাচ্ছে না। শ্রমিক সমাজ আজ অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার থেকে বঞ্চিত। চাকুরী, চাকুরীর নিশ্চয়তা, কর্মস্থলের নিরাপত্তা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। চাল, ডাল, আটা, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য আজ আকাশচুম্বী। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম প্রতিদিন নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করছে। তাই চৌধুরী হারুনর রশীদের মতো সংগ্রামী মনোভাব শ্রমিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
উল্লেখ্য, আজীবন সংগ্রামী, নির্লোভ রাজনীতিবিদ চৌধুরী হারুনর রশিদ ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। রাজনৈতিক ও শ্রমিক আন্দোলনের বিশাল ক্যানভাসে ছড়ানো ছিল তার কর্মকান্ড। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে প্রথম কারাবরণ করেন। একনাগাড়ে ৪ বছর কারাভোগ ’৫৬ সালে মুক্তি পান। মুক্তির ২ বছর পর সামরিক শাসন জারী হলে তাঁর বিরুদ্ধে আবারও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী হয়। রাজনীতি ও শ্রমিক সংগঠনের কাজে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েও দীর্ঘ ১৩ বছর আত্মগোপনে থেকে সংগঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলেন।
’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ, সিপিবি, ছাত্র ইউনিয়নের সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে স্বাধীন বাংলাদেশেও তাঁকে আবারও গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে যেতে হয়।
তিনি একাধারে ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য, ন্যাপ-এর সহ-সভাপতি, টিউইসি ও রেল শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। দীর্ঘ ৫ দশক রাজনীতি ও শ্রমিক আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনের তাঁর ঘনিষ্ট সহযোদ্ধা ছিলেন আজীবন ত্যাগী রাজনীতিবিদ ও নির্লোভ ব্যক্তিত্ব জননেতা সৈয়দ আলতাফ হোসেন এবং জননেতা পীর হবিবুর রহমান। চৌধুরী হারুনর রশীদসহ এই ত্রয়ী ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

You might also like