ছাতকে সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এখন নিজেই রোগী ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টি নন্দন ভবন ডাক্তার বিহীন
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান উপকেন্দ্রটি একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে হযবরল অবস্থায় চলছে। এছাড়ও সম্প্রতি উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হারুন অর রশিদ প্রশিক্ষনে থাকায় চিকিৎসা সেবা মারাত্বক ব্যাহত হয়ে পড়েছে। এ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান উপকেন্দ্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে নিজেই রোগে ভোগছে। জনবলের অভাবে এই অঞ্চলের মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ২টার দিকে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্রের পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা জোৎসা আরা বেগম একটি কক্ষে তিনজন মহিলা রোগীকে প্রেসক্রিপশন করছেন। অন্যান্য সব কক্ষ থালাবদ্ধ রয়েছে। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার কোথায় জানতে চাইলে তিনি অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন প্রশিক্ষনে গেছেন। ৩১ মে করোনা ভ্যাকসিন এর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার তারিখ ছিল এ বিষয়ে আপনি কিছু জানেন কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন মাইকিং করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ এ সেবা কেন্দ্রটিতে মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিস্ট, এম এল এস ও আয়া পদ শুন্য রয়েছে। হারুন অর রশিদ তার নিজ উদ্যোগে বেতন ভোগী ২ জন এম এল এস নিয়োগ দিয়ে ঔষদ বিতরন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ১৯৮২-৮৩ অর্থ বছরে ১ একর ৮০ শতক ভূমির উপর এ কেন্দ্রটির আনুষ্টানিক কার্য়ক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে একটি দ্বিতল ভবন নির্মান করা হয়।জানা যায়, উপজেলার খুরমা উত্তর ইউনিয়ন, দক্ষিন খুরমা ইউনিয়ন ও গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নসহ তিনটি ইউনিয়নের একটি বৃহৎ অংশের জনগোষ্টির চিকৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান উপকেন্দ্রটি। এ কেন্দ্রর দ্বিতল ভবনটি উদ্ভোধন করা হলেও নির্মান ত্রুটি এবং অসমপূর্ণ কাজ থাকার কারনে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ভবনটি হস্তান্তর করেনি। কিন্তু এ ভবনেই চলছে কেন্দ্রটির কার্যক্রম। বর্তমানে ১ জন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়েই চলছে ইউনিনের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রটি। পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা জোৎসা আরা বেগম সপ্তাহে দুদিন এসে ডিউটি করছেন।
গত ৩১ মার্চ এ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান উপকেন্দ্রে করোনা ভ্যাকসিন নিতে গেলে এ প্রতিবেদককে দেখা মাত্র রহস্যজনক ভাবে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হারুন অর রশিদ তার কক্ষের দরজা বদ্ধ করে দেন। হারুন অর রশিদ এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, সময়মত কেন্দ্রে না আসাসহ রোগীদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরন করার অভিযোগ রয়েছে। তার কক্ষে বিভিন্ন ঔষধ কো¤পানির রিপ্রেজেনটেটিভরা ভিড় করে থাকেন। এতে চিকিৎসা নিতে আসা মহিলাসহ রোগীরা ডাক্তারের কাছে রোগের বর্ননা দিতে লজ্জাবোধ করেন। এ হাসপাতালটি ঔষধ কো¤পানির রিপ্রেজেনটেটিদের দখলে। রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে তাদের কো¤পানির ঔষুধ লেখা আছে কি না তা দেখতে রোগীদের ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। এতে করে রোগী ও তার স্বজনরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিশাল সীমানা প্রাচীর থাকলেও প্রবেশ পথে কোন গেইট না থাকায় রাতের বেলায় অবাধে চলে লোকজনের বিচরন। বেসরকারী ভাবে ব্যাক্তিগত টাকায় এম,এল,্এস পদে দুইজনকে নিয়োগ দেয়ায় হারুন অর রশিদের আয়ের উৎস নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে হারুন অর রশিদ সব সময় তার উপর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। এ বিষয়ে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলেও কতৃপক্ষের টনক নড়েনি।এ বিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রাজীব চক্রবর্তীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিব করেননি। সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: মো. শামস উদ্দিন জানান, বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত কয়েক হাজার পরিবারের কথা বিবেচনাকরে মানুষের স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করতে সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান উপকেন্দ্রটিতে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, ডাক্তার ও জনবল নিয়োগে অতিদ্রুত প্রয়োজনিয় ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য সংশি¬ষ্ট কতৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।