ছাতকের উত্তর খুরমা ইউনিয়নে ২৫০০ টাকার সরকারি সহায়তার তালিকায় অনিয়ম!
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত আড়াই হাজার টাকা সহায়তা কার্যক্রমে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার খুরমা উত্তর ইউনিয়নে ব্যাপক স্বজনপ্রীতি ও আর্থীক ভাবে স্বচ্ছল জনপ্রতিনিধির আত্মীয়-স্বজনের নাম তালিকায় অর্šÍভুক্ত করা হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সিল স্বাক্ষর বিহীন একটি তালিকা প্রকাশ হলে বঞ্চিতদের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ দিকে এ ইউনিয়নে করোনা পরিস্থিতিতে সরকার কতৃক হতদরিদ্রদের জন্য ত্রাণ সহায়তার ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়ের ত্রান সহায়তা পৌছায়নি হতদরিদ্রদের হাতে। ইউনিয়ন তথ্য বাতায়নে ২য় পর্যায়ের তালিকা আপলোড করা হলেও ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়ের ত্রানসহায়তা ও ২৫০০ টাকার সরকারি সহায়তার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি অভিযোগও উঠেছে।
অনিয়মের ফলে অনেক অসচ্ছলের প্রণোদনা পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। জাতির সংকটময় মুহূর্তে বিপাকে পড়া মানুষদের তালিকায় এই অনিয়ম অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল। উপকারভোগীরাও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
জানা গেছে, এই ইউনিয়নে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের নিকট খসড়া তালিকা জমা দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায় চুড়ান্ত তালিকা জেলা প্রশাসনে প্রেরন করা হয়েছে।তবে তালিকা প্রকাশ না করায় এ ইউনিয়নে মোট কতজন পাচ্ছে পরিবার পাচ্ছে নগদ আড়াই হাজার করে সরকারি অর্থ সহায়তা জানা যায়নি। প্রকাশিত স্বাক্ষর বিহীন চার পিষ্টার একটি তালিকা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার অসম্পুর্ণ। রয়েছে জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ঠজনের নাম।এ ছাড়া, তালিকায় যুক্ত হয়েছে অনেক বিত্তশালী ও জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়-স্বজনের নাম। রয়েছেন এক পরিবারের একাধিক সদস্যও।
এ বিষয়ে খুরমা উত্তর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য সুন্দর আলী আঙ্গুর বলেন, আমি ৫০ জনের তালিকা দিয়েছিলাম। ৪০ জন তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বাকিগুলো ইউপি চেয়ারম্যান দিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন অনিয়ম বা স্বজনপ্রীতির বিষয় আমার জানা নাই।৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্যা নুর জাহান বেগম বলেন, পুরুষ মেম্বাররা ৫০ টি করে আর মহিলা মেম্বাররা ৩০ টি করে নাম তালিকায় দিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মৈশাপুর গ্রামের একজন মাষ্টার তালিকা যাচাই কাজ করেছেন। তিনি ভাল বলতে পারবেন। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩ পর্যায়ের ত্রান সহায়তা (আগামীকাল) মঙ্গলবার বিতরন করা হবে।৪ নং ওয়ার্ড সদস্য নুর উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিব করেননি।
ছাতক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জর্জ কোর্টের এপিপি অ্যাডভোকেট ছায়াদুর রহমান ছায়াদ বলেন, করোনা ভাইরাস সংকটময় পরিস্থিতিতে ছাতক উপজেলার অন্যন্য ইউনিয়নের তথ্যবাতায়নে সরকারী ত্রানসহায়তা উপকারভোগীদের তালিকা তথ্যবাতায়নে প্রকাশ করা হলেও খুরমা উত্তর ইউনিয়নে কোন তালিকা-ই প্রকাশ করা হচ্ছেনা। এতে করে এই ইউনিয়নে ত্রান বিতরন কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ব্যাপক সংকটে পড়েছন স্বল্প আয়ের মানুষ। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টাকা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ধরণের অনিয়মের কারণে বঞ্চিত হবেন অনেক অসহায় মানুষ। গুরুত্বপূর্ণ এই কাজে বিশাল অনিয়ম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
বিশিষ্ট সমাজ সেবক হাজী ইসহাক আলী (মহাজন) বলেন, ২৫০০ টাকার সরকারি সহায়তার তালিকায় ধনী ও জনপ্রতিনিধির পছন্দের লোকজনের নাম দেওয়া হয়েছে। গরীব হতদরিদ্রদ্রের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ২৫০০ টাকার সরকারি সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ। একশ্রেণীর লুটেরা-দৃর্নীতিবাজরা কৌশলে গরীবের আমানত খেয়ানত করছে। এটা মেনে নেওয়া যায়না। যাচাইক্রমে প্রকৃত উপকারভোগীদের তালিকা করে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানান তিনি।
উত্তর খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম কবির বলেন, তালিকা করার জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি রয়েছে। জনপ্রতিধিরা তালিকা করে দিয়েছেন। চড়ান্ত তালিকা জেলায় পাঠানো হয়েছে।করোনা ভাইরাস সংকটময় পরিস্থিতিতে অনিয়মের ভরপুর বর্তমান এই তালিকা বাতিল করে বাচাইয়ের মাধ্যমে নতুন ভাবে তালিকা প্রণয়ন করে প্রধানমন্ত্রীর উপহার প্রকৃত উপকারভোগীদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য সুনামগঞ্জ জেরা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানান হতদরিদ্র বঞ্চিতরা।