ছাতকের হাওরে-হাওরে ধানকাটার উৎসব
সিলেট অফিস
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার হাওরে-হাওরে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা। এখানের হাওর এলাকায় বোরোধান কাটা, মাড়াই-ঝাড়াইয়ের উৎসবে মেতে উঠেছেন কৃষকরা। ছাতকের সকল বিল-হাওরে এখন পাঁকা সোনালী বোরো ফসলে যেন বাতাসে দোল খাচ্ছে। এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হওয়ায় উপজেলার সর্বত্রই কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে।
ছাতক থেকে সংবাদদাতা জানান, চলতি মৌসুমে ছাতকে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এ পর্যন্ত বন্যা-বৃষ্টি না থাকায় বোরো ধান কাটা, মাড়াইয়ের সুবিধা পেয়েছেন তারা। গত কয়েক বছর ধরে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে আগাম জাতের বোরো ধান চাষাবাদ হওয়ায় ফলে কিছু-কিছু এলাকার পাকা ধান আগে-ভাগেই কাটা শুরু হয়। ক’’দিন ধরে এখানে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে আর কৃষক-কিষাণীরা ধান কাটা, মাড়াই-ঝাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ছাতক উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ছোট-বড় বিল-হাওর রয়েছে ৬৩টি। চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো চাষাবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৯ শ’ ১০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে উপসী জাতের ১০ হাজার ৭০০ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ধান ২ হাজার ১০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের বোরো ধান ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে।
উপজেলার নাইন্দার হাওরসহ সরেজমিনে কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ধান কাটার যেন এক মনোরম দৃশ্য। হাওরে বোরো ধান কাটা ও মাড়াই-ঝাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকরা। পাশাপাশি কিষাণীরা ধান ঝাড়াই করে শুকিয়ে গোলায় তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। হাওরে ধানের ‘খলা’য় কাজ করছেন কৃষক-শ্রমিক, নারী ও শিশুরা। কোনো কোনো হাওরে ধানকাটা, মাড়াই চলছে মেশিনের মাধ্যমে। আবার কোনো এলাকায় শ্রমিকরা ধান কাটছে, মাড়াই-ঝাড়াই করছেন সনাতন পদ্ধতিতে।
কৃষক-শ্রমিকরা কেউ ক্ষেত থেকে ধান কেটে খলা’য় টানছে, কেউ রোদে ধান শুকানোর কাজ করছে, কেউ মেশিন দিয়ে ধান কাটা-মাড়াই এবং কেউ-কেউ সনাতন পদ্ধতিতে ধান মাড়াই-ঝাড়াইর কাজে করছেন।
স্থানীয় একাধিক কৃষক জানান, বোরো ধানকাটা শুরু হওয়ার আগে বা পর থেকে এখানে তেমন শিলাবৃষ্টি হয়নি। জলাবদ্ধতায় কিছু ফসলের ক্ষতি হলেও এবার বোরোর ফলন ভালো হয়েছে।
নোয়ারাই ইউনিয়নের কৃষক ও সাবেক মেম্বার মনির উদ্দিন জানান, উপজেলার সবচেয়ে বড় নাইন্দার হাওরের কিছু ফসল জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়েছে। মির্জার খালে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের ফলে জলাবদ্ধতায় হাওরের ফসল নষ্ট হয়েছে। স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে বাঁধ কেটে জলাবদ্ধতা থেকে হাওরের অনেক ফসল রক্ষা করেছেন।
কালারুকা ইউনিয়নের কৃষক সদন নুর এবং আব্দুল আউয়াল জানান, তাদের ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। ফসল কাটার কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আলী, আরশ আলী, জাকির হোসেন, আজাদ মিয়া, মোশাহিদ আলী, মানিক মিয়া, হারুনুর রশিদ জানান, ছাতকের সব এলাকায় অতিবৃষ্টি বা খরায় এ মৌসুমে বোরো ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। প্রকৃতি অনুকুলে থাকলে স্বপ্নের সোনালী ফসল তারা যথাসময়ে গোলায় তুলতে পারবে বলে আশাবাদী।
ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিক হোসেন খান জানান, চলতি মৌসুমে ছাতকে বোরো ধানের ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। এক সপ্তাহ আগ থেকেই ধান কেটে নিতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এখানে আগাম জাতের কিছু বোরো ধানকাটা শেষ হলেও বিল-হাওরের অর্ধেকের বেশি ধানকাটা হয়ে গেছে। আরো এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে এখানের সব বোরো ধানকাটা শেষ হয়ে যাবে।
ছাতকের ইউএনও গোলাম মোস্তফা মুন্না জানান, উপজেলার নাইন্দার হাওর, ফাটার হাওরসহ বড়-বড় হাওরগুলোর পাকা বোরো ধান প্রায় অর্ধেক কাটা সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত ধানকাটার জন্য কৃষকদের আগ থেকেই পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সরকারি ভর্তুকি মূল্যের ৪৩টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার (ধান কাটার মেশিন) দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। কৃষকদেরকে দ্রুত বোরো ধান কেটে গোলায় তুলতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।