জামালগঞ্জে এখনো শেষ হয়নি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ, শংকিত কৃষক

শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী

সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। একারণে ফসল নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন জামালগঞ্জের লাখো কৃষক। মার্চের হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের বর্ধিত সময় শেষ হলেও জামালগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ এখনও শেষ করতে পারেনি।চলতি বছর জামালগঞ্জ উপজেলার হাওরগুলোতে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে ৩৬টি প্রকল্পের কাজ হাতে নেয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২৮ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার নিয়ম ছিল। নির্ধারিত সময়ে শতভাগ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় কাবিটা স্কীম বাস্থবায়ন ও মনিটরিং কমিটি পিআইসিকে ১০ মার্চ পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়। কিন্তু বর্ধিত সময় পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ বাঁধের কাজ নীতিমালা অনুযায়ী সম্পন্ন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট পিআইসিরা। বেশ কয়েকটি বাঁধ প্রকল্পের অনেকাংশ উপরিভাগ কেবল ফিটফাট, ভিতরে যেন সদর ঘাট বলছেন কৃষকরা।
সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকায় অদৃশ্য কারণে “বাঁধের কাজ সমাপ্ত, কৃষকের স্বস্তি” এমন সংবাদ প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটি ও স্থানীয় কৃষকরা ক্ষুব্ধ প্রতিকৃয়া ব্যক্ত করেন।

গত বৃহস্পতিবার হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় ও সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি ইয়াকুব বখত বহলুল’র নেতৃত্বে সংবাদিকদের সমন্বয়ে একটি টীম জামালগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি হাওরের বিভিন্ন বাঁধ প্রকল্প সরজমিন পরিদর্শন করেন।পরিদর্শণে বাঁধে কাজে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পান। অযতেœ অবহেলায় কৃষকের লালিত স্বপ্নকে উপহাস করছে বাঁধে বাঁধে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম আর দায়হীন কর্মকাণ্ড। কোথাও আধাফুট, কোথাও এক থেকে দেড়ফুট, কোথাও পুরাতন বাঁধের উপরিভাগ কেবলি কোনরকম করেই প্রত্যেকটি বাঁধের উপরের অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বাঁধে মাটি ফেলার পর নিয়ম অনুয়ায়ী দূরমুজ করা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলোতে (ক্লোজারগুলোতে) আশংকাজনক পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বাঁধের উপরে ও দু’পাশে ঘাস লাগানো এবং এ সবের পরিচর্যা করার বাধ্য বাধকতা থাকলেও প্রকল্পের স্থানে স্থানে পিআইসির কাউকে দেখা যায়নি। কিছু কিছু বাঁধে দায়সারা ভাবে ঘাস লাগানোর প্রচেষ্টা দেখা গেলেও সমুদয় ঘাস মরে আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। অনেকাংশেই যত্রতত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে প্রকল্পের ছিড়াফাড়া, ভাঙ্গাচোরা সাইনবোর্ড।
বেহেলী ইউনিয়নে বৌলাই নদীর দুপাশের বাঁধগুলোতে এরকমই দৃশ্য দেখা যায়। বিস্তীর্ণ হালির হাওরের ফসল রক্ষায় স্থানীয় বদরপুর গ্রাম থেকে হাওরিয়া আলীপুর অভিমুখী ২০নং পিআইসির বেহালদশা দেখা গেছে। বৌলাই নদীর তীর ঘেঁষে এই প্রকল্পে ঘইন্যারখাড়া নামক স্থানে নতুন একটি ক্লোজার বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। এটি নদীর তলদেশ অবধি খাড়া অবস্থায় থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে ভাঙ্গনের আশংকা রয়েছে। এই ক্লোজারটিতে এখনও কাজ সম্পন্ন হয়নি। শ্রমিকরা এখনও খাড়া স্লোভে কাজ করছে। বাঁধের গোড়া থেকেই বস্তায় বস্তায় মাটি ভরছে ক্লোজারটি বাঁধার জন্য। তাছাড়া এই প্রকল্পের অনেকাংশ উপরিভাগ কেবল কেবল ফিটফাট করছেন পিআইসির লোকেরা। ১৯নং পিআইসির প্রকল্পের অনেকাংশ জুড়েই বাঁধে ফাটল ধরেছ, যা ভারী বর্ষণে নিশ্চিহ্ন হবার পর্যায়ে রয়েছে। এই প্রকল্পের মাহমুদপুর ক্লোজারটি গত বছরের পুরাতন বাঁশখুটার আঁড় দিয়েই চালিয়ে দিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। এই ক্লোজারটির সর্বত্রই ফাটল দেখা গেছে। ভারী বৃষ্টিপাত হলেই বাঁধের দু’পাশ ধ্বসে যাবার আশংকা রয়েছে। ১৬নং পিআইসির বাঁধের অবস্থাও অসমাপ্ত রয়ে গেছে। সেখানে বাঁধের দুপাশের মাটি এলোপাথাড়ি ছড়িয়ে পড়ছে। দুরমুজ করে ঘাস লাগানোর কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ১৭নং পিআইসির প্রকল্পের একই দশা। অপরদিকে ৫নং এবং ৬নং পিআইসির পুরাতন বাঁধের উপরিভাগ অল্প মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে পুরো বাঁধের কাঠামো। ৬নং পিআইসির ক্লোজারটির কাজ এখনও সমাপ্ত হয়নি। কর্মরত শ্রমিকরা বলেছেন আরো কয়েকদিন লাগবে। জামালগঞ্জে স্থানীয় হালির হাওর এবং মহালিয়া হাওরে বৌলাই নদীর তীরবর্তী এসব বাঁধ পরিদর্শন করে হাওর বাঁচাও আন্দোলন ও সাংবাদিক টিমটি।

টিমের সাথে হাওর বাঁচাও আন্দোলন জামালগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি শাহানা আল আজাদ, সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ছিলেন।হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি মো.ইয়াকুব বখত বলেন, জামালগঞ্জের বাঁধের কয়েকটি কাজ দেখছি তা খুবই খারাপ অবস্থা। হাতে গুনা কয়েকজন সংবাদকর্মী কি কারণে পত্রিকায় প্রচার করেছে বাঁধের কাজ সমাপ্ত এবং কৃষক স্বস্তি এটো বোধগম্য নয়। এমন মিথ্যা প্রচারণা হাওরের কৃষকদের তথা দেশের ক্ষতির সামিল। বাস্তবে বাঁধের কাজ সঠিক ভাবে তো হচ্ছেই না, বরং অজানা কারণে কতিপয় সংবাদকর্মী তোষোমোদী করে কাকে খুশী করতে কৃষকের ভাগ্য নিয়ে অতিরঞ্জিত বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি জেলা প্রশাসকের কাজে এব্যাপারে তড়িৎ পদক্ষেপ নেবার আহবান জানান।হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, কয়টা পত্রিকায় হাওর বাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে, কৃষক স্বস্তি পেয়েছে বলে উদ্দেশ্য প্রণোদিত যে বানোয়াট সংবাদ ছেপেছে, আমরা কৃষকদের পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দ্রুত বাঁধের কাজ সমাধানের দাবী জানিয়ে তিনি এব্যাপারে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বাঁধ ভেঙ্গে হাওরডুবি হলে এর দায় কাবিটা স্কীম বাস্থবায়ন ও মনিটরিং কমিটিকেই নিতে হবে। বলে জানান তিনি।

You might also like