জিসিএ বাংলাদেশ হবে এই অঞ্চলের ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’, আশা প্রধানমন্ত্রীর

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ ঢাকার গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের (জিসিএ) আঞ্চলিক কার্যালয় ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জলবায়ু অভিযোজন ব্যবস্থার সমাধান হিসেবে কাজ করবে বলে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেছেন।কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে তিনি বলেন, আমি আশা করি এই আঞ্চলিক অফিসটি বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সেরা অভিযোজন পদ্ধতিগুলো ভাগ করবে এবং এই অঞ্চলের সমস্যাগুলো বিনিময় করবে। এটি এই অঞ্চলে অভিযোজন ব্যবস্থার উত্সাহ এবং একটি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।ভার্চুয়ালি শেখ হাসিনা এবং জিসিএ বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন যৌথভাবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ‘গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের (জিসিএ) বাংলাদেশ’ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটও বক্তব্য রাখেন।জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা দেশগুলোকে এই সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে এই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুত জাতীয় সহায়তা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

ঢাকায় সদ্য চালু হওয়া জিসিএ অফিস সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিযোজনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। জিসিএ বাংলাদেশ অফিস দক্ষিণ এশিয়াতে অভিযোজন এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধির জন্য গ্রামীণ কর্মকাণ্ডকে সহায়তা ও উন্নত করবে।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, ভূমিধস, হিমবাহে ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে দক্ষিণ এশিয়া। এমনকি তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (প্রাক শিল্পায়ন যুগের তুলনায়) বাড়লেও বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। দুর্যোগে শিশু, নারী, বয়স্ক এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের ঝুঁকির বিষয়টিও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন ও গ্রিন হাউস গ্যাসের কারণে বাড়তে থাকা তাপমাত্রা এবং অন্যান্য পরিবেশগত ক্ষতি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের সরকার ২০০৯ সালের বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে নানা পদক্ষেপ এবং অভিযোজন কর্মসূচি নিয়েছে। ২০০৯ সালে আমরা জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছি এবং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত ৪৩ কোটি ডলার নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, অভিযোজন বিষয়ক কর্মকাণ্ডে সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর জিডিপির এক শতাংশ, অর্থাৎ ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করে ব্যয় করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ শীর্ষক ১০০ বছরের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।প্রধানমন্ত্রী জানান, কেবল গত দশকেই প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মানুষ যা এই অঞ্চলের অর্ধেক জনসংখ্যা জলবায়ু সম্পর্কিত বিপর্যয়ে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যের কারণে সৃষ্ট একটি দুর্যোগ থেকে মানুষ সুস্থ হয়ে উঠার আগে আরেকটি আঘাত হানে যা যে কোনো অগ্রগতির ক্ষতি হয়। এই চক্রের অবসান ঘটাতে দক্ষিণ এশিয়ায় আরও বেশি স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা দরকার।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ‘অনন্য নজির’ স্থাপন করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় এখানকার জনগণ বারবার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। তারপরও পরিবর্তন করার মতো এখনও অনেক কিছু আছে।তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশেরও অভিযোজন বিষয়ে একই ধরনের অভিজ্ঞতা এবং কর্মসূচি রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা একসাথে আমাদের নিরাপত্তা এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারব।’প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে ডেল্টা কোয়ালিশনকে সমর্থন করার সুযোগটি অন্বেষণ করার জন্য জিসিএর’র প্রতি আহ্বান জানান।অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল এবং মালদ্বীপের মন্ত্রীরা এবং জিসিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাট্রিক ভারকুইজেন বক্তব্য রাখেন।

You might also like