জৈন্তাপুরে খাস জমি অবৈধ দখল ও মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের নয়াখেল পূর্ব বালিদাড়া এলাকার জনসাধারণ লালাখাল চা-বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের এলাকার নিরীহ জনগণকে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি ও সরকারি খাস জায়গা অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ করেছেন। জৈন্তাপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, ২৬ আগস্ট শনিবার বিকেলে জৈন্তাপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসি লালখাল চা-বাগান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে মিথ্যেও হয়রানিমুলক মামলা দায়েরসহ নানাভাবে স্থানীয় সাধারণ জনগণকে নির্যাতন করে আসছে বলে অভিযোগ করেন। মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার ও স্থানীয় কৃষকদের উপর অব্যাহত জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন আহবান করা হয়।এলাকাবাসির পক্ষে এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউপি সদস্য মো. হাজির আলী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছর থেকে বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের লিজ‘র বাইরে স্থানীয়দের ভোগ-দখলীয় এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা জোরপূর্বক জবরদখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত। প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন সময়ে ডাকাতি এবং বাগানের গাছ কাটার অভিযোগ এনে মিথ্যে মামলা দিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ নিরীহ মানুষদের হয়রাণি করছেন। এসব মামলা, ভয়ভীতি ও হুমকি‘তে আমরা নিরীহ জনগণ অসহায় এবং চরম নিরাপত্তহীনতায় মধ্যে রয়েছি। প্রতিকার চেয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অবগত করা হলেও এলাকাবাসী সুবিচার থেকে বঞ্চিত।বিগত মাঠ জরিপে লালাখাল চা-বাগান কর্তৃপক্ষ কৌশলে সরকারের ১নং খাস খতিয়ানের জায়গা সরকারি ছাপা পর্চায় সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে লিজগ্রহিতা এম. আহমদ টি এন্ড ল্যান্ড কোম্পানি লিঃ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাগান মালিক মোহাম্মদ সাফওয়ান চৌধুরীর নামে বেআইনীভাবে ১৬ শ’ একর জমি রেকর্ডভূক্ত করে নেন। সরকারের পক্ষে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে পুনরায় রেকর্ড সংশোধন করা হয়েছে। এই ঘটনায় লালাখাল চা-বাগান কর্তৃপক্ষ আমরা এলাকার নিরীহ লোকজনের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে মিথ্যে হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমুলক মামলা দায়ের করে স্থানীয় এলাকাবাসীর ভোগ-দখলীয় ভূমি জবরদখল করার চেষ্টা চালান। তাদের অবৈধ ভূমি দখলের প্রতিবাদ করায় স্থানীয় এলাকাবাসির বিরুদ্ধে নিকট অতীতে একাধিক মিথ্যে ও ষড়যন্ত্রমুলক মামলা দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে আমিসহ এলাকার লোকজনের উপর কয়েকটি মিথ্যা মামলা রয়েছে।বাগান কর্তৃপক্ষ মামলার এজাহারে কৌশলে জায়গার দাগ ও তপশীল উল্লেখ করেন নাই। মামলা নং-১৬, তারিখঃ ২৩ জুলাই, ২০২৩ এবং মামলা নং-৩ তারিখঃ ৫ জুন, ২০২৩। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, এ সব বিষয়ে পুলিশ অবগত হলেও ঘটনার সঠিক তদন্ত না করে মামলা রেকর্ডভূক্ত করায় নিরীহ জনগণ নানাভাবে হয়রানি শিকার হচ্ছেন।

এতে আরো বলা হয়, বাগান কর্তৃপক্ষের লিজ আবেদনে লালাখাল গ্র্যান্ট ৫শ’ ৮৭ একর, ২৭ শতক, উত্তর বাঘছড়া গ্র্যান্ট ৪শ’ ১৫ একর, ৭০ শতক, দক্ষিণ কামরাঙ্গীখেল ১শ’ ৩৫ একর, ৫৭ শতক ৫০ নং খতিয়ানে লিজের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আবার ২০২ নং খতিয়ানে তাদের নামে রেকর্ড করা হয়েছে, দক্ষিণ বাঘছড়া গ্র্যান্ট ১শ’ ৭৮ একর, ৮০ শতক ভূমি। বাগান কর্তৃপক্ষের ২০১৩ সালে পুনরায় লিজ নবায়ন আবেদনে মোট ১৩ শ’ ১৭ একর ৩৪ শতক ভূমি উল্লেখ করা হয়েছে। লিজের বাইরে লালাখাল চা-বাগান কর্তৃপক্ষ লালাখাল গ্র্যান্ট, উত্তর বাঘছড়া, দক্ষিণ বাঘছড়া মৌজার ৯টি দাগে ১ হাজার ৯৪ একর, ৭৯ শতক জমি জোরপূর্বক লিজ ছাড়া ভোগদখল করে আসছেন।এলাকাবাসির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের নিকট লালাখাল চা-বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরকারি ১নং খাস খতিয়ানের ভূমি অবৈধ দখল সংক্রান্ত অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। সরকারি খাস ভূমি অবৈধভাবে দখল করে নিজেরা শ’ বছরের পুেরানো গাছ-পালা কেটে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেন। বাগানের ম্যানেজারসহ চা-বাগান কর্মকর্তারা গাছ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করে তাদের এই অবৈধ কর্মকান্ড আড়াল করতে এলাকাবাসির বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করেন। লালাখাল চা-বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিগত ১৪২০ বঙ্গাব্দ থেকে ১৪২৩ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত লিজকৃত ভূমির উন্নয়ন কর পরিশোধ করেন নাই। সরকারি বকেয়া ৩২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করলে সম্পূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে।লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, নয়াখেল পূর্ব বালিদাড়া এলাকার অন্তত ৪০/৫০টি ভূমিহীন পরিবার বিগত ৩০/৪০ বছর যাবত নয়াখেল মৌজার সরকারি ১নং খাস খতিয়ান ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমির জঙ্গল পরিস্কার করে আবাদ করেন। এসব জায়গা ভোগ-দখল করে এখানে কৃষিকাজ ও পান-সুপারির বাগান, ঝাড়ালেবু বাগানসহ শীতকালীন বিভিন্ন শাক-সবজি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। ২০১৩ সালে প্রশাসনকে মিথ্যে তথ্য দিয়ে আমাদের বসতবাড়ি ভাংচুর করে ধানক্ষেত ও লেবু বাগান ধ্বংন করে অন্তত ৫০/৬০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে বাগান কর্তৃপক্ষ।

লালাখাল চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের ২ মে লিজ নবায়ন করতে কৌশলে লিজ চুক্তিপত্রে আমাদের ভোগ-দখলীয় ব্যক্তি মালিকানাধীনসহ খাসিয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জায়গা তৎকালীন উপজেলা ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় অন্তর্ভূক্তির চেষ্টা করেন। চারিকাটা ইউনিয়নের নয়াখেল পূর্ব বালিদাড়া এলাকাবাসি লালাখাল চা-বাগান কর্তৃপক্ষের অত্যাচার ও নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে দূর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। চা-বাগান কর্তৃপক্ষের এসব মিথ্যে মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়ে আমরা প্রশাসনসহ সাংবাদিক সমাজের সহযোগিতা কামনা করছি। বাগান কর্তৃপক্ষের ভোগদখলে থাকা অবৈধ সরকারি জমি উদ্ধার ও যেসব মৌজায় সরকারি ১নং খাস খতিয়ানের ভূমি চা-বাগান কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভূক্ত করা হয়েছে তা সংশোধন করে সরকারের নামে পুনরায় রেকর্ড সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি।এলাকাবাসীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মুরব্বি ওসমান আলী, কুদরত উল্লাহ, কাশেম আলী, মানিক উদ্দিন, আব্দুস ছাত্তার, আলমাস উদ্দিন, আমির আহমদ, শামীম আহমদ, তমির আহমদ, জমিল আহমদ, শামীমুল ইসলাম, নূরুল ইসলাম, রেজওয়ান আহমদ প্রমুখ।

You might also like