ঝুঁকির মুখে সুনামগঞ্জের আব্দুজ জহুর সেতুঃ ড্রেজারের তান্ডব চলছে সুরমায়
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ রাতের আঁধারে সুরমা নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু লুটে নিচ্ছে একটি চিহ্নিত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। পরিবেশ বিধ্বংসী ড্রেজার তান্ডবে একদিকে যেমন দুই তীরের জনপদ হুমকিতে; অন্যদিকে ঝুঁকিতে রয়েছে জেলা শহরের সাথে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সংযোগ সেতু আব্দুজ জহুর সেতু। প্রতি রাতে নদীর কয়েকটি স্থানে ড্রেজার তান্ডব চালিয়ে গেলেও, এটি বন্ধে কারো উদ্যোগ নেই।
সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, স্থানীয়দের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে সুবিধা দিয়ে দিনের পর দিন বালুর এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে চক্রটি। সুরমা নদীতে ড্রেজার তান্ডব বন্ধ না হলে আব্দুজ জহুর সেতুসহ দুই তীরের কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেতুর আশেপাশের কয়েক শ’’ মিটার এলাকা জুড়ে একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে ওই সিন্ডিকেট। স্থানীয়রা জানান, গত কিছুদিন ধরে জলিলপুর, আব্দুজ জহুর সেতু এলাকা, অচিন্তপুর, বড়পাড়া এলাকাসহ একাধিক স্থানে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ চক্র। রাত ১টার পর থেকে শুরু হয়ে ভোররাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। এসব বালু বাল্কহেড বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। প্রতিরাতে কয়েক লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত এক শ্রমিক জানান, রাতের বিভিন্ন সময়ে নদীর একাধিক স্থানে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করেন তারা। জলিলপুর বাজার এলাকা, অচিন্তপুর এবং আব্দুজ জহুর সেতু এলাকা থেকে বেশিরভাগ সময় ড্রেজার বসানে হয়। প্রতি রাতে গড়ে ২০ থেকে ২৫টি বাল্কহেড বোঝাই করে ড্রেজার মেশিন। এসব বালু ভাটি এলাকার বিভিন্ন স্থানে ডাম্পিং করার পাশাপাশি সিন্ডিকেটে থাকা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয় বলে জানান তিনি।
ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেটে রাজিব, মমিন, রমজান ও বাবুল ছাড়াও অনেক রাঘব-বোয়াল জড়িত রয়েছেন বলে জানান এই শ্রমিক। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তিদের হাত করে রাতে এই ড্রেজার তান্ডব চালানো হয় বলেও জানান তিনি।
এদিকে, রাতে ড্রেজার মেশিনের শব্দে অতীষ্ঠ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষজন। ড্রেজারের বিকট শব্দে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় তাদের। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই।
শাহ মো. মহসিন নামের একজন লিখেছেন ‘বিয়ের ৮ বছর পর তেঘরিয়া এলাকায় এসে বাড়িতে রাতযাপন করলাম। কিন্তু ড্রেজার মেশিনের শব্দে আর ঘুমোতে পারিনি। প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই এর দায় নিতে হবে।
তাঁর এমন পোস্টের কমেন্টে স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বলার কিছু নেই। ড্রেজারের সবচাইতে কাছে আমি ঘুমাই। আমি মাঝে-মাঝে এয়ার ফোন ব্যবহার করে থাকি, ঘুমের মধ্যেও।
অপরদিকে, আব্দুজ জহুর সেতু এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টিকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক। তিনি বলেন, সেতু এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বালু উত্তোলন করা যাবে না। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন হয়ে থাকলে এটি সেতুর জন্যে ক্ষতির কারণ। আমরা বিষয়টি চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানাবো।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এমদাদুল হক শরীফ বলেন, লোকেশন চিহ্নিত করে বিষয়টি নৌ পুলিশকে অবগত করে রাখব। তিনি নিজেও বিষয়টি দেখবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। নদীতে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপারকে অবগত করবেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
এদিকে, গত ২৫ জানুয়ারি সুরমা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সময় অভিযান চালিয়ে শ্রমিকসহ একটি বাল্কহেড জব্দ করে সুনামগঞ্জ টুকেরঘাট নৌ-পুলিশ। পরে এ ব্যাপারে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ফাঁড়ির ইনচার্জ আতাউর রহমান।