টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের প্রথম বাঙ্গালী কাউন্সিলর নুরুল হক মাস্টারের ইন্তেকাল বিভিন্ন মহলের শোক
মতিয়ার চৌধুরী
সত্যবাণী
লন্ডনঃ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের প্রথম ব্রিটিশ বাঙ্গালী কাউন্সিলার, মাদারট্যাং স্কুলের বাংলাভাষার শিক্ষক, বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক কমিউনিটি ওয়ার্কার, বিশিষ্ট সমাজসেবী নূরুল হক মাষ্টার আর নেই (ইন্না…লিল্লাহী…..ওয়া…ইন্না..ইলাহি…রাজিউন।) গেল ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তিনি বাংলাদেশের গাজীপুরে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তাঁর মৃত্যুসংবাদ লন্ডনে এসে পৌঁছালে লন্ডনের বাঙ্গালী কমিউনিটিতে নেমে আসে শোকের ছায়া।বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা নূরুল হক দেশ স্বাধীনের পরপরই তিনি স্ত্রী আনোয়ারা হককে সাথে নিয়ে ব্রিটেনে পাড়ি জমান। বসবাস শুরু করেন পূর্ব লন্ডনের বাঙ্গালী অধ্যূসিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায়। তখনকার সময়ে লন্ডন তথা বিটেন জুড়ে প্রকট হাউজিং সমস্যা ও বর্ণবাদী আক্রমন মারাত্মক আকার ধারন করে। তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার বাঙ্গালী জনগোষ্টীর অধিকার আদায় ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন। একজন কমিউনিটি ওয়ার্কার ও বেঙ্গলি হাউজিং এ্যাকশন গ্রুপের সদস্য হিসেবে গৃহহীনদের আন্দোলনে ছিলেন প্রথম কাতারে। ব্রিটেনে বাংলা শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আন্দোলনের মাধ্যমে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে একাধিক সাপ্লিমেনাটারী স্কুল প্রতিষ্টা করে বাঙ্গালীদের মাতৃভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। একজন সমাজকর্মী হিসেবে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।
পূর্ব লন্ডনের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখ্যযোগ্য অর্জনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্থানীয় লেবার পার্টি বা অন্য কোন মেইনষ্টীমের রাজনৈতিক দল বাঙ্গালীদের সদস্য পদ দিতো না, তখন পূর্ব লন্ডনের বাঙ্গালীরা সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ” পিপলস অ্যালায়েন্স অব ইষ্ট লন্ডন ” নামে একটি স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠন গঠন করে তখনকার সময়ের ব্রিটিশ বাঙ্গালীরা স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে কয়েকজন বাঙ্গালী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয় তাদের মধ্যে অন্যতম নুরুল হক মাস্টার সাহেব লেবার দলের প্রার্থিকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে বিজয়ী হোন ১৯৮২ সালে।এর আগে কোন বাঙ্গালী টাউন হলে প্রবেশ করতে পারেননি, তিনি প্রথম বিজয়ী হয়ে বাঙ্গালীদের কাউন্সিলার ও মেয়র হওয়ার পথ সুগম করে দেন। তিনি নিজের উদ্যোগে প্রথম বাংলা টাউনে অবস্থিত ইষ্ট অ্যান্ড কমিউনিটি স্কুল প্রতিষ্টা করেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শতশত বাঙ্গালী শিশুরা বাংলা,আরবি এবং সাপ্লিমেন্টারী শিক্ষার সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। শিক্ষানুরাগী নুরুল হক সাহেব জীবনের শেষ পর্যায়ে তাঁর বাসস্থান গাজীপুরে ( ঢাকা ) তাঁর স্ত্রীর নামে ‘আনোয়ারা প্রাইমারি ও হাই স্কুল ‘ প্রতিষ্টা করেন।তাছাড়া তার জন্মভূমি নোয়াখালীর সুনাগাজিতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন ।
ব্যক্তিগত জীবনে নুরুল হক সাহেব একজন নম্র ভদ্র ও অমায়িক চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। জনাব নূরুল হকের মুত্যুতে পূর্ব লন্ডনের বাঙ্গারী সমাজ তাদের একজন আপনজনকে হারালো। এই কর্ম বীরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তার আন্দোলন সংগ্রামের সহযাত্রী সাবেক কাউন্সিলার ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ রাজন উন্দিন জালাল, কমিউনিটি নেতা সিরাজুল হক সিরাজ, কমিউনিটি নেতা রফিক উল্লাহ, বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা এ.কে. আজাদ কনর , সাবেক ডেপুটি মেয়র আকিকুর রহমান আকিক,, সাবেক কাউন্সিলার ও সেভেন মার্চ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট নূরুদ্দিন আহমদ , কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আনসার আহমেদ উল্লাহ ও সাবেক কাউন্সিলার সৈয়দ মিজান, সাবেক কাউন্সিলার সোনাহর আলী, ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রেসিডেন্ট মতিয়ার চৌধুরী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি সৈয়দ আনাস পাশা প্রমুখ। এক যৌথ শোক বার্তার তারা নিঃসন্তান নূরুল হকের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে বলেন তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন তার কর্মের মাঝে। তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্টান গুলোই তার সন্তান হিসেবে বেঁচে থাকবে চিরকাল।