ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউ কে’র বার্ষিক পিকনিক অনুষ্ঠিত
মোস্তফা কামাল মিলন
সত্যবাণী
লন্ডন: ১৪ই জুলাই ‘২৪, রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউ কে (DUAUK) লন্ডন থেকে প্রায় তেপ্পান্ন মাইল দূরের সমুদ্রতীরবর্তী শহর হেইস্টিংস এক পিকনিকের আয়োজন করে। কয়েক সপ্তাহ ধরে পিকনিক কমিটির সদস্যগনের ঐকান্তিক ও নিরলস পরিশ্রমে আয়োজনের পর, এদিন নির্ধারিত সময়ানুযায়ী সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে পিকনিকে গমনেচ্ছু সবাই রেডব্রীজ আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনের সামনে এসে জড়ো হন। বাসটি আসার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হলেও বাস ছাড়ার সাথে সাথেই সংগঠনের সভাপতি মারুফ আহমেদ চৌধুরী পিকনিকে সবাইকে স্বাগত জানান এবং এতে অংশ নেওয়ার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। একই সময়ে পিকনিক কমিটি কর্তৃক থলে ভর্তি প্রাতঃরাশের খাবার আর চা সবার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বাসটি প্রায় যথাসময়ে রওয়ানা দিয়ে কোনো বাধাবিঘ্ন ছাড়াই সাড়ে এগারোটায় কাঙ্খিত স্থান হেইসটিংসের সমূদ্র সৈকতের প্রান্তে গিয়ে উপনীত হয়। আর অমনি কালবিলম্ব না করেই সবাই সমূদ্রের গা ঘেঁষা পাথুরে (ছোট) সৈকতে চলে যান। সেখানে সর্বাগ্রে গ্রুপ ছবি তোলা হয়। তারপর যার যার মত করে খণ্ড খণ্ড গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বেশ কিছুক্ষণ সমূদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করা এবং ছবি তোলার পর এক জায়গায় জড়ো হয়ে পূর্ব নির্ধারিত বিভিন্ন কর্মকান্ড তথা প্রতিযোগিতায় ব্যাপৃত হন সবাই। এতে ছিলো পুরুষদের জন্য দড়ি টানাটানি এ বস্তা দৌড়, মহিলাদের জন্য দড়ি টানাটানি ও বালিশ হস্তান্তর এবং ছেলেমেয়েদের জন্য বিস্কুট দৌড় প্রতিযোগিতা।
তারপর নির্ধারিত সময়ে সৈকত সংলগ্ন “ফ্লেইভারস অব ইন্ডিয়া” নামক একটি রেস্টুরেন্টে সবাই একত্রিত হন দুপুরের খাবারের জন্য। সুপরিসর এ রেস্টুরেন্টে সুশৃঙ্খলভাবে তৃপ্তিসহকারে বিভিন্ন পদের মুখরোচক খাবার গ্রহনের অব্যবহিত পরই শুরু হয় প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী এবং কাজের স্বীকৃতি প্রদান আর প্রশংসা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন পর্ব। তারপর সংগঠনের তিনজন কমিটি সদস্যের জন্মদিন উপলক্ষে সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন ইকোর নিয়ে আসা প্রকাণ্ড কেকগুলো কাটা হয়। খেয়ে শেষ করার মত নয়, কেক দুটোর অতি আচার থেকে পরিত্রাণ পেতে না পেতেই পাতে তুলে দেওয়া হতে থাকে সদস্য ও ভাই-ভাবীগনের পৃষ্ঠপোষকতায় সংযোজিত পিঠা, পুলি ও সুজির হালুয়াসহ নানা পদের মুখরোচক খাবার। একই সময়ে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
গমন-প্রত্যাগমনকালে বাসটির পুরোটাই যেনো ছিলো একই দিনে দু-দুটি সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ। বাসের সাউন্ড সিস্টেম কাজ না করার বিড়ম্বনা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া গেলো হ্যান্ড মাইকের বদৌলতে। ‘শাপে বর’ হয়েছে এ জন্যে যে শব্দ দুষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে আর যথেষ্ট কিন্তু পরিমিত আওয়াজ নিয়ে নানা গান, আবৃ্ত্তি, কৌতুক, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার অনুভূতির প্রকাশ, সঞ্চালক বা সূত্রধরের ভূমিকা পালন ইত্যাদি অত্যন্ত সাবলীল ও সন্তোষজনকভাবে করা গিয়েছে। পিকনিক কমিটির সদস্যগন সবাই বাসে এই সামান্য জায়গার মধ্যে সমস্ত আয়োজন একের পর এক পুরোপুরি বিভ্রাটমুক্ত থেকে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আনাগোনার মাধ্যমে এত সুচারুরূপে সম্পন্ন করেছেন তা দেখার মত এবং প্রশংসাযোগ্য। ভারী নাস্তার পর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলছিলো আর কিছুক্ষণ পর পর সদস্যদের নিয়ে আসা স্ন্যাক্সসহ বিভিন্ন খাবার একটার পর আরেকটা দেওয়া হচ্ছিলো। ব্যস্ত মুখ-গহ্ববর ও মুগ্ধ কর্ণকূহর নিয়ে কিভাবে যে সময় পার হয়ে গেলো টেরই পাওয়া যায়নি। সবাই ছিলেন উচ্ছ্বসিত এবং উদ্বেলিত।
ঘর অভিমুখী ফিরতি যাত্রাটা ছিলো আরও বেশী প্রাণবন্ত ও উৎসব মুখর। কারো মুখাবয়বে ছিলো না বিন্দুমাত্র ক্লান্তি, অবষাদ কিংবা অবষণ্ণতার ছাপ। সে ছোট্ট শিশু থেকে সবচেয়ে বয়স্ক অবধি। সংগঠনের সদস্য, তাঁদের পরিবার এবং কয়েকজন সদস্যবন্ধুর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন ছিলো অনবদ্য ও প্রণিধানযোগ্য। এদের মধ্যে রীপা রাকীব, নাদিয়া লোদী ওয়াহাব এবং শারমিন চৌধুরীর বন্ধু অঞ্জু রয়-হার্স্ট গানে গানে মাতিয়ে রেখেছিলেন গন্তব্যস্থলে পৌঁছা অব্দি। সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ছিলেন হিরো। অত্যন্ত সুরেলা কণ্ঠে একাধিক গান গেয়ে এবং কৌতুক পরিবেশন করে সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন তিনি। এদের বদৌলতে যানজটের কারণে অতিরিক্ত আধঘন্টার যাত্রাটা মোটেও গায়ে লাগেনি। এছাড়া গান, কৌতুক ও ইতিহাসের বয়ানসহ যারা নানাভাবে আনন্দদানে অংশ নিয়ে অবদান রেখেছেন, সভাপতি মারুফ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুর রাকীব, ডক্টর বি এম রাজ্জাক, ডক্টর কামরুল হাসান, প্রকৌশলী সাকির আহাম্মেদ, হাসনীন হক এবং বারিস্টার মিজানুর রহমান যিনি একমাত্র ছন্দে ছন্দে কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন বাংলায়। মারুফ আহমেদ চৌধুরীর স্বাগত বক্তব্য ছাড়াও অনুষ্ঠানসূচী ও নিয়ম কানুনসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী প্রদান ও আসা যাওয়ার যাত্রাকালের অনুভূতি প্রকাশ, আপ্যায়ন এবং মাইক আনা-নেওয়ায় যারা অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা হচ্ছেন, সাবেক সভাপতি দেওয়ান গৌস সুলতান, সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ্ উদ্দিন ইকো, সাবেক সাধারণ সম্পাদকদ্বয় মোহাম্মদ আব্দুর রাকীব ও ইসমাইল হোসেন এবং অ্যালামনাস মোশাররফ হোসেনের পৃষ্ঠপোষকতায় পাওয়া বিশেষ গেঞ্জিগুলো পরিহিত পিকনিক কমিটির সদস্য সৈয়দ হামিদুল হক, রীপা রাকীব, শারমীন চৌধুরী, বারিস্টার মাহারুন আহাম্মেদ মালা ও বারিস্টার মিজানুর রহমান; যারা অত্যন্ত ধৈর্য, সহানুভূতি, পরিশ্রম ও নিয়মিত পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে এবারের পিকনিকের সফলতার সিঁড়ি বেয়ে চূড়ায় পৌঁছেছিলেন।
দড়ি টানাটানিসহ প্রতিটি প্রতিযোগিতা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবাইকে একত্র করে সঠিকভাবে প্রতিযেগিতাগুলো পরিচালনা ও সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বারিস্টার মিজানুর রহমান ও দেওয়ান গৌস সুলতানের বুদ্ধিমত্তা, দক্ষতা ও সহনশক্তি অবাক করার মত। এক্ষেত্রে মহিলাগন তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সম্ভাব্য সময়ক্ষেপণকে তিরোহিত করার জন্য। অনেকের অনুরোধে অনেক ছবি ওঠাতে গিয়ে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে রিমঝিম সাকিরকে। এরা সবাইও বাহবা পাওয়ার দাবী রাখেন। যথেষ্ট সময় থাকা সত্বেও আবহাওয়াজনিত কারণে কারো পক্ষে সমূদ্র-স্নানে অবগাহন করা হয়ে ওঠেনি। যদিও সার্বিকভাবে আবহাওয়া ছিলো অনুকূলে।
এদিন সন্ধ্যায় অতি প্রতিক্ষিত ইউরো ফাইন্যালে ইংল্যান্ডের খেলার কারণে দিন বা পিকনিকের সময়সীমাটিকে সংকুচিত করা হলেও কার্যক্রমে কোন ছেদ পড়েনি। মতামত প্রদানে অন্যান্যের সাথে কয়েকজন সদস্যের সন্তানরাও যোগদান করেন এবং একেবারে খোলামেলাভাবে স্বমহিমায় নিজেদের এ আয়োজনের বিষয়ে (কোনো কোন ক্ষেত্রে বিশ্লেষণমূলক) অভিমত প্রকাশ করেন এবং সবাই নির্দ্বিধায় দ্ব্যর্থহীনভাবে সর্বাঙ্গীন সাফল্যের কথা বলেছেন। প্রেসিডেন্ট ও সাধারণ সম্পাদক পিকনিকে অংশ নেওয়ার জন্য শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতি ও সদস্যদের বন্ধুগনসহ সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট মারুফ চৌধুরী আগামী আটই সেপ্টেম্বর রোববার এ সংগঠনের “অ্যালামনাই ডে” শীর্ষক মেগা-অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য সবার প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানান।এখানে উল্লেখযোগ্য যে, পরিবারসমেত “অ্যালামনাস” মাহফুজা রহমানসহ ডজনখানেক অ্যালামনাই পরিবার সহ ব্যাক্তিগত যানবাহনে হেইস্টিংসে গিয়ে পিকনিকে যোগ দেন।
মাসব্যাপী নিবিড় আয়োজনের পর পরিকল্পনানুযায়ী শুরু থেকে শেষাব্দী প্রায় নিখুঁত অথচ আনন্দঘন ও উপভোগ্য একটি পিকনিক বলুন, আর সমূদ্র সৈকত ভ্রমন বলুন কিংবা ডে-আউট বলুন, উপহার দিতে পেরে পিকনিক কমিটি বেশ তৃপ্ত আর এতে অংশ নেওয়া সবাই যারপর নাই খুশী এবং কৃতজ্ঞ। এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, যেমন পরিকল্পনা তেমনি বাস্তবায়ন।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকাঃ
১) মহিলাদের বালিশ হস্তান্তর প্রতিযোগিতা –
প্রথম – মাহারুন আহাম্মেদ মালা, দ্বিতীয়- রীপা সুলতানা রাকীব, তৃতীয়- মিসেস আসাব বেগ
২। শিশুদের বিস্কুট দৌড় –
প্রথম – আলী, দ্বিতীয় – রাফিয়া
তৃতীয় – সানিভা।
৩। কিশোরদের বিস্কুট দৌড় –
প্রথম – জারীদ, দ্বিতীয় – মিম্মি
তৃতীয় – সুনাইয়া।
৪। বড়দের বস্তা দৌড় –
প্রথম – ফেরদৌস, দ্বিতীয় – মিজানুর রহমান, তৃতীয় – সৈয়দ হামিদুল হক
৫। ছোটদের দের বস্তা দৌড় –
একমাত্র পুরস্কার পেয়েছে জারিদ।