দুই মন্ত্রীর সামনে ক্ষোভ ঝাড়লেন মেয়র আরিফ!
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ দখলে-দূষণে হারিয়ে যেতে বসা নগরীর ধোপাদিঘী খনন করে চারপাড়ে প্রায় ৫শ’ মিটার দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছে সিসিক। দিঘীতে নামার জন্য রয়েছে সুদৃশ্য দ’ুটি ঘাট। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য রাখা হয়েছে টাইলস বসানো বেঞ্চ। রয়েছে শৌচাগারও। সিটি কর্পোরেশন মসজিদের উত্তরপাশ দিয়ে দীঘিতে প্রবেশের পথ রাখা হয়েছে। সন্ধ্যায় দীঘির চারপাশ আলোকিত করতে রাখা হয়েছে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা।
সিলেট নগরীতে এ উন্নয়নযজ্ঞ হয়েছে ভারত সরকারের অর্থায়নে। শনিবার দৃষ্টিনন্দন এই ওয়াকওয়ে উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী।
তবে সিসিকের ইচ্ছে ছিলো, ধোপাদিঘীর পশ্চিমপাড়ে সিলেট পুরাতন কারাগারের পরিত্যক্ত জায়গায় একটি উদ্যান তৈরি করতে। জায়গাটি পার্কের মতো তৈরি করে দিলে খোলা হাওয়ায় কিছুক্ষণ অবকাশ যাপনের সুযোগ পেতো নগরবাসী। কিন্তু এতে বাঁধ সেধেছেন সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামাল হোসেন।
সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অভিযোগ, সাবেক অর্থমন্ত্রী সদ্যপ্রয়াত আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনসহ শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ ধোপাদিঘীর পশ্চিমপাড়ে উদ্যান করার সম্মতি দিলেও সিলেটের ডিআইজি প্রিজন কিছুতেই এ জায়গা ছাড়তে রাজি নন। এমনকি দিঘীর পশ্চিমপাড়ের ওয়াকওয়ের কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটিও তিনি ওই জায়গায় স্থাপন করতে দেননি। এছাড়া কিছুদিনের মধ্যে সেখানে মো. কামাল হোসেন দেয়াল নির্মাণ করবেন বলে সিসিককে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে কামাল হোসেনের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, ধোপাদিঘীর পাড়ে ওয়াকওয়ে হওয়ার আগে এখানের পরিবেশ বেহাল ছিলো। সিটি কর্পোরেশন জায়গাটি পরিচ্ছন্ন করে নিজস্ব অর্থায়নে কারাগারের জায়গায়ই অন্যত্র কারারক্ষীদের ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। ওই জায়গায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক কাজি এমদাদুল হক সরেজমিনে গিয়ে ড্রেন নির্মাণের জন্য জায়গা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। সিটি কর্পোরেশন তাঁর পরামর্শমতোই ড্রেন নির্মাণ করে দিয়েছে। পুরাতন কারাগারের বাউন্ডারির বাইরে থাকা এ জায়গাটিতে উদ্যান করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলো সিসিক। মরহুম সাবেক অর্থমন্ত্রী মহোদয়ও এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ জায়গাটি কোনোভাবেই ছাড়তে চাচ্ছে না। আমরা মনে করি, এতে সিলেটের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করা হচ্ছে।মেয়র আরিফ আরও বলেন, মারা যাওয়ার আগে আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী নিজে এসে জায়গাটি পরিদর্শন করে নির্দেশ দিয়ে গেছেন এটা করার জন্য। তিনি এ সময় বলেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এর অনুমতি নিয়ে এসেছি।’ এছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিব মহোদয় জায়গাটি পরিদর্শন করে উদ্যান করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। তারপরও ডিআইজি প্রিজন মো. কামাল হোসেন জায়গাটি ছাড়তে চাচ্ছেন না। এমনকি তিনি হুমকি দিয়েছেন, ওয়াকওয়ে উদ্বোধনের পরেই তিনি এখানে দেয়াল নির্মাণ করবেন।
সিটি মেয়র ডিআইজি প্রিজন মো. কামাল হোসেনের কর্মকা-ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মহোদয়রা আসবেন এজন্য ওই জায়গায় একটু বালু ফেলতে চেয়েছিলো সিটি কর্পোরেশন। এতেও বাধা প্রদান করেছেন ডিআইজি প্রিজন।এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মেয়র আরিফ।
সিসিক সূত্র জানায়, ধোপাদিঘীর পশ্চিমপাড়ে কারা কর্তৃপক্ষের প্রায় ৮ শতক জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সিলেট শহরতলির বাদাঘাটে কারাগার স্থানান্তরিত হওয়ায় পুরাতন কারাগারের ওই জায়গা সহসাই কারা কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন পড়বে না। তাই সেই প্রায় ৮ শতক জায়গায় উদ্যান করার উদ্যোগ নিয়েছিলো সিসিক। এ বিষয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের নির্দেশনাও ছিলো। সম্মতি ছিলো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বররাষ্ট্র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনের। তাঁরা কিছুদিন আগে এ জায়গাটি পরিদর্শন করে যান। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মৌখিক অনুমোদনও নিয়ে নিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী। কিন্তু কিছুতেই জায়গাটি ছাড়তে রাজি নন সিলেটের ডিআইজি প্রিজন মো. কামাল হোসেন। এমনকি ধোপাদিঘীর পশ্চিমপাড়ে কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটিও স্থাপন করতে দেননি কারা কর্তৃপক্ষের মালিকানার অজুহাতে।এ বিষয়ে ডিআইজি প্রিজন মো. কামাল হোসেন রোববার (১২ জুন) বিকালে বলেন, নিয়ম এবং আইনের বাইরে যাওয়ার আমাদের আসলে সুযোগ নেই। আমরা বার বার সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ করেছি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতিসাপেক্ষে সিটি কর্পোরেশন যতটুকু জায়গা নিতে চায়, নেবে, তাতে তো আমাদের বাঁধা দেয়ার কিছু নেই। কিন্তু নিয়ম ভঙ্গ করে এ জায়গা এভাবে দিয়ে দেয়া আমার এখতিয়ারে নেই।
মো. কামাল হোসেন আরও বলেন, বর্তমানে তো আমিও সিলেট নগরের বাসিন্দা। এই শহরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়লে আমিও তা ভোগ করবো। কিন্তু নিয়মের বাইরে গিয়ে এই জায়গায় সিসিককে কিছু করার অনুমতি দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলে সিসিক যতটুকু জায়গা নিতে চায় নিক, আর সদাশয় সরকার যতটুকু দিতে চায় দিক, তাতে আমার কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ সিটি কর্পোরেশন কাজ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে, আর আমাদের কাজ এবং সম্পত্তি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই এ বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না।