দেশ,জাতি ও মুসলিম উম্মার কল্যাণ কামনা আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হলো আজিমুশ্বান ইজতেমা

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকে কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর ৭৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দু’দিনব্যাপী আজিমুশ্বান ইজতেমা সম্পন্ন হয়েছে। ইজতেমায় অর্ধ লক্ষাধিক মুসল্লির সমাগম ঘটে।গত বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হওয়া ইজতেমা শুক্রবার সকাল ১০টায় আমীরে আঞ্জুমান হযরত মুফতি রশীদুর রহমান ফারুক বর্ণভীর আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। মোনাজাতে মুসল্লিদের চোখে ছিল জল। দু’দিনব্যাপী এ ইজতেমায় ইসলামী জীবন যাপন অনুসরণ ও আত্মশুদ্ধি অর্জন বিষয়ে বয়ান পেশ করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শতাধিক ওলামা-মাশায়েখ ও বুদ্ধিজীবীগণ। বহিঃবিশ্বের একাধিক ইসলামিক স্কলারও এতে অংশগ্রহণ করেন।দক্ষিণ সুরমা থেকে সংবাদদাতা জানান, ইজতেমা থেকে দেশ ও জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্যে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমীর হযরত মুফতি মুহাম্মদ রশীদুর রহমান ফারুক বর্ণভী বলেন, নিজের ও নিজের পরিবারের ঈমান-আমলের পরিশুদ্ধির জন্য ঘরে ঘরে আপনারা তালীম তথা দ্বীনি শিক্ষার চর্চা চালু করুন। মসজিদে, কর্মক্ষেত্রে, আবাসস্থলে দ্বীনি তালীমের চর্চা জারি থাকলে মুসলমানদের ঈমান-আমল সংরক্ষিত থাকবে। কেউ তাঁদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এ অঞ্চলের প্রাচীনতম একটি অরাজনৈতিক দ্বীনি সংগঠন। সাধারণ মানুষকে দ্বীন-ঈমানের তালীম দেয়া এবং তাঁদের মধ্যে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে দৃঢ় করে তোলাই এ সংগঠনের প্রধানতম কর্মসূচি। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মার কল্যাণ কামনা করে হৃদয়ভেজানো আখেরী মোনাজাত করেন।

দু’দিনব্যাপী ইজতেমায় উপস্থাপনা করেন আঞ্জুমানের যুগ্ম মহাসচিব হাফেজ মাওলানা শেখ সাদ আহমদ আমীন বর্ণভী, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা জাবের আল হুদা চৌধুরী, প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা শাব্বীর আহমদ ফতেহপুরী।ইজতেমায় মোট ৭ টি অধিবেশনে দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় শতাধিক ওলামা-মাশায়েখ বয়ান পেশ করেন। এতে ধাপে ধাপে সভাপতিত্ব করেন সিলেটের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখগণ। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে ইজতেমা সম্পন্ন হওয়ায় আয়োজকরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ইজতেমায় বয়ান করেন ভারতের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ-এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী, ভারতের শাহী মুরাদাবাদ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা সাইয়্যিদ আশহাদ রশিদী, মাওলানা আব্দুল আউয়াল নারায়ণগঞ্জ, মাওলানা আব্দুর রহমান হাফিজ্জী ময়মনসিংহ , মাওলানা আব্দুল মালিক পীরসাহেব ভোলা, মাওলানা আকরাম আলী পীরসাহেব বাহাদুরপুর, মাওলানা আব্দুল হামিদ পীরসাহেব মধুপুর, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের খতীব মুফতি রুহুল আমীন, ড. আফম খালিদ হোসাইন চট্টগ্রাম, ড. মুশতাক আহমদ ঢাকা, মাওলানা উবায়দুর রহমান বরিশাল, মাওলানা আবদুল মতীন বিন হুসাইন পীরসাহেব ঢালকানগর, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মাওলানা ইসমাঈল নুরপুরী নরসিংদী, মাওলানা নূরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জ, মাওলানা হামিদ জহিরী ঢাকা, মাওলানা মুশতাক আহমদ খুলনা, মাওলানা মুশতাকুন্নবী কাসিমী, মাওলানা নুরুল হুদা ফয়জী বরিশাল, চট্টগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ, হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুর, মাওলানা আলী আকবর কাসিমী ঢাকা, মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ ঢাকা, মাওলানা আহমদ মায়মূন ঢাকা, মাওলানা আহমদ আলী কাসিমী, ড. শহীদুল্লাহ উজানী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান পীর সাহেব দেওনা, মাওলানা শামসুদ্দীন কাসিমী জামালপুর, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী ঢাকা, মাওলানা মুহাম্মদ আলী সিরাজগঞ্জ, মাওলানা ইমাম হুসাইন সিরাজগঞ্জ, মুফতি ফয়জুল্লাহ ঢাকা, মাওলানা আব্দুল বাসিত খান সিরাজগঞ্জ, মুফতি আবুল বাশার নুমানী ঢাকা, মুফতি জসিম উদ্দীন ঢাকা, মাওলানা জুবায়ের আহমদ ঢাকা।

আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে বয়ান পেশ করেন, নায়েবে আমীর মাওলানা সাঈদুর রহমান বর্ণভী, মাওলানা ওলিউর রহমান বর্ণভী, মাওলানা আবদাল হোসেন খান ও মাওলানা শেখ আহমদ আফজল বর্ণভী, মহাসচিব মাওলানা অধ্যাপক আব্দুস সবুর প্রমুখ।এদিকে, ইজমেতায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, গোলাপগঞ্জ পৌর মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল, সিলেট জেলা আ’লীগ সভাপতি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, রাজনগর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ বিলাল, নাজাত ইসলামী মারকাযের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ছালেহ আহমদ হামিদী প্রমুখ।উল্লেখ্য, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের সময়কালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার খ্যাতিমান বুযুর্গ খলীফায়ে মাদানী কুতবে দাওরান হযরত লুৎফুর রহমান বর্ণভী (পীরসাহেব বরুনা) সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর প্রায় ৯ দশক ধরে ইসলাহী এ সংগঠন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশে মানবতার কল্যাণ, মুসলমানদের দ্বীন-ঈমানের সংরক্ষণ ও মানবিক মূল্যবোধের উজ্জীবনে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

You might also like