দেশব্যপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের উদ্যোগে সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ আজ ২১ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দূর্গা উৎসবে গুজব ছড়িয়ে দেশব্যপী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন,পুজামন্ডপে হামলা,প্রতিমা ভাঙ্গচুর, অগ্নিসংযোগ,লুটপাটের প্রতিবাদে সাম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের উদ্যোগে সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।সংগঠনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সুপ্রীম কোটের আইনজীবী সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এস এম এ সবুর,আব্দুল মানুয়েম নেহেরু,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির,সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গির আলম সবুজ, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক,শ্রমিক নেতা আব্দুল ওয়াহেদ, ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম ফজলু, মুক্তিযুদ্ধ সংহতি পরিষদের এম এ রব, ছাত্রনেতা গৌতম শীল প্রমুখ।
সভার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম।
সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ।ষোষনা পত্রে বলা হয়, ১৩ অক্টোবর ২০২১ কুমিল্লার একটি পুজামন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননা সংক্রান্ত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতি দ্রুতছড়িয়ে দিয়ে ঐ পুজামন্ডপে হামলা চালিয়ে মন্ডপ ও প্রতিমা ভাঙ্গচুর করা হয়। এরপর সারাদেশে মন্দির, পুজামন্ডপ, প্রতিমা ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগ, বাড়ীঘরে হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে।
১৫ অক্টোবর, ২০২১ শুক্রবার, নোয়াখালীর চৌমহনীতে জুম্মার নামাজ শেষে বেলা দুইটার দিকে কয়েক হাজার লোক মিছিল নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দেখে হামলা ও লুটপাট করে। এরপর মিছিলকারীরা রামঠাকুর আশ্রম. রাধা মাধব জিও মন্দির, ইস্কন মন্দিরসহ সেখানকার প্রায় সব মন্দিরে ভাঙ্গচুর ও হামলা চালায়। এই ঘটনা প্রবাহে হত্যা ও ব্যপক লুন্ঠন ঘটে।১৮ অক্টোবর, ২০২১ বৃহস্পতিবার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম অবমাননার ধুয়ো তুলে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মাঝিপাড়ায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে দরিদ্র মৎসজীবী ২৫টি পরিবারের ঘরবাড়ী আগুন দিয়ে জালিয়ে দেয়, আরো অন্তত ৫০টি পরিবারের টাকা, স্বর্ণলংকার, গবাদীপশুসহ সর্বস্ব লুন্ঠন করে পুরো গ্রামকে ধ্বংস্তপে পরিনত করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘুদের হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন, ধর্মীয় উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ, বাড়ীঘরে হামলা-লুন্ঠন বাংলাদেশে একটি প্রবনতা হয়ে দাড়িয়েছে। কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর, সুনামগঞ্জের শাল্লা, ভোলা ও রংপুর সর্বত্র একই প্রবনতা, সহিংসতা ও ঘটনা দৃশ্যমান। একটি বেসরকারী সংস্থার (আসক) তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট বছর নয় মাসে সনাতন ধর্মালম্বীদের উপর ৩৬৭৯ টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ১৫৫৯ টি বসতবাড়ী, ৪৪২ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিমা, পুজামন্ডপ, মন্দির ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১৬৭৮ টি। এসব হামলায় নিহত হয়েছে ১১ জন এবং আহত হয়েছে ৮৬২ জন। এছাড়াও অসংখ্য ধর্ষন, শ্লীলতাহানী, বসতবাড়ী ও জমি দখল এবং উচ্ছেদের ঘটনা রয়েছে।১৩ অক্টোবর, ২০২১ হতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ১৮ অক্টোবর, ২০২১ পর্যন্ত ৬ দিনে সারাদেশে ৭২ টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ১০,০০০ জনকে আসামী করা হয়েছে এবং গ্রেফতার হয়েছে ৪৫০ জন।এর আগেও সংখ্যালঘুদের উপর সংঘটিত সহিংসতায় অনেক মামলা হয়েছে কিন্তু কোন মামলা নিস্পত্তি হয়েছে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন মনে করে সংখ্যালঘু জনগণের উপর সহিংসতার ঘটনা গুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়ায় এধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে, যা তাদেরকে ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।বিশ্বাস কিংবা ধর্মপালনের স্বাধীনতা একটি মানবিক অধিকার। সকল নাগরিকের বিশ্বাস,ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতা সংবিধান পরিপন্থি। সর্বোপরি স্বাধীনতার পর থেকেই রাষ্ট্র সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।আজকের এই প্রতিবাদী মানববন্ধনে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন নিষিক্ত দাবী জানাচ্ছে:
১. সনাতন ধর্মালম্বীদের হত্যা-নির্যাতন, প্রতিমা-মন্দির ভাঙ্গচুর, বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুন্ঠন একটি ধারাবাহিক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এই সকল ষড়যন্ত্রের মূল রহস্য উৎঘাটনে একটি নিরপেক্ষতদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
২. সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় আক্রান্ত সকলকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৩. সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতার সকল মামলা দ্রæত বিচার আইনে এবং সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে নিস্পত্তি করতে হবে।
৪. ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
৫. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, বেদনাদায়ক হলো আইয়ুব-ইয়াহিয়ার পদাংক অনুসরণ করে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ক্ষমতা বদলের হাতিয়ার করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জনকে বিসর্জন দেয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করা না গেলে বাংলাদেশকে বাঁচানো যাবে না।তিনি আরো বলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদীদের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী নিরপেক্ষ স্থায়ী তদন্ত কমিশন গঠন করে সকল সাম্প্রদায়িক তান্ডবের বিচার করতে হবে। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচানোর তাগিদ থেকে পাড়া-মহল্লাসহ দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ চেতনা পরিষদ গঠন করতে হবে।অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার সরেজমিনে পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, সংখ্যালঘুদের পাশে কেউ নেই,মূলত রাজনীতির হাতিয়ার করে সংখ্যালঘুদের বিতাড়নের প্রতিযোগিতায় সকলে লিপ্ত হয়েছে।আমরা দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জিবিত হয়ে দেশব্যাপী ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।