দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনঃ সিলেট-২ আসনে মুহিবের প্রার্থীতা ফেরত
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ উচ্চ আদালতের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন সিলেট-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান। ২৪ ডিসেম্বর রোববার এ আসনে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় থাকা মুহিবুরের নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রত্যাবর্তনের ফলে হাওয়া বদলের জোর সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটার ও রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিবর্গ।
উচ্চ আদালতের রায়ে মেয়র মুহিবুর রহমানের প্রার্থিতা বহাল থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হতেই নির্বাচনী এলাকায় শুরু হয় তোলপাড়। জানা গেছে, প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ার পর প্রতীক হিসেবে ট্রাক চেয়েছেন মুহিবুর রহমান।
বিশ্বনাথ থেকে সংবাদদাতা জানান, সিলেট-২ আসনের আওতায় থাকা বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলার সাধারণ ভোটার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনে প্রার্থীর ছড়াছড়ি থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আ’লীগ প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র মুহিবুর রহমানের মধ্যেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আ’লীগ ও জাপা প্রার্থীকে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখেই ফেলেছেন পৌর মেয়র।
মুহিবুরের প্রার্থিতা বাতিল হলে সিলেট-২ আসনে একচেটিয়া জয়ের সম্ভাবনা ছিল নৌকার। এদিকে মুহিবুরের অনুপস্থিতিতে বিএনপিপন্থিদের ভোটব্যাংক নিজের করে নেয়ার চেষ্টায় ছিলেন জাপা প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী। তবে স্থানীয় পর্যায়ে পৌর মেয়রের জনপ্রিয়তার কারণে নতুন করে নির্বাচনের অঙ্ক কষতে হবে প্রার্থীদের।
মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় ৪ ডিসেম্বর মুহিবুরের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে ১৫ ডিসেম্বর তাঁর আপিল নামঞ্জুর হয়। প্রার্থিতা ফিরে পেতে ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। পরে বিচারপতি ইকবাল কবির ও বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পান মুহিবুর রহমান।
মেয়র মুহিবুর রহমান জানান, তাঁকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে লাগাতার চেষ্টা চালিয়েছে একটি পক্ষ। বাংলাদেশের ৬১ জন উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়র পদত্যাগ করেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও একমাত্র তিনিই মেয়র পদে বহাল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। মহামান্য হাইকোর্ট তাঁর পক্ষে রায় দিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়েই নির্বাচনে বিজয়ী হতে চান তিনি।। জনগণের ওপর নিজের পূর্ণ আস্থার কথাও জানিয়েছেন মেয়র মুহিবুর।
এদিকে মুহিবুরের নির্বাচনে ফিরে আসার ব্যাপারে এই আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী জানান, মুহিবুর রহমান প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় জমজমাট নির্বাচনের হাওয়া বইছে এ আসনে। ভোটের লড়াইয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে জানান তিনি।
নৌকার প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রেখে আচরণবিধি মেনে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে– এটাই প্রত্যাশা। জনগণ যাকে ভোট দেবেন, তিনিই বিজয়ী হবেন।
ওসমানীনগর উপজেলা আ’লীগ সভাপতি আতাউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু জানান, মুহিবুর রহমান ফেরায় নির্বাচন জমে উঠেছে। শক্তিশালী একজন প্রার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়ায় ভোটার উপস্থিতিও বাড়বে।
এদিকে আ’লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিএনপির ভোটব্যাংককে টার্গেট করার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের ভোটের জোরে গণফোরাম প্রার্থী মোকাব্বির খানের চমক দেখানো বিজয়ের মন্ত্রই ধারণ করতে চান তিনি।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিরাজ করছে। পথসভা, উঠান বৈঠক, কর্মীসভাসহ সব ক্ষেত্রেই প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সিলেটের এই আসনে বিগত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৫টিতে আ’লীগ, ৩টিতে জাপা, দু’টিতে বিএনপি ও একটিতে গণফোরাম প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তথ্য বলছে, আসন্ন নির্বাচনে এই আসন থেকে মুহিবুর রহমান নির্বাচিত হলে সেটি হবে সিলেট-২ আসনে প্রথম কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড।