ধলাই নদীতে পানি কমঃ সাদাপাথর ভ্রমণে ভোগান্তিতে পর্যটকরা
সিলেট অফিস
সত্যবাণী
ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসে স্বচ্ছ জল। সেই জলের সঙ্গে আসে পাথর। উজান থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলে গা ভিজিয়ে শীতল পরশের ছোয়া পেতে দল বেঁধে ছুটে আসেন পর্যটকরা। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে উঁকি দিচ্ছে সাদা সাদা পাথর। যেনো প্রকৃতি তার নিজ হাতে সাজিয়ে রেখেছে বিছানা। আর সেই বিছানায় গা ভাসিয়ে দিয়েছেন আগত পর্যটকরা। এমন দৃশ্য দেখা যায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথরে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় স্পট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর। তবে এবার পানি কম থাকায় চাইলেও সহজে যাতায়াত করতে পারছেন না পর্যটকরা।
বিভাগীয় শহর সিলেট থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর উজানে এই সাদাপাথর রাজ্যের অবস্থান। পবিত্র ঈদ-উল ফিতর ও বাঙালির ঐতিহ্যবাহী উৎসব পহেলা বৈশাখের ছুটিতে হাজার হাজার পর্যটকের ঢল নেমেছে সাদাপাথরে। তবে সাদাপাথরে ভ্রমণে এসে এবার পর্যটকদের পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। বিশেষ করে ধলাই নদীতে পানি কম থাকায় নৌকা ঠেলে যেতে হচ্ছে জিরো পয়েন্ট এলাকায়। এতে করে যেমন অতিরিক্ত সময় লাগছে তেমনি অর্ধেক পথে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক পর্যটক।
কোম্পানীগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, ধলাই নদী দিয়ে নৌকায় করে ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট ‘সাদাপাথর’ পর্যটন কেন্দ্রে যেতে হয়। ভোলাগঞ্জ পর্যটন ঘাট থেকে ৮০০ টাকায় নৌকা ভাড়া করে যেতে হয় স্বচ্ছ জলের পরশ নিতে। পর্যটন ঘাট থেকে প্রায় এক-দেড় কিলোমিটার দূরত্ব সাদাপাথর জিরো পয়েন্টের।
মধ্যখানে নৌপথে। কিন্তু গ্রীষ্মকালে নদীর তলদেশে বালুতে নৌকা আটকে যায়। নৌকা আটকে গেলে মাঝি ও পর্যটক মিলে নদীর পানিতে নেমে নৌকা ঠেলতে হয়। এছাড়াও একাধিকবার ভেঙ্গে যায় নৌকার ইঞ্জিনের সাথে থাকা ফ্যান। সেই ফ্যান বদলাতেও অনেক সময় ব্যয় হয়। এতে সময় লাগে প্রায় দ্বিগুণ। নৌকা আটকে না গেলে ও ফ্যান না ভাঙলে অর্ধেক সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতেন পর্যটকরা। ফলে পর্যটকদের অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের পাশাপাশি পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। পর্যটকদের ভোগান্তি লাঘবে নদীর তলদেশের বালু ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে শিগগির সরানো হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাদাপাথর ঘুরতে আসা নারায়ণগঞ্জের সোমা আক্তার বলেন, এই পরিবেশ ও এই প্রতিবেশ নয়নাভিরাম এবং অপরূপ। এই শীতল পরিবেশ যেকোনো মানুষের মনকে ক্ষণিকে পরিবর্তন করে দিতে পারে, নিমিষেই দুর করে দিতে জীবনের সকল ক্লেশ ও জ্বালাতন।
কুলাউড়া থেকে আসা শামীম আহমেদ বলেন, সাদাপাথর ও ধলাই নদীর শীতল পরশ মনকে আরো শীতল করে দিয়েছে। সত্যিই এটা এক অসাধারণ পর্যটন স্পট। একবার এসে ফিরে যওয়ার পর বারবার মন চাইবে আবার চলে আসতে।
সিলেট নগরির হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা ডা. আফজাল আহমদ বলেন, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট। আর সাদাপাথর প্রকৃতির আরেক লীলাভূমি। কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে সাদাপাথরে ঘুরতে এলে পর্যটকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। নদীর মধ্যখানে আটকে যায় নৌকা আবার কখন দেখা যায় ইঞ্জিনের ফ্যান নষ্ট হচ্ছে যাচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান থাকবে পর্যটকদের দুর্ভোগ লাঘবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের।
সরেজমিনে ১৩ এপ্রিল শনিবার কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথরে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার পর্যটকের ঢল নেমেছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলে যে যার মতো গা ভিজিয়ে শীতল পরশের ছোঁয়া নিচ্ছেন। নদীতে পানি কম থাকায় আটকে যায় নৌকা। কখনো নৌকা থেকে নেমে মাঝি ও পর্যটক মিলে নৌকা ঠেলতে হচ্ছে। আবার অর্ধেক রাস্তায় নৌকা থেকে নেমে পর্যটকরা পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন গন্তব্যস্থলে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় অনেকে নৌকায় না গিয়ে দল বেঁধে পায়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়।
সাদাপাথরে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সিলেট রিজিয়নের পুলিশ ইন্সপেক্টর আখতার হোসেন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর রয়েছে। কয়েকটি টিমে বিভক্ত হয়ে আমাদের পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে ঘুরাফেরা করতে কোনো অসুবিধা ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও সুনজিৎ কুমার চন্দ জানান, প্রতিবারের ন্যায় এবারো কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথরে বেড়াতে আসা পর্যটকের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। গত কয়েক দিনে প্রায় লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটে।
তিনি বলেন, নদীর তলদেশে বালুতে নৌকা আটকে যাওয়ার বিষয়টি সমাধানের জন্য শিগগির ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে।