পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুন খোয়ায় ফিরে আসছে ভয়ঙ্কর টিটিপি
মতিয়ার চৌধুরী
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সত্যবাণী
লন্ডন: পাকিস্তানের উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুন খোয়ায় ভয়ঙ্কর তেহরিক–ই তালেবান পাকিস্তান(টিটিপি) আবার ফিরে আসায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। পাকিস্তান মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়, ইসলামপন্থী এই জঙ্গি গোষ্ঠী এক সময় আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এবং পশতুন অধ্যুষিত পাহাড়ি অঞ্চলের বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো। আরএফই/আরএল রিপোর্ট বলছে, বেসামরিকদের উপর তেহরিকি তালেবানের হামলাএবং জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়, সেনা অভিয়ান থেকে বাঁচতে জঙ্গিরা ২০১৪ সালে আফগানিস্তানে আশ্রয় নেয়।
সম্প্রতি শত শত তেহরিকি তালেবান ফিরে আসায় খাইবার পাখতুন খোয়ার বাসিন্দারা হতবাক হয়েছেন। স্থানীয়রা শঙ্কিত যে ইসলামাবাদ জঙ্গিদের সাথে শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার আগেই জঙ্গিরা ফিরে এসেছে। আরএফই/আরএল প্রতিবেদনে বলা হয় পাকিস্তান সরকার গত বছরের শেষ থেকে এই গোষ্ঠীর সাথে আলোচনা চালিয়ে আসছে। নাগরিক অধিকার সংগঠন পশতুন তাহাফুজ মুভমেন্টের(পিটিএম) নেতা মনজুর পশতিন ১৬ আগস্ট খাইবার পাখতুন খোয়ার রাজনৈতিক নেতাদের এক সমাবেশে বলেন, “আমরা আমাদের মাতৃভূমিতে আবারও যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে। তিনি দাবি করেছেন তালেবানরা ইতিমধ্যেই ওয়াজিরিস্তানে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রত্যাবর্তন করেছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান এবং উত্তর ওয়াজিরিস্তান দুই জেলায় বিভক্ত। পশতেন বলেছেন যে, ২০১৪ সালে আফগানিস্তানে চলে যাওয়ার আগে টিটিপি এবং অন্যান্য তালেবান দলগুলির সাথে বেশ কয়েকটি সরকারী চুক্তি হলেও কোনটাতেই শান্তির দিক উঠে আসেনি, সরকারের সাথে জঙ্গিগোষ্ঠীর সব আলোচনাই অস্পষ্ট।
তিনি বলেন, আমরা আলোচনার বিরোধী নই, কিন্তু আলোচনার নামে নাটকের বিরোধিতা করি। জঙ্গিদের প্রতিহত করা ছাড়া আমাদের পিটিএম বিভিন্ন তালেবান গোষ্ঠীকে সমর্থন করার জন্য শক্তিশালী সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের ক্রোধ অর্জন করেছে।পিটিএম পশতুন বেসামরিক নাগরিকদের নির্যাতনের জন্য তালেবান এবং সামরিক বাহিনীকে দায়ী করেছে। আনুমানিক ৮০,০০০ বেসামরিক নাগরিকদের অধিকাংশই নিহত এবং ২০০৩ সালে পাকিস্তানি তালেবানের উত্থানের পর থেকে ৬মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে আরএফই/আরএল রিপোর্ট করেছ৷
প্রাক্তন আইন প্রণেতা আফরাসিয়াব খট্টক বলেছেন, সমগ্র আলোচনা প্রক্রিয়ার লক্ষ্য তালেবানাইজেশনের বিরুদ্ধে পশতুন রাজনৈতিক প্রতিরোধকে “মোকাবিলা” করা।
আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি (আএসপি), একটি মধ্যপন্থী জাতিগত গোষ্ঠী, খাইবার পাখতুন খোয়ায় ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রাদেশিক সরকার গঠন করার পর সেকুলার পশতুনরা তেহরিকি তালেবানের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে। ইসলামি জঙ্গিদের হামলায় ১,০০০ এরও বেশি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সদস্য নিহত হয়। টিটিপির হামলার কারণে এএনপি ২০১৩ সালের নির্বাচনে আংশিকভাবে হেরে যায়। খট্টক ২০০৮ সালে জঙ্গিদের একটি আত্মঘাতী হামলায় বেঁচে গিয়েছিলেন।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ আয়েশা সিদ্দিকা একমত হয়ে বলেন, টিটিপির প্রত্যাবর্তন থেকে সামরিক বাহিনী অভ্যন্তরীণ আঘাত নিয়ে চিন্তিত নয় বলে মনে হচ্ছে।
“