পূজোর হাওয়ায় ভাসছে সিলেট
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ আর মাত্র কয়েকদিন। শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা। এটি সাধারণতঃ সার্বজনীনভাবে পালিত হয়ে থাকে বলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালিদের আগ্রহ থাকে বেশী। উৎসবকে কেন্দ্র করে সিলেট নগরির বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণী বিতানে ভীড় বাড়ছে ক্রেতাদের। দোকানে দোকানে পছন্দের পোশাক দেখার পাশাপাশি কেনাকাটাও চলছে দেদারসে। হাতে একাধিক শপিং ব্যাগ নিয়ে এ মার্কেট থেকে ও মার্কেট ছুটে বেড়াচ্ছেন তারা দলবেঁধে, স্ব-পরিবারে। আশ্বিনের শুরুতে এমন সোৎসাহ কেনাকাটা জানান দেয় শারদীয় দুর্গোৎসব এলো বলে। বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের আনন্দটা বেশী থাকে এ উৎসবে।বাঙালি মুসলমানরা যেমন দু’ ঈদে, বিশেষ করে ঈদ-উল ফিতরে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ঠিক তেমনি বাঙালী সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গাপূজায়। ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে সামর্থ্য অনুযায়ী প্রায় সবাই কমবেশি কেনাকাটা করেন। মূলতঃ পোশাক কেনার ধুম পড়ে এ সময়টাতে। সবার মনোভাব এমন থাকে যে, নতুন জামা-জুতো ছাড়া ঈদ-পূজো জমেই না!
এবার দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে ১ অক্টোবর। হাতে সময় আছে মাত্র কয়েকদিন। দেবি দুর্গা এবার স্বর্গালোক থেকে অফুরন্ত ভান্ডার নিয়ে গজে করে পিত্রালয়ে আসছেন। যাবেন ফল-ফসলের সমাহার দিয়ে নৌকায়। সনাতন পন্ডিতরাই এমন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এরমধ্যে কেনাকাটার পাশাপাশি পূজোমন্ডপের কাজও শুরু হয়ে গেছে। সার্বজনীন এবং পারিবারিক পূজা মন্ডপগুলোর পরিচালনা কমিটি, স্বেচ্চাসেবকদের তালিকা প্রণয়ন ও দায়-দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।কেনাকাটার ব্যাপারে লাভলী দাশ জানান, পূজোয়তো কেনাকাটা হয়ই। এবারও তিনি প্রথম পর্যায়ে কিছু কেনাকাটা শেষ করে রেখেছেন। আরও বাকি আছে। ২/১দিনের মধ্যে তাও সেরে ফেলবেন। তিনি জানান, প্রায় সব পরিবারেই কেনাকাটা অনেকটা শেষ পর্যায়ে।এদিকে, শুধু সিলেট মহানগর নয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও পূজামন্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সবগুলো মন্ডপ প্রস্তুত হয়ে যাবে। জানা গেছে, এবার সিলেট জেলা ও মহানগর জুড়ে মোট ৬১০টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রঞ্জন ঘোষ বলেন, ৬১০টি মন্ডপের মধ্যে সিলেট মহানগরে রয়েছে ১৫৩টি। আর জেলার ১৩টি উপজেলা ও পৌরসভায় মন্ডপের সংখ্যা মোট ৪৫৭টি।নগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত জানান, ইতোমধ্যে পূজা উদযাপন পরিষদের অভ্যন্তরীণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের প্রস্তুতিও সম্পন্ন। এরপর সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্ঠৈক অনুষ্ঠিত হবে। তবে দিন-তারিখ এখনো নির্ধারণ হয়নি। এদিকে জানা গেছে, সিলেটের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা শিল্পীরা এখন প্রচন্ড ব্যস্ত সময় পার করছেন। অর্ডার অনুযায়ী প্রতিমা সরবরাহে তারা নিজেরা যেমন কঠোর পরিশ্রম করছেন, তেমনি অনেক প্রতিমা কারিগর বিভিন্ন উপজেলা সদর থেকে সহকারী সংগ্রহ করে দিনরাত মুর্তি তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে অর্ডার নিশ্চিতকরণের জন্য বিভিন্ন উপজেলা বা অঞ্চলের গ্রামীণ প্রতিমা কারিগরদের তৈরী মূর্তি এনে তাঁর হালকা কাজ ও রঙের প্রলেপ অথবা তুলির আঁচড় দিয়ে গ্রাহককে প্রতিমা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এমনিভাবেই এগিয়ে আসছে দুর্গাপূজার মহাক্ষণ। প্রত্যাশীরা অপেক্ষায় আছেন কখন ঢাকে পড়ে ঢাকির কাটি।