প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন মাইশা
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডনঃ বিশ্ব শিক্ষার সূতিকাগার যুক্তরাজ্যের মিডল সেক্স ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন খুলনার অহংকার মাইশা রহমান শেখ। তার বিষয় ছিল মনোবিজ্ঞান।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ইতালির বোলজানো শহরে ২০০১ সালে জন্মগ্রহণ করা মাইশার শৈশব ও কৈশোরের অনেকটা সময় কেটেছে আল্পস এর পাদদেশে গড়ে ওঠা দৃষ্টি নন্দিত পাহাড়ে ঘেরা এই শহরে।পরিবারের সাথে ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যে আসেন মাইশা। ইংরেজি ভাষায় ক্লাস সেভেনে পূর্ব লন্ডনের ফরেস্ট একাডেমিতে শিক্ষা জীবন শুরু করেন তিনি।কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাভাষার গুনে এক বছর পরেই তিনি ভর্তির সুযোগ পান লন্ডনের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ কিং সলেমান হাই স্কুলে।এখান থেকেই কৃতিত্বের সাথে সিক্সটফর্ম শেষ করে ভর্তি হন মিডল সেক্স ইউনিভার্সিটিতে।
প্রবাসী সাংবাদিক শেখ মহিতুর রহমান বাবলু ও আইনজীবী ইফফাত আরার প্রথম সন্তান মাইশা।লোভনীয় অনেক বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েও তিনি মনোবিজ্ঞান নিয়ে কেন পড়লেন ? এক্ষেত্রে বাবামায়ের সমর্থন ছিল কিনা ? বর্তমান যুগে মনোবিজ্ঞানের গুরুত্ব কতটুকু ? সাধারণ মানুষ এটাকে কিভাবে দেখে এমন নানা প্রশ্নের জবাবে মাইশা টিভি নাইনটিন কে বলেন।প্রতিটি মানুষের জীবন এক একটা বই।মনোবিজ্ঞান জীবনের এই বই পড়তে শেখায় ।এটা একটা প্রাক্টিক্যাল বিষয়। এখানে অর্জিত অনেক নতুন বিষয় বাস্তব জীবনে কাজে লাগে ।ব্যক্তি জীবন এবং কর্মস্থল থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সমাজ জীবন সর্বক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের নানা তত্ত্ব ও তথ্য জানা ও এর সাথে সম্পর্কিত সমস্যা থাকলে প্রয়জনীয় চিকিৎসা দেয়ার জন্য আমার মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়া।
না আমার বাবা মা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কক্ষনো টু শব্দটি করেননি।উৎসাহ দিয়েছেন।এটা আমার সফলতার একটি বড় হাতিয়ার।আমি তাদের কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ।
মনোবিজ্ঞানের জন্ম মাত্র একশত বছরের কিছু বেশি সময় আগে। এটার ইংরেজি psychology। গ্রিক শব্দ psyche এবং logos থেকে psychology শব্দটির সৃষ্টি । psyche অর্থ আত্মা এবং logos শব্দের অর্থ জ্ঞান। মনোবিজ্ঞান এমন একটি বিজ্ঞান যা মানুষের আচরণ এবং মানসিক প্রক্রিয়া সম্বন্ধে বুজতে সাহায্য করে।বিজ্ঞানের জয়যাত্রার সঙ্গে সঙ্গে মনোবিজ্ঞানের জয়যাত্রা এগিয়েছে বেশ । উন্মোচিত হয়েছে এর নানা দিক—প্রসারিত হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্র। কিন্তু এই উন্নত যুগে এসেও মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে অনেকেরই ধারণা সঠিক নয় ।এর পিছনে এ বিষয়ে উপযুক্ত শিক্ষা ও ধারণার অভাব দায়ী বললেন মাইশা।
মাইশা বলেন মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্র আজ সুদূর প্রসারি । গর্ভবতী মায়ের মানসিক ও শারীরিক পরিচর্যা, শিশুর যথোপযুক্ত সমাজীকরণ, সমস্যা ও হতাশায় জর্জরিত লোককে দিক নির্দেশনা প্রদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যকর শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রয়োগ, কলকারখানায় উপযুক্ত লোক বাছাইকরণ, শ্রমিক অসন্তোষ দূরীকরণ, অপরাধ প্রবণতার কারণ নির্ধারণ ও তার প্রতিকারের পথ নির্দেশ করা, এন্টিসোশল বিহেভিয়ার নিরুপণ ও তার প্রতিকার প্রভৃতি ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞান এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা দূরীকরণ, বিষণ্ন্নতায় আচ্ছন্ন ব্যক্তিকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা, আত্মহত্যার প্রবণতা কমিয়ে আনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে একজন মনোবিজ্ঞানীর ভূমিকা অনেক।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে ফরেনসিক ও ক্রিমিনোলজি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল মাইশার ।তিনি ভাবতেন মানুষ কেন অপরাধ করে এ নিয়ে গবেষণা করবেন।অবশেষে নানা প্রতিকূল পরিবেশের কথা চিন্তা করে বর্তমানে তিনি তার ভাবনার আকাশ পরিবর্তন করেছেন।এখন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে মাস্টার্স . এম.ফিল. ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে মনোবিজ্ঞানী হতে চান মাইশা ।মানুষের দুঃখের দিনে তার পাশে থাকার নামই মানবতা । সুতরাং মানবিক বিবেচনায়, মনের যত্ন ,মনের স্বাস্থ্য ও সমাজে মানসিক রোগীদের পাশে থেকে চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের নতুন জীবন ফিরিয়ে দেবার লক্ষে আর্তমানবতার সেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে যেতে চান এই মেধাবী ক্ষুদে মনোবিজ্ঞানী ।